ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ভদ্রেশরী মালিপাড়া দূর্গা মন্দির কমিটি।
ববার ওই কমিটির সভাপতি দিনেশ মালাকার ও সম্পাদক নিরেন চন্দ্র শীল এ অভিযোগ করেন।
জানা গেছে, গত শনিবার সন্ধায় রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমান সর্ঙ্গীয় পূলিশ ফোর্স নিয়ে ভদ্রেশরী মন্দিরে যান।
সেখানে গিয়ে মন্দির কমিটির লোকজনদের সাইডে ডেকে নিয়ে বলেন, তোমরা তোমাদের সাবেক কমিটির সভাপতি পবন শীলকে কেন ডাকোনি,প্রতি উত্তরে দূর্গা মন্দির কমিটির সভাপতি,সম্পাদক বলেন, সে মন্দিরের দায়িত্ব পালনকালে মন্দিরের ৪ শতক জমি চালাকি করে নিজের নামে বন্দোবস্ত করে নিয়েছেন।
——ছবি মুক্ত প্রভাত
গত বছর মন্দিরের জমিতে কলাগাছ লাগিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করেছেন,প্রতিমা ভাঙচুর করেছে।
সে-সময়কার ইউএনও ও এসিল্যান্ড মিলে বিষয়টি সমাধান দেওয়ার পর। সুন্দর করে পূজা পালন করার পরেই। সে বর্তমান পূজা কমিটির বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা দিয়ে লোকজনকে হয়রানী করেছে।
জেল খাটিয়েছে। তাই তাকে ডাকিনি। তবে সে যদি নিজ উদ্যোগে পূজা পালনে মন্দিরে আসে তাকে আমরা কোন বাধা দিবো না। এ কথা শোনার পর ইউএনও বলে উঠেন, তোমরা অন্যের জমিতে অবৈধ পূজা করো,জোর বিজোর কমিটি গঠন করেছো।
এখানে যদি হট্রগোল হয় তাহলে কমিটির অস্তিত্ব রাখবো না। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ্য করা হয় উপজেলা প্রশাসনের সবোর্চ্চ কর্মকর্তার এই ধরনের হমুকিতে পূজা উদযাপন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ভুগছে কমিটি।
এদিকে গতকাল রোববার ভদ্রেশরী মালিপাড়া মন্দিরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,ভদ্রেশরী মন্দিরের সামনের একটি কাঠের চৌকিতে প্রতিমা নির্মাণ কারিগর পরেশ মালাকার বসে রয়েছেন। এ প্রতিবেদককে দেখে তিনিসহ স্থানীয়রা মন্দিরের সামনে এগিয়ে আসেন।
মন্দিরের কাজ কতদুর প্রশ্নে কারিগর পরেশ মালাকারসহ কয়েকজন নারী বলে উঠেন, ইউএনও তাদের পূজাকে অবৈধ পূজা বলায় তারা পূজার কাযর্ক্রম বন্ধ করে রেখেছেন। পরেশ মালাকার বলেন, দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে এখানে প্রতিমা তৈরীর কাজ করছেন তিনি।
পূজা কমিটির ১৭ বছরের সাবেক সম্পাদক চৈতু বণিক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পূজা পালন করছি। শুনছি গতকাল ইউএনও এখানে এসে এই মন্দিরের পূজাকে অবৈধ পূজা বলেছে,যা দু:খজনক। গীতা রাণী,মহারাণী ও সমিতা রাণীসহ অন্তত দশজন নারী বলেন, দীর্ঘ দিনের পূজা মন্ডবকে অবৈধ বললেন ইউএনও।
‘অবৈধ পূজা যখন, ইউএনও বৈধ ঘোষনা করবে তখন আমরা পূজা পালন করবো। তারা আরো বলেন, ইউএনও’র কারণে এবার বুঝি আমাদের পূজা পালন করা হবে না। যদি পূজা পালন করতে না পারি তাহলে আমরা আন্দোলনে যাবো। বিচার চাইব। এ সময় উপস্থিত সকলেই ”বিচার চাই’ বিচার চাই” বলে স্লোগান দিয়ে উঠেন।’
ভদ্রেশরী মালিপাড়া দূর্গা মন্দিরের সাবেক সভাপতি পবন শীলের বক্তব্য নিতে তার বাড়ীতে গেলে তিনি বাড়ীতে ছিলেন না। পরিবারের অন্য সদসর্যা এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিরেন চন্দ্র শিল বলেন, উপজেলা পর্যায়ের সবোর্চ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা যদি নিরপেক্ষ অবস্থানে না থাকে এক ব্যক্তির কথা শূনে কমিটির লোকজনকে হুমকি দেয়। তাহলে কার সাহসে বা সহযোগিতায় সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব দূর্গা পূজা উদযাপন করবো।
তাই ইউএনও’র হুমকির কারণে পূজার কাযর্ক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পূজা কমিটির সভাপতি দীনেশ মালাকার বলেন, ইউএনও এ মন্দিরের পূজাকে অবৈধ বলায়।
কোন হট্রগোল হলে কমিটির অস্তিত্ব রাখবে না বলে হমুকি দেওয়ায় আমরা পূজা কমিটি প্রতিমা নির্মাণ কাযর্ক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। পূজা পালন হবে কি না তা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। তবে যদি পূজা পালন না হয় তাহলে এর দায় ইউএনওকে নিতে হবে।
ধর্মগড় ইউনিয়ন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি চন্দন অধিকারী বলেন, এই মন্দিরের জমিকে কেন্দ্র করে একটি মামলা চলমান রয়েছে।
সেই মামলাকে কেন্দ্র করে ইউএনও এই মন্দিরে এসে বলেছেন এটি অবৈধ মন্দির।দীর্ঘ দুই যুগের অধিক বয়সের মন্দিরকে ইউএনও অবৈধ মন্দির বলায় আপাতত পূজার প্রস্তুতি কাযর্ক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটির সঠিক সুরাহা না হলে আন্দোলনে যাওয়া হবে বলে তিনি হুশিয়ারী দেন।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাধন বসাক বলেন, ইউএনও মন্দিরকে অবৈধ বলতে পারে না।ওই মন্দির নিয়ে যদি কোন সমস্যা দেখা দেয়। তাহলে ইউএনও আমাদের বলবে,আমরা উপজেলা কমিটি বিষয়টি দেখবো।
জানতে চাইলে ইউএনও শাহরিয়ার রহমান গতকাল রোববার মুঠোফোনে জানান, মন্দিরের জমিটি খাস হলেও বন্দোবস্তের কারণে আপাতত ব্যক্তি মালিকানায় রয়েছে। তবে এ বন্দোবস্ত বাতিলের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এ নিয়ে গত পূজায় হট্রগোল হয়েছিল। এ কারণে মন্দির কমিটির লোকজনকে ডেকে বলেছি। কোন হট্রগোল যেন না হয়। তবে অবৈধ মন্দির বা জোর বিজোর কমিটি করা হয়েছে এ নিয়ে সেভাবে কথা বলা হয়নি।
ঠাকুরগাঁও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মামুন ভুঁইয়া বলেন, অভিযোগটি এখনো পাওয়া যায়নি। বিষয়টি জেনেছি। বিষয়টি সুরাহার জন্য ইউএনওকে বলা হয়েছে। তিনি দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করবেন।