
আব্দুল কুদ্দুসের জানাজায়।-ছবি মুক্ত প্রভাত
সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুসকে তার পিতা-মাতার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে। চতুর্থ জানাজা শেষে বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টার দিকে জন্মভূমি গুরুদাসপুরের বিলশা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ৩০ আগস্ট সকালে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস জেলা আওয়ামী লীগের টানা দুইবারের সভাপতি এবং নাটোর-৪ আসনের (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) ৫ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। ৭৭ বছর বয়সি এই প্রবীণ নেতা মৃত্যুকালে স্ত্রী ও এক ছেলে এবং এক মেয়ে রেখে গেছেন।
এরঅগে গতকাল বুধবার বাদযোহর সংসদ ভবন চত্তরে আব্দুল কুদ্দুসের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সন্ধ্যায় তার মরদেহ নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড়ের বাসভবনে নিয়ে আসা হয়।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় দ্বিতীয় জানাজায় আব্দুল কুদ্দুসকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। ডেপুটি স্পিকার এ্যাডভোকেট সামসুল হক টুকু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খাইরুজ্জামান লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল,তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহম্মেদ পলক জানাজা নামাজে উপস্থিত ছিলেন।
দুপুর ১২ টায় তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় গুরুদাসপুর সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। জানাজা শেষে উপস্থিত নেতা-কর্মিসহ সর্বসাধারণ অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় জানান।
দলীয় সূত্রে জানাগেছে, ৬৬’র ছয়দফায় শুরু। এরপর ৬৯’র গণ-অভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচন, পাকিস্তানের পতাকায় অগ্নিসংযোগ। ৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ। এসবই করেছেন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস। ৫৭ বছরের তার এই বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন শেষ হয় বুধবার।
সংসদ সদস্যদের ঘনিষ্ট ছাত্র লীগের সাবেক নেতা আকরামুল ইসলাম জানান, শ্বাষকষ্ট জনিত কারণে এমপি আব্দুল কুদ্দুসকে শনিবার সন্ধ্যায় অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়া হয়। পরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকায় আইসিইউতে চিকিৎসা চলে।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান জানান, আব্দুল কুদ্দুস ১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর গুরুদাসপুরের বিলশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুল জীবনের পর তিনি রাজশাহী কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনে যোগদানের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। রাজশাহী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি হিসেবে ১৯৬৯ সালের অভ্যুত্থান আন্দোলনে যোগদেন। মুক্তিযুদ্ধের আগে তিনিই প্রথম পাকিস্তানের পতাকায় অগ্নিসংযোগ করেন।
এছাড়া ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি বৃহত্তর রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্দুল কুদ্দুস সংগঠক হিসেবে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন।
দেশ স্বাধীন হলে ৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত।
এরপর রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত। সবশেষ ২০২২ সাল থেকে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে আব্দুল কুদ্দুস নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, প্রয়াত আব্দুল কুদ্দুস নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসন থেকে প্রথম বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সাত বার নৌকার মনোনয়ন পেয়ে পঞ্চম, সপ্তম, নবম দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। এরমধ্যে তিনি সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে এমপি হওয়ার পর তাকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও দেওয়া হয়।