চিকিৎসার জন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার সময় ট্রাকচাপায় একই পরিবারের চারজনসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কের পুঠিয়ার বেলপুকুর এলাকায় ওই দুর্ঘটনাটি ঘটে। রাতেই নিহতদের লাশ গ্রামের বাড়িতে আনার কথা রয়েছে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের কান্তপুর গ্রামের ইনসাব আলী ইউসুফ (৭৫), তাঁর ছেলে লাবু (৩৫), মেয়ে পারভিন বেগম (৩৫) নাতনি শারমিন আক্তার (১৭) ও একই ইউনিয়নের মুকিমপুর গ্রামের মো. তোফাজ্জলের ছেলে সিএনজি চালক মোখলেসুর রহমান (৪০)। এরমধ্যে বৃদ্ধ ইনসাবের নাতনি শারমিন আক্তারের বাড়ি পার্শবর্তী বাকিদেবপুর গ্রামে। তিনি রাজশাহীর শাহমখদুম কলেজের স্নাতকের শিক্ষার্থী ছিলেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চিকিৎসার জন্য একই পরিবারের চারজনকে নিয়ে সিএনজিটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছিল। এসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা নাটোরগামী টিসিবির পণ্যবাহী একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বেলপুকুরে এসে সিএনজিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই সিএনজির পাঁচজন মারা যান।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এম এ জলিল জানান, হাসপাতালে যে পাঁচজনকে আনা হয়েছিল তাঁদের সবাই হাসপাতালে আসার আগেই মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে দুজন নারীও আছেন।
এদিকে মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই স্বজনদের আহাজারিতে গুরুদাসপুরের মকিমপুর গ্রামের বাতাস ভারি হয়ে উঠে। নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হান্নান জানান, নিহত ইনসাব আলীসহ তার ছয় ছেলে মেয়ের মধ্যে এক ছেলে এক মেয়ে ও নাতনি শারমিন দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। একইসাথে মারা গেছেন সিএনজি চালকও। বর্তমানে ওই পরিবারে ইনসাফের ছেলেমেয়েদের মধ্যে আইয়ুব, সাইদ, শাহানারা ও আন্না বেঁচে আছেন।
নিহত লাবুর স্ত্রী খালেদা বেগম নয় বছরের ছেলে নাছির ও দুই বছরের মেয়ে মাওয়াকে বুকে জড়িয়ে কান্না করছেন। মাঝে মাঝেই শোকে মুর্ছা যাচ্ছেন। বিলাপ করতে করতে নিহত লাবুর স্ত্রী খালেদা বেগম বলেন, তার শ্বশুর দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সার আক্রান্ত ছিলেন। কিছুদিন পর পরই চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হতো।
শনিবার কেমো থেরাপি দেওয়ার জন্য শ্বশুরকে নিয়ে তার স্বামী লাবু, দেবরের মেয়ে শারমিন এবং ননদ পারভিন সিএনজিজোগে রাজশাহী মেডিকেলের উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়েন শনিবার দুপুর ১২ টার দিকে। শ্বশুড়ের সাথে তিনি স্বামীকে হারিয়ে দুই সন্তান নিয়ে অথৈ সাগরে পড়লেন।
নিহত ইনসাবের ছেলে আবু সাইদ বলেন, পিতার চিকিৎসার জন্য ভাই-বোনের সাথে তার মেয়ে শারমিনকেও পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তারা আর জীবিত ফিরলেন না। পরিবারের চার সদস্যকে হারিয়ে এখন তারা নিরব নির্বিকার।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, পুঠিয়ায় ঘটা ওই দূর্ঘটনায় নিহত পাঁচজনই গুরুদাসপুরের বাসিন্দা। আইনি প্রক্রিয়া মেনে মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জামিলুর রহমান জানান, দুর্ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছে পুলিশ। নিহতদের মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।