গোডাউনে মজুদকৃত সার- ছবি মুক্ত প্রভাত
বরাদ্দ থাকা স্বত্তেও দেশীয় জাতের সার বাঙলা ডিএপি ও পতেঙ্গা টিএসপি আমদানি করছেন না গুরুদাসপুরের বিসিআইসি এবং বিএডিসি ডিলাররা। কৃষি অফিসের সাথে যোগসাজস করে ডিলাররা আমদানি বন্ধ রেখেছেন। ফলে দেশে উৎপাদিত অধিক কার্যকরী এই সার না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন গুরুদাসপুরের কৃষকেরা।
ডিলারদের কাছে এই দুই জাতের সার না পাওয়ায় সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় উচ্চ মূল্যে সার কিনে ব্যবহার করতে হচ্ছে এই অঞ্চলের কৃষকদের। তবে দুই একজন খুচরা ডিলার বিশেষ ব্যবস্থায় স্বল্প পরিসরে আমদানি করছেন।
গোডাউনে মজুদকৃত সার- ছবি মুক্ত প্রভাত
খুচরা ডিলারদের ভাষ্যমতে— ইউরিয়া, পটাস, ড্যাপ, ডিএপি ও টিএসপি সার বিসিআইসি, বিএডিসি এবং খুচরা ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। এরমধ্যে সরকারি বরাদ্দ মতো দেশে উৎপাদিত বাঙলা ডিএপি ও পতেঙ্গা টিএসপি সার আমদানি করে কৃষকের কাছে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রির কথা। কিন্তু অন্যান্য সার আমদানি করা হলেও দীর্ঘদিন ধরে গুরুদাসপুরে বাঙলা ডিএপি ও পতেঙ্গা টিএসপি সার আমদানি করা হয়না। দেশে উৎপাদিত এই সারের পরিবর্তে মরক্ক এবং বুলগেরিয়া থেকে আমদানি করা ডিএপি ও টিএসপি সার বিক্রি করা হচ্ছে।
একজন কৃষিবিদ জানান, দেশের আবহাওয়ার তারতম্যের সাথে মিল রেখে ফসলের খেতের উপযোগী করে ডিএপি এবং টিএসপি সার দেশের অভ্যান্তরে উৎপাদন করা হয়। দেশীয় এই দুই জাতের সার দেশের ফসলের খেতের জন্যও অধিক কার্যকরি। খেতের উরবরতা বৃদ্ধি, ফসলের গুনগত মান বৃদ্ধির জন্য দেশীয় এই সার ব্যবহারে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিলশা গ্রামের কৃষক আব্দুল্লা, হাঁসমারির কৃষক আব্দুল আলিম, ধারাবারিষা এলাকার মঈনুল ইসলামসহ অন্তত পঞ্চাশজন কৃষক ইত্তেফাককে জানান, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে বাঙলা ডিএপি ও পতেঙ্গার টিএসপি সার তারা পান না। একারণে পৌর সদরে আসেন। সেখানেও দেশে উৎপাদিত এই দুই প্রকারের সার পাওয়া যায়না। দুই এক জনের কাছে থাকলেও ১হাজার ৩৫০ টাকা বস্তার পতেঙ্গা টিএসপি এবং ১হাজার ৫০টাকা বস্তার বাঙলা ডিএপি সার উচ্চ মূল্যে কিনছেন তারা।
তাদের মতে— বিদেশ থেকে আমদানি করা সারের তুলনায় দেশে উৎপাদিত সার অধিক কর্যকরী। একারণে এই সারের চাহিদাও বেশি। দেশীয় সার বাজারে না থাকলেও কৃষি অফিস কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
গোডাউনে মজুদকৃত সার- ছবি মুক্ত প্রভাত
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের থেকে ইস্যুকৃত ডিলারদের নামের বরাদ্দ তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে— চলতি বছরের আগস্টে গুরুদাসপুরের বিসিআইসি ও বিএডিসি ডিলারদের জন্য বাঙলা টিএসপি ১৭৩ মেট্রিক টন এবং ডিএপি ৩১৫ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ দেওয়া হয়। এছাড়া সেপ্টেম্বর মাসে দুই দফায় টিএসপি স্যার বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এরমধ্যে প্রথম দফায় শুধু মাত্র বিসিআইসির দশজন ডিলারকে ৬৮ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ দেওয়া হয়। এছাড়া দ্বিতীয় দফায় বিসিআইসি এবং বিএডিসি ডিলারদের জন্য ১৫৭ মেট্রিক টন টিএসপি এবং ৪৩০ মেট্রিক টন ডিএপি সার বরাদ্ধ দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে— গুরুদাসপুরে ১০জন বিসিআইসি, ১০জন বিএডিসি এবং ৬১জন খুচরা ডিলার আছে। এসব ডিলাররা ইউরিয়া, পটাস, ড্যাপ, ডিএপি ও টিএসপি সার বিক্রি করে থাকেন। হিসাবমতে— আমাদানি করা হলে মোট সারের অর্ধেক খুচরা ডিলারদের মাধ্যমে গ্রামীণ পর্যায়ে এবং বিসিআইসি ও বিএডিসি ডিলারদের মাধ্যমে বাজার এলাকার কৃষকদের কাছে সরাসরি বিক্রির কথা। কিন্তু বাস্তবে এক ছটাক সারও আমদানি করেনি ডিলাররা। স্থানীয় কৃষি অফিসও এব্যপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
গতকাল বুধবার দুপুরে গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় বাজারে বিসিআইসি এবং বিএডিসি ডিলারদের গুদামে গিয়ে বাঙলা ডিএপি ও পতেঙ্গা টিএসপি সার পাওয়া যায়নি। এর পরিবর্তে বুলগেরিয়া ও মরক্কোর সার মজুদ করে রাখা হয়েছে। তবে ডিলাররা এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
গুরুদাসপুর কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, দেশে উৎপাদিত ডিএপি এবং টিএসপি সার নিয়মিত বরাদ্দের নয়। বছরে খুব সামান্য এই সার বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে সার আমদানি না করার বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে।