
পরিত্যাক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান
ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মেরামত ও আসবাব পত্র ক্রয় বাবদ ৪ বছরে বরাদ্দ ১ কোটি ৬৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকার অধিকাংশই অপচয় হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জেলাশিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ ভবনটি ঝুকিপূর্ন ঘোষনাকরে আবার সংস্কার কাজেই বরাদ্দ অর্থ ব্যায় দেখাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের পুড়াতন ভবন সম্পূর্ন ঝুকিতে থাকায় মোট ৯টি ক্লাশরুম দ্রট্টু অন্যত্র সরিয়ে নিতে বলেছে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ। তাই প্রশ্ন উঠেছে বরাদ্দ টাকায় তাহলে কি কাজ হলো।
জেলা শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হয় ৭৮ লাখটাকা। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সংস্কার বাবদ বরাদ্দ আসে ১৪ লাখ ৪০ হাজারটাকা।
একই খাতে ২০২০-২১ অর্থ বছরে বরাদ্দের পরিমান ২২ লাখটাকা। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আরো ২০ লাখ টাকার টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান আছে।
এ ছারাও আসবাব পত্র ক্রয় বাবদ ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৩ লাখ টাকা, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়।
সব চেয়ে আশ্চর্য্যের বিষয় হলো ২০১৮ সনের আগে বরাদ্দের কোন তথ্য নেই এ দপ্তরে। এমনটাই জানান দপ্তরের উপ-সহকারি প্রকৌশলী তৈয়বুর রহমান।
বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. ফয়সাল রহমান জানান, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৭৮ লাখ টাকা ছাদ সংস্কার ও রুম মেরামত বাবদ দেখানো হয়েছে।
ছাদের সানসেট আগে বড় থাকায় ভিতরে পানি আসতনা। সংস্কারের নামে এখনতা ভেঙ্গে ফেলায় বর্ষার পানি বিদ্যালয় ভবনের ভিতরে চলে আসছে। এমনকি একাধিক স্থানে ছাদ চুইয়ে ভিতরে পানি পরছে।
তারমধ্যে শিক্ষক মিলনায়তনের রুমও আছে। এতে পুরোভবনটি নষ্ট হবার উপক্রম হয়ে পরেছে। ২০১৮ সনে বিদ্যালয়ের ছাদ সংস্কারের নামে পুরা নোরড দিয়েই ঢালাই দেয়া হচ্ছিল।
তৎকালিন জেলা প্রশাসক হামিদুল হক এ অভিযোগ পেয়ে ঘটনা স্থলে ছুটে এসে সত্যতা দেখতে পান। তখন তিনি পুরাতন রড সরিয়ে নতুন রড দিয়ে মেরামতের নির্দেশনা দেন।
পুরো ভবনটিঘুরে দেখাযায় একদিকে অধিকাংশ রুমে নাম মাত্র সংস্কারের বালু পলেস্তারা খসে যাচ্ছে। অন্য দিকে বর্ষার পানি ভবনের ভিতরে প্রবেশ করে ভবনটির ধারনক্ষমতা কমছে।
ফলে প্রায়ই লেস্তারা ও সুরকির গাথুনি খসে পরায় আতংক নিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ক্লাশ করতে হচ্ছে। অপর দিকে বিদ্যালয় ভবনের পিলারের পুরানো রড মরি চাধরে ক্ষয় হবার কারণে ধারণ ক্ষমতা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা জানায় আমরা আতংকে ক্লাশ করছি।
কারণ পলেস্তারা খসে পরছে প্রতিনিয়ত। টয় লেটের অবস্থা আরো খারাপ। দরজা নেই। পানির কল নষ্ট। বর্ষার পানি পরে সব সময়।
বিদ্যালয়ের সাবেক ভার প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুলতান আহমেদ জানান, আমি দায়িত্বে থাকার সময় ২০১৯ সনে বিদ্যালয় টির সংস্কারের নামে কাজের কাজ কিছুই না হবার কথা জেলা সমন্বয় মিটিংয়ে বলে ছিলাম। এতে তৎকালিন নির্বাহী প্রকৌশলী আমার উপর ক্ষিপ্ত হন।
বিদ্যালয়ের ভিতরে এলে বোঝা যায় কাজ নাকরে বরাদ্দ টাকা কিভাবে লোপাট হচ্ছে। যৎসামন্য এবং নিম্ন মানের কাজের বিষয়ে প্রকৌশল বিভাগ ও ঠিকাদার উভয় উভয়কে দোষারো পকরছে।
কোটি টাকার সংস্কার কাজ হলেও দৃশ্যমান নেই। বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক ফয়সাল হোসেন জানান, এখন তারা বলছে অন্য ভবনে ক্লাশ নেয়ার জন্য।
তাহলে মূল ভবনে এতো টাকার কি কাজ হয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ কাজের তদারকি করেনা। এমনকি আমাদেরও কোন কাজ বুঝিয়ে দেয়না। এরা এতটাই দুর্নীতিগ্রস্থ।
এ কার্যালয়ের এক উপ-সহকারি প্রকৌশলী বেশি দুর্নীতির সাথে জড়িত। পাশের ভবনের সংস্কারের জন্য ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। অথচ এটির বাথরুম ব্যবহারের অনুপযোগী।
বাথরুমের দরজা ভাঙ্গা, প্লাস্টার করা হলেও রং করা হয়নি। বৃষ্টি হলে ছাদের পানি গাড়িয়ে নিচতলা পর্যন্ত আসে। প্রধান শিক্ষক মো. ইউনুস জানান, স্কুল ভবনটির সংস্কার কাজ পাচ্ছে এক ব্যক্তি।
এটা কিকরে সম্ভব। তাই অনিয়ম বেশি হচ্ছে। আমাদের শুধ ুতাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই। পুরো ভনটি ঝুকিতে থাকলেও ৫টি রুমে ক্লাশ নেয়া হচ্ছেনা।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নতুন নির্বাহী প্রকৌশলী পরিদর্শনে এসে বরাদ্দের সাথে কাজের মিলনা পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন। এতো টাকার কাজ হলেও তিনি দৃশ্যমান দেখতে পাননি।
এ কাজের ঠিকাদর মো. হৃদয় জানান, আমি বিদ্যালয়টির দোতালার পশ্চিম পাশের ছাদ সহ অন্য সংস্কার কাজ করেছি। এতে কোন অনিয় মহয়নি। অন্য পাশের কাজের দায় দায়িত্ব আমার নয়।
তবে আমার কাজ এখনো চলমান। কিন্তু দরপত্রের বাইরে কিছু কাজ করানোর কারণে বিল নাপাওয়ায় চলমান কাজ বন্ধ রেখেছি। সমন্বয় না হওয়া পর্যন্ত কাজ শুরু করতে পারছিনা। ছাদের কাজ কখনো দৃশ্যমান হয়না।
ঝুকিপূর্ণ ভবনে প্রতি বছর এতো টাকার কাজ হলেও দৃম্যমান হচ্ছেনা কেন জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা জানান, আমিএখানে যোগদান করার পর বিদ্যালয় টিপরিদর্শন করেছি।
বিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছি। আমার নির্দেশনা ছিল যে অংশ টুকু ধরব সেটা দোতালা নিচ তলা সহ। এখন সেভাবেই হবে। কিছু মেরামত চলমান। বিদ্যালয়ে প্রবেশ পথে নতুন ৩ তলা ভবনটি ব্যবহার করা হচ্ছেনা। আমি পরামর্শ দিয়েছি এতো ঝুকির মধ্যে সেখানে কিছু ক্লাশরুম শিফট করতে।
আমার আগের কাজ সঠিক ভাবে হলোকিনা সেটা দেখার সুযোগ হয়নি। বিপদ যে কোন সময় হতে পারে। তাই অন্তত ৯টা ক্লাশ রুম শিফ টকরা যেতে পারে। ঠিকাদারের বাড়তি কাজ করার কথা ঠিকনা। যেটা হয়েছে সেটা আমরা সমন্বয় করব।