‘মা জলদস্যুরা আমাদের আটক করেছে। তোমার সাথে এটাই হয়তো আমার শেষ কথা। এর পরে আর কথা নাও হতে পারে। আমার ফোনে এমবি থাকবে না। দোয়া করো-যেনো তোমার বুকে ফিরে আসতে পারি। আমার জন্য চিন্তা না করে ঈদে তোমাদের জন্য শপিং করে নিও।’
এই কথাগুলোই শেষ কথা ছিল সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে আটক জাহাজে জিম্মি হওয়া নাটোরের জয় মাহমুদের। এরপর আর জয় মাহমুদের সাথে পরিবারের যোগাযোগ হয়নি। ভারত মহাসাগরে ২৩ জন নাবিক ও ক্রুসহ বাংলাদেশি মালিকানাধীন পণ্যবাহী এমভি আব্দুল্লাহ নামের যে জাহাজটি সোমালিয়ার জলদস্যুরা জিম্মি করেছে, সেই জাহাজটিতে অর্ডিনারি সি-ম্যান সাধারণ নাবিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন জয় মাহমুদ। তিনি নাটোর জেলার বাগাতিপাড়ার সালাইনগর এলাকার জিয়াউর রহমানের ছেলে।
এদিকে জলদস্যুদের হাতে সন্তান জিম্মি হওয়ায় কান্নায় বুক ভাসাচ্ছেন মা। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্বজনরাও। গ্রামের বাড়িতে মানুষজন ভিড় জমাচ্ছেন। আহাজারিতে ভাড়ি হয়ে উঠেছে পরিবেশ।
জয় মাহমুদের মা আরিফা বেগম জানান, জলদস্যুদের হাতে আটক হওয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে ছেলে জয় মাহমুদ শেষ কথা বলেছেন। এরপর আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ রয়েছে। ইন্টারনেটেও পাওয়া যাচ্ছে না। জিম্মি কবল থেকে ছেলেসহ জাহাজের সবাইকে উদ্ধারের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেন তিনি।
জিম্মি জয় মাহমুদের পিতা জিয়উর রহমান জানান, মঙ্গলবার দুপুরে বাড়িতে ফিরে ছেলের জিম্মিদশার কথা জানতে পেরেছেন তিনি। ছেলের প্রাণ শংশয়ের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সোমালিয়ান জলদস্যুরা অস্ত্রধারী। দাবি না মানলে জিম্মিদের প্রাণহানি ঘটাতে পারেন।
জয় মাহমুদের ভাই মো. মারুফ আলী ইত্তেফাককে জানান, মঙ্গলবার দুপুরেই জয়ের সাথে তার শেষ কথা। অতঙ্কিত কণ্ঠে জয় বলছিলেন- ‘ভাই আমাদের জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। আমার সাথে তোমাদের আর কথা নাও হতে পারে। আমার ফোন জলদস্যুরা নিয়ে নিতে পারে।’এরপরই ফোন কেটে দেন জয়। ফোনে না পাওয়ায় ক্ষুদে বার্তায় ভাই জয়ের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন তিনি। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ক্ষুদে বার্তায় জয় জানিয়েছেন, ফোন নিয়ে নিয়েছে, আর কথা হবে না।
বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহায়মেনা শারমিন জানান, উপজেলা প্রশাসন পক্ষ থেকে জিম্মি জয় মাহমুদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো হয়েছে। সরকারিভাবে সহযোগিতা দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন কাজ করছে।