
এমপিওভুক্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবি
দেশের এমপিওভুক্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি (বাকশিস) ও বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদ (বিপিসি)।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে সংগঠনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় শিক্ষক নেতারা এই দাবি তুলে ধরেন।
শিক্ষকেরা বলেন, শিক্ষকদের মধ্যে থেকে সব ধরণের বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি বৈষম্য দূর করতে হবে।
তাছাড়া সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে দেশের সব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় করণের কোনো বিকল্প নেই।
"শিক্ষা জাতীয়করণ ছিল বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন" -------------------------------------------------------------
জাতি গঠন ও উন্নয়নের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো শিক্ষা।আর শিক্ষকই হলো শিক্ষা ব্যবস্হার মূল চালিকা শক্তি। আমরা জানি, যে জাতি যত শিক্ষিত যুগে যুগে সে জাতি সর্ব দিক থেকে তত উন্নত।আর এই উপলব্ধি থেকেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ বিদ্ধস্ত, অর্থসংকটাপন্ন বাংলাদেশে প্রথমে শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং অর্থনৈতিকভাবে পর্যূদস্ত মেরুদন্ডহীন বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে আত্নমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার মানসে ১৯৭২ইং সালে একসাথে প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ ঘোষনা করেন। তিঁনি উপলব্ধি করেছিলেন শিক্ষকদের অর্থসংকটে রেখে শিক্ষা সমস্যার সমাধান অসম্ভব।
"সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান" শিরোনামে ১৪ খন্ডের সংকলনের প্রথম খন্ডে (১৯৪৮থেকে ১৯৫০) বঙ্গবন্ধুর এমন বক্তব্য উঠে আসে। ঐ প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১ ডিসেম্বর ছাত্র -জনতার উদ্দেশ্যে তিঁনি আরও বলেন --"শিক্ষাদীক্ষাই হলো মানব সভ্যতার মাপকাঠি, অথচ আমাদের দেশের অগনিত জনসাধারনকে অশিক্ষার অন্ধকারে ডুবিয়ে রেখে কোন মুখে আমরা বিশ্ব দরবারে নিজ দিগকে সভ্য জাতি বলিয়া গৌরব করিব?শিক্ষকদের বেতন না বাড়ালে শিক্ষা সমস্যার সমাধান অসম্ভব, শিক্ষা পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন দরকার।"
সময়ের পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাষ্ট্র ক্ষমতার মধ্যমনি। সারা বাংলাদেশের পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক পরিবার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন সকল স্তরের শিক্ষা ব্যবস্হা জাতীয়করণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে ঘোষিত হওয়ার এখনই মহেন্দ্রক্ষণ।
শিক্ষা জাতীয়করণ এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথাঃ
----------------------------------------------------------------
১৯৭২সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলন করে প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেছিলেন,২০১৩সালে রেজিঃকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ইস্পাত কঠিন ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে জাতীয়করণ করলেন।
এমপিওভুুক্ত শিক্ষকরা চরম বৈষম্যরে শিকার হয়েও অধিকার আদায়ের আন্দোলনে আমরা কি প্রাথমিকের ন্যায় আন্দোলনকে যৌক্তিক জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছি?
আমরা কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করলে একদিকে শিক্ষায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে,পদ্মা সেতুর ন্যায় সরকার নন্দিত হবেন বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে, অন্যদিকে সরকারের উল্লেখযোগ্য কোন অর্থ লাগবে না?
এই ব্যর্থতার দায় -দায়িত্ব এমপিওভুক্ত শিক্ষক সংগঠন এবং শিক্ষক নেতারা কি অস্বীকার করতে পারবেন? বাংলাদেশে কোনো পেশাজীবীদের এত সংগঠন,এত বিভাজন আছে কি?
নিকট ভবিষ্যতে মহান জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষকের স্বার্থে প্রাথমিক শিক্ষক এবং শিক্ষক সংগঠনের ন্যায় ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তুলে ঐতিহাসিক আন্দোলন করলে আন্দোলনও সফল হবে,শিক্ষাও জাতীয়করণ হবে।
মোঃনজরুল ইসলাম,
যুগ্মমহাসচিব, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিস), কেন্দ্রীয় কমিটি
ও শিক্ষা জাতীয়করণ লিঁয়াজো ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য।