আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চলমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে যুবলীগ নেতা মিঠুন আলীকে (৩৫) কুপিয়ে ডান হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করেছে প্রতিপক্ষ নান্নু শেখের লোকজন। রবিবার (২৩ জুলাই) দিবাগত রাত পৌনে ১০টার দিকে নাটোর শহরের বলারীপাড়ায় মিঠুনের ওপর হামলা চালানো হয়। এসময় মিঠুনের আরো ৫ সঙ্গী আহত হন।
যুবলীগ নেতা মিঠুনকে উদ্ধার করে কাটা হাত নিয়ে প্রথমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার চিকিৎসা সম্ভব না হওয়ায় রাতেই ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া আহত জাহিদুল (৩৬), আব্দুল্লাহ আল রাব্বি (২৭), বকুল মিয়া (৩৬), জাহিদুল (৩৪) ও স্বপ্নকে (২৪) নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শহরের ভবানীগঞ্জ মহল্লার মৃত শাহাবুদ্দিন আলীর ছেলে মিঠুন নাটোর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে আছেন। তিনি রাজনৈতিকভাবে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের মতাদর্শি।
নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাছিম আহম্মেদ হামলার সতত্যা নিশ্চিত করে সোমবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে ইত্তেফাককে জানান, যুবলীগ নেতা মিঠুনের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় কেউ এজাহার দায়ের করেননি। বিশৃঙ্খলা এড়াতে ঘটনার পর থেকে শহরে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। তবে মামলা না হওয়ায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নাটোর শহরের ভবানীগঞ্জ মোড়ের আওয়ামী লীগের স্থানীয় কার্যালয় থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন মিঠুন। পথে শহরের বলার্রীপাড়া এলাকায় পৌঁছালে জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক নান্নু শেখের লোকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের ঘিরে ধরে। এসময় আতংক সৃষ্টি করতে কয়েক রাউন্ড ফাকা গুলি বর্ষণ করা হয়।
মিঠুনের চোখে মরিচের গুড়া মিশ্রিত পানি স্প্রে করে এলোপাথারি কোপানো শুরু করে হামলাকারীরা। একপর্যায়ে মিঠুনের ডান হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এসময় স্থানীয়রা মিঠুনকে উদ্ধার নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।
নাটোর আধুনিক সদর হাসাপাতের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক জানান, অন্যদের হাসপাতালে ভর্তি রাখা গেলেও মিঠুনের ডান হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তাকে উচ্চতর চিকিৎসার পাঠানো হয়।
দলীয় সূত্রে জানাগেছে, নাটোর আওয়ামী লীগের রাজনীতি ঘিরে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের মধ্যে আধিপত্যের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। তারই জেরে গত ১৬ এপ্রিল রমজান গ্রুপের জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক নান্নু শেখকে কুপিয়ে যখম করা হয়েছিল। অভিযোগ ছিল সাংসদ শিমুলের সমর্থক যুবলীগ নেতা মিঠুন ও তার লোকজন সেই হামলা চালান। ওই হামলার জেরে একই কায়দায় মিঠুনের ওপর হামলা চালিয়ে তার কব্জি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
জেলা যুবলীগের সভাপতি বাশিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়া দাবি করেন, অধিপত্য বিস্তার নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরেই দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। যুবলীগ নেতা মিঠুনের ওপর হামলার ঘটনায় দলীয় কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হামলার বিষয়ে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান জানান, দলের ভেতর কোনো পক্ষপাতিত্ব নেই। হামলাকারীরা সন্ত্রাসী গ্রুপ। হামলার শিকার মিঠুনও সন্ত্রাসী গ্রুপের। এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুর রহমান জানান, পুলিশ অপরাধীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে।