মুখোশধারীরা একের পর এক হামলা করেই যাচ্ছেন। এসব হামলার শিকার হচ্ছেন জামায়াত-বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। গত একমাসে নাটোর জেলাজুড়ে অন্তত দশটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বিএনপি-জামায়াতের ১০ নেতাকর্মী, সমর্থকদের কুপিয়ে, পিটিয়ে, গুলি করে এবং হাতপায়ের রগ কেটে আহত করা হয়েছে।
আহতদের মধ্যে বিএনপির এক নেতার শরীরে তিনটি গুলি, দুজনের হাত পায়ের রগ কেটে দেওয়া এবং বাকি সাতজনের হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েছে মুখোশধারীরা। এখানো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন পাঁচজন। অন্যরা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে আহতদের পক্ষ থেকে দশটি হামলার ঘটনায় থানায় পাঁচটি মামলা দায়ের হলেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। ফলে কারা এই হামলার সাথে সম্পৃক্ত তা এখানো স্পষ্ট নয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে- গত ১৬ অক্টোবর থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত জেলাজুড়ে যে দশটি হামলার ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে নলডাঙ্গায় ছয়টি, নাটোর সদর উপজেলায় দুটি, লালপুরে একটি ও সিংড়া উপজেলায় একটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। মুখোশধারীদের এসব হামলায় বিএনপি ও যুবদলের তিন নেতা, ছয়জন জামায়াতের এবং একজন ইসলামী আন্দোলনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, মুখোশধারীদের এসব হামলার মধ্যে শুধু নাটোর সদরের একটি হামলা ছাড়া অন্য নয়টি হামলার ঘটনা ঘটেছে রাতে।
যেভাবে হামলা চালায় মুখোশধারীরা
মুখোশ এবং হেলমেট পড়ে সাদা রঙের মাইক্রোবাস ব্যবহার করা হয়। মাইক্রোবাসে তুলেই অপহৃত ব্যক্তির চোখমুখে নতুন গামছা পেঁচিয়ে নেওয়া হয় নির্যনে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রাখায় সড়কে। এসব হামলার সবকটিতেই মুখোশ এবং হেলমেট পরে হামলা চালানো হয়েছে। এরমধ্যে পাঁচটি হামলায় সাদা রঙের মাইক্রোবাস ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীর স্বজনেরা।
পুলিশ জানিয়েছে, নাটোর সদর, নলডাঙ্গা, লালপুর ও সিংড়া থানা এলাকায় ঘটা এসব ঘটনার তদন্ত চলছে। হামলাকারী ও আসামিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ।
আহত ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, রাতের আধাঁরে পথ রোধ করে হামলা চালিয়েছে মুখোশধারীরা। আবার সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে হাতপা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। কেটে দেওয়া হয়েছে পায়ের রগ। চালানো হয়েছে গুলি। এছাড়া নয়জন নেতাকর্মীর ওপর পৃথকভাবে নয়টি হামলার সময় লোহার রড, চায়নিজ কুড়াল ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় হামলাকারীরা মুখোশধারী ছিলো।
একমাসে দশ হামলা
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্র বলছে, গত ১৬ অক্টোবর রাত আটটার দিকে নলডাঙ্গায় প্রথম হামলার ঘটনাটি ঘটে। নলডাঙ্গা জামায়াতে ইসলামীর পৃষ্ঠপোষক ও অর্থ জোগানদাতা নাসির উদ্দিন সরকার (৬৫) এই হামলার শিকার হন। তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে তিনি বাঁশিলায় নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন। তার মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিলেন জামায়াতের কর্মী ইসলামি বক্তা আবু নওশাদ নোমানী (৪২)। তাঁরা সোনাপাতিল তালতলায় পৌঁছালে মুখোশধারী ছয়-সাতজন মোটরসাইকেলটির পথ রোধ করে রড দিয়ে দুজনকে বেধড়ক পিটিয়ে অচেতন করে ফেলে রেখে যান।
২৫ অক্টোবর রাত পৌনে নয়টার দিকে দ্বিতীয় হামলার ঘটনায় জামায়াতের কর্মী পল্লিচিকিৎসক আলাউদ্দিনকে (৬০) নলডাঙ্গার একটি সড়কে পিটিয়ে জখম করা হয়। নলডাঙ্গা উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ফজলুর রহমানের (৬৫) ওপর হামলা হয় ২৬ অক্টোবর রাতে। তাঁর হাতপায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়। বিএনপির অবরোধ চলাকালে ২৯ অক্টোবর সকালে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম বাড়ির সামনে গুলিবিদ্ধ হন। মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা তার শরীরে তিনটি গুলি করেন। সাইফুল ইসলাম এখনো রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
৩০ অক্টোবর রাতে বাড়ি থেকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে নলডাঙ্গার খাজুরা ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মোশারফ হোসেনকে (৭৪) হাত-পা ভেঙে সড়কের পাশে ফেলে দেওয়া হয়। ৩ নভেম্বর রাতে লালপুর উপজেলার বিলমাড়িয়া এলাকা থেকে ওই ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ সরকারকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে হাত-পায়ের রগ কেটে সড়কে ফেলে রাখা হয়।
১২ নভেম্বর নলডাঙ্গায় এক যুবদল নেতাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে হাতুড়িপেটা করে হাত-পা ভেঙে দেয় দুর্বৃত্তরা। সবশেষ ১৭ নভেম্বর সকালে সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে যখম করে ফেলে দেওয়া হয়। তিনি ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত।
হামলার শিকার পাঁচজন এখনো হাসপাতালে
আহত নয়জনের মধ্যে সাইফুল ইসলাম, মাসুদ সরকার, আবদুর রাজ্জাক ও সজীব হোসেনসহ চারজন এখনো রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছেন ফজলুর রহমান।
আহত জামায়াত নেতা পল্লিচিকিৎসক আলাউদ্দিন বলেন, তাঁর সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। জামায়াত করেন বলেই রাতের আঁধারে হামলা করে ভয় দেখানো হয়েছে।
নাটোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজ বলেন, আন্দোলন সংগ্রাম থেকে দুরে রাখতেই তাদের নেতাকর্মীদের ওপর এভাবে হামলা চালানো হচ্ছে। অথচ পুলিশ এখন পর্যন্ত কা কে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
নাটোরের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, এসব হামলায় ঘটনায় পুলিশ তদন্ত করছে।