একনেকের সভায় প্রায় ২শ কোটি টাকা ব্যয়ে ঝালকাঠিতে ১৩২/৩৩ কেভি ন্যাশনাল গ্রীড উপকেন্দ্র নির্মান প্রকল্পের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পরেছে। জেলায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু সৃষ্ট জটিলতায় প্রকল্পটির আশার প্রদীপ ক্ষীণ হয়ে আসছে। ১ বছরের বেশি সময় পার হলেও জমি হস্তান্তরের কাজই শেষ করা সম্ভব হয়নি। মেয়াদের সময়ে কাজ শুরু করা সম্ভব নাহলে ঝালকাঠির প্রকল্পটি বাতিল করা হবে বলে গ্রীড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানাযায়, ঢাকা এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রীড সঞ্চালন ব্যবস্থাপনা সম্প্রসারনের আওতায় বাংলাদেশ সরকার ও এডিবি সহ আরো ২টি সংস্থার অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলার মধ্যে ঝালকাঠিতে গ্রীড উপ-কেন্দ্র না থাকায় একনেকের সভায় এ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। ১ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা ব্যায় নির্ধারণ করে ২০১৯ সনের ১৫ ডিসেম্বর মোট ৮টি গ্রীড ষ্টেশনের অনুমোদন দেয়া হয়। তার মধ্যে ঝালকাঠির প্রকল্প ব্যায় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। বাকি ৭টির কাজ শুরু হলেও ঝালকাঠির প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
*মূল্য নির্ধারন অযৌক্তিক দাবি মালিক পক্ষের
*যৌক্তিক বলছে অধিগ্রহন শাখা
প্রকল্পের একাধিক সূত্রজানায়, ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশা সড়ক সংলগ্ন সংগ্রামনীল জেএল ১১০ মৌজায় প্রকল্পের জন্য ৫ একর জমি নির্ধারণ করা হয়। এরপরই শুরু হয় জটিলতা। অধিগ্রহন করা জমিতে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে মামলা করেন ২১ জনের মধ্যে ১২ জন মালিক। ১ম যুগ্ম জেল্ াজজ আদালত ২০২১ সনের ১৫ নভেম্বর মালাটি খারিজ করেন। এদিকে স্থান নির্ধারণের পর ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কাছে জমির দখল চেয়ে ২০২২ সনের ২৯ জুন অধিগ্রহনের ১ কোটি ৯৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জমা দেয় গ্রীড কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পের ডেপুটি ডিরেক্টর সঞ্জিব বলেন, আমরা এ সংক্রান্ত সকল কাগজ পত্র জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দিয়েছি। এখন শুধু জমি হস্তান্তরের অপেক্ষায় আছি। ইতি মধ্যেই নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে না পারায় দ্বিতীয় দফায় ২০২৪ সনের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ এ নেয়াহয়।
কিন্তু জমি হস্তান্তর না করায় কাজ শুরু করতে পারছিনা। ঝালকাঠি ওজোপাডিকো নির্বাহী প্রকৌশলী আঃ রহিম জানান, গ্রীড উপ-কেন্দ্রটি চালু হলে বরিশাল রুপাতলী পাওয়ার ষ্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়োজন হবেনা। ওজোপাডিকো ঝালকাঠির ৫টিল ফিডারের মাধ্যমে জেলা শহর সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ১ লাখ ২০ হাজার গ্রাহককে নির্বিঘ্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। তখন অব্যাহত লোড শেডিং সমস্যার সমাধান হবে।
জমির মালিক পক্ষে নয়ন চন্দ্র জানান, জমি অধিগ্রহন কর্তৃপক্ষ নাল জমিকে পুকুর দেখিয়ে আমাদের কম টাকা ধার্য্য করে। তাই আমাদের দাবি শ্রেনী পরিবর্তন নাকরে নাল জমির মূল্য নির্ধারন করা হোক। জমির শ্রেনী পরিবর্তন করায় একটি পক্ষ লাভবান হতে পায়তারা চালাচ্ছে। এসব কারণে নি¤œ আদালতে আমাদের মামলা খারিজ হওয়ায় উচ্চ আদালতে রীট করতে বাধ্য হয়েছি।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভ‚মি অধিগ্রহন শাখার সাথে কথা বলে জানাযায়, জমি মালিকদের বক্তব্য অযৌক্তিক। সরকার এ জমি রেজিষ্ট্রি অফিসের রেকর্ড অনুযায়ি মালিক পক্ষের ক্রয় করা মূল্য অনুযায়ি শতাংশ ১১ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে। তাই অধিগ্রহনের মূল্য সঠিক প্রক্রিয়ায়ই হয়েছে। ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম বলেন, তারা রীট করলেও জমি হস্তান্তরে কোন বাঁধা আছে কিনা সে বিষয়ে উচ্চ আদালতের সলিসিটর শাখার মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। জবাব পেলেই জমি হস্তান্তরের পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়াহবে।
সরকার পক্ষে এ্যাডভোকেট মো. গোলাম কিবরিয়া ঝন্টুবলেন, আইনত সরকার প্রয়োজনে যে কোন সময় যে কোন জমি অধিগ্রহন করতে পারে। বাদী পক্ষ এটাকে চ্যালেঞ্জ করে মাছের ঘের থাকায় ব্যাপক ক্ষতিপূরণের কারণ দেখিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে চির স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করে। কিন্তু সরকারের অধিগ্রহন করা জমিতে বাদী পক্ষের দাবির কোন যৌক্তিকতা নেই। তাই জেলা বাসির বৃহত্তর স্বার্থে সরকারি উন্নয়ন কাজ চলমান রাখতে মামলাটি খারিজ করেছে আদালত।
এরপর ২০২২ সনের ১২ জুন হাইকোর্টে মালিক পক্ষের একটি রীট আবেদনের প্রেক্ষিতে জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পরে। তবে রীট হলেও তাতে উচ্চ আদালতের এ কাজে কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকায় হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় আইনত কোন বাধা নেই।
প্রকল্পটির কাজ শুরু হতে বিলম্বের বিষয়ে ঢাকা ন্যাশনাল গ্রীডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, প্রকল্পের জমি অধিগ্রহনের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। জমি মালিকদের দাবি গ্রহন যোগ্য না হওয়ায় আদালত তাদের মামলাটি খারিজ করে দেয়। জমি অধিগ্রহনের টাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে চাওয়া হলে জিওবি ফান্ড থেকে চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে মালিক পক্ষ উচ্চ আদালতে রীট করে।
তবে রীটে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখার কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় জেলা প্রশাসকের ভ‚মি শাখা থেকে জমি হস্তান্তর না করার কারণে ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারছেনা। এভাবে কাজের মেয়াদ শেষ হলে প্রকল্পটি বাতিল হবে বলে এই কর্মকর্তা জানান।