‘মা, ওরা খুব খারাপ মানুষ। আমাদের ২৩ জনকে বন্দি করে রেখেছে। আমার একটি মোবাইল নিয়ে গেছে। আরেকটি মোবাইল লুকিয়ে রেখে গোপনে তোমাদের ফোন দিয়েছি। আমরা বন্দি। বেঁচে থাকলে দেখা হবে, আর কথা নাও হতে পারে। আমাদের জন্য দোয়া কইরো মা।’
রাত ১১টার দিকে জিম্মি অবস্থায় থেকে মা নার্গিস খাতুনের মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে এসব কথা বলেছেন ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাজমুল হক (২৩)। তিনি সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের মুকবেলাইয়ের চর নুরনগর গ্রামের আবু সামা শেখের ছেলে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কেএসআরএম কোম্পানির জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে নাবিক হিসেবে যোগ দেন। মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে সোমালিয়ার জলদস্যুরা ভারত মহাসাগরে জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং নাজমুলসহ ২৩ বাংলাদেশিকে জিম্মি করে ফেলে।
নুরনগর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, নাজমুলের বাবা কৃষক। ভাইবোন ও বাবা-মাকে নিয়ে চার জনের সংসার। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর জাহাজে চাকরি নেন। এখনও বিয়ে করেননি। তার আয়েই চলছিল সংসার। স্বজনদের আহাজারি শুনে তাদের বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন প্রতিবেশীরা।
স্বজনরা জানান, রাত ১১টার দিকে নাজমুলের সঙ্গে মোবাইলে শেষবার কথা হয় বাবা-মায়ের। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিক-ক্রুকে জলদস্যুরা সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় কৌশলে একটি মোবাইল লুকিয়ে রাখেন নাজমুল।
সেটি থেকে কল দিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেন এবং আতঙ্কের কথা জানিয়ে দোয়া চান। ছেলের বিপদের কথা শুনে অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা।
নাজমুল হকের বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন প্রতিবেশীরা
মা নার্গিস খাতুন বলেন, রাত ১১টার দিকে নাজমুল কল দিয়ে বলেছিল, মা আমাদের ২৩ জনকে জিম্মি করেছে দস্যুরা। ওরা খুব খারাপ মানুষ। আমার একটি মোবাইল নিয়ে গেছে। আমাদের একটি কক্ষে বন্দি করে রেখেছে।
বেঁচে থাকলে দেখা হবে। আর কথা নাও হতে পারে। আমাদের জন্য দোয়া কইরো। এই বলে ফোন কেটে দেয়। এরপর নানাভাবে চেষ্টা করেও ছেলের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারিনি।’
নাজমুলসহ সবাইকে জীবিত ফিরিয়ে আনার অনুরোধ জানাচ্ছি উল্লেখ করে নার্গিস খাতুন বলেন, ‘ছেলেকে জলদস্যুরা জিম্মি করেছে শুনে অসুস্থ হয়ে পড়েছে তার বাবা।
তাকে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমার ছেলেসহ জিম্মি সবাইকে যেন নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হয়।’
নাবিক নাজমুল হকের চাচা ফজলুল হক বলেন, ‘নাজমুল জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর শুনে তার বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসা দেওয়ার পর সুস্থ হলে সন্ধ্যায় বাড়িতে নিয়ে আসি। এখন মোটামুটি সুস্থ আছেন।’
এর আগে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার দিকে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল।
জলদস্যুদের কবলে পড়া চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের জাহাজটি পরিচালনা করছে গ্রুপটির সহযোগী সংস্থা এস আর শিপিং লিমিটেড। জাহাজে ২৩ বাংলাদেশি আছেন। জিম্মি হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন তাদের স্বজনরা।