নাটোরের বড়াইগ্রামে ৯ বছর বয়সী (দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী) এক শিশুকন্যাকে ধর্ষণের চেষ্টার বিচার কার্য সম্পন্ন হয়েছে খোদ পৌরসভা ভবনে।
বড়াইগ্রাম পৌরসভার মেয়র মাজেদুল বারী নয়নের উপস্থিতিতে বুধবার রাত ১০টায় পৌর ভবনের হলরুমে অনুষ্ঠিত বিচার কার্যে বিচারক বোর্ডের সদস্যরা ধর্ষণের চেষ্টাকারী করিম আলীকে (৫৫) দোষী সাব্যস্ত করে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা ও ২০ টি জুতার ঘা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
তবে মেয়রের হস্তক্ষেপে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা বলবৎ রেখে জুতার বাড়ি মাফ করে দেওয়া হয়। অভিযুক্ত করিম আলী উপজেলার বড়াইগ্রাম পৌরসভার কালিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় চায়ের দোকানী।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে শিশুটির মা বাড়ির পাশে করিম আলীর বাড়িতে চাল আনতে পাঠায়। এ সময় বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে করিম আলী শিশুটিকে নিজ ঘরের ভিতর নিয়ে যায় ও ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। শিশুটি কান্নাকাটি করলে তা স্থানীয় আরেকটি শিশু বুঝতে পেরে নির্যাতিতা শিশুটির মাকে ডেকে আনে।
পরে ধর্ষণের চেষ্টাকারী করিম আলী দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা চা দোকানী করিম আলীকে মামলা থেকে বাঁচাতে শিশুটির পরিবারকে নিয়ে মেয়র নয়নের শরণাপন্ন হয়।
পরে বিচার কার্যে ধর্ষণের চেষ্টাকারীকে জরিমানা করা হয়। বিচার কার্যের বোর্ড সদস্যরা ছিলেন, পৌর কাউন্সিলর মোতালেব হোসেন, শ্রমিকলীগ নেতা আব্দুল জলিল প্রধানিয়া, পৌর কর্মচারী অহিদুল ইসলাম অহিদ, আব্দুল বারেক ও সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক।
এ ব্যাপারে মেয়র মাজেদুল বারী নয়ন জানান, শিশুটির অভিভাবককে মামলা করার জন্য থানায় যেতে বলেছিলাম। তারা রাজী হয়নি। তাই স্থানীয় পর্যায়ে বসে মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে।
বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ আবু সিদ্দিক জানান, এ ব্যাপারে থানায় ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে নিশ্চয়ই আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হতো।
পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমি যা জানতাম তা যতসামান্য ছিলো। এখন যা জেনেছি তা ভিন্ন রকম। অবশ্যই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ দিন আগে উপজেলার জোয়াড়ি ইউনিয়নের কুমরুল গ্রামে ৩ বছরের এক শিশুকন্যাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। সেখানেও স্থানীয় সমাজ প্রধানরা বিচার করে ধর্ষণের চেষ্টাকারীকে আর্থিক জরিমানা করেন।
গত সপ্তাহে উপজেলার জোনাইল চামটা দিয়ারপাড়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার এক শিক্ষক ১১ বছর বয়সী এক ছাত্রকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে আপোষ মীমাংসা করে দেয়।
বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের নাটোর জেলা আহ্বায়ক সাংবাদিক অমর ডি কস্তা জানান, অপরাধীরা উপযুক্ত আইনগত শাস্তি না পেলে সমাজে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাবে। এতে নির্যাতিতদের মানবাধিকার দারুণভাবে লঙ্ঘিত হবে।