অভিযুক্তের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন ওই গৃহবধূ। ঈদের পর কাজ ছেড়ে দেওয়ার কথা জানানোয় ক্ষুব্ধ ছিলেন গৃহকর্তা ও তার স্ত্রী। দুই দফায় বাড়িতে এসে নির্যাতনের পর তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে মোবাইল চুরির অপরাধে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়।
ঘটনার পর থেকে গৃহকর্তা রাসেল ও তার স্ত্রী পলাতক রয়েছেন। তারা ঝালকাঠি শহরের নতুন কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা। সেখানেই গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন নির্যাতিত নারী।
কয়েক দিন থেকে গৃহবধু রাধা রানী কর্মকার (৪০) নির্যাতিত হলেও মুখ খুলতে সাহস পাননি। বুধবার ১২ টার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবেকুন নাহার আহত গৃহবধুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরন করেন।
গৃহবধুর স্বামী জানান, ‘আমার স্ত্রী একই এলাকার সৈয়দ সোহরাব হোসনের সন্ত্রাসী ও বখাটে ছেলে রাসেলের বাসায় কাজ করতেন। ঈদের আগে এক মাস ৭ দিন কাজ করার পর মাত্র ৭শ টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। তাই আমার স্ত্রী রাসেলের বাসায় আর কাজ না করার কথা জানান। একারণে ক্ষুব্ধ হয়ে গত ১৪ জুলাই বাসায় এসে আমার ১২ বছরের কন্যা সূবর্না কর্মকার ও আমাকে মারধর করেন। এরপর রাসেলের মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে পূনরায় বাসায় এসে আমার স্ত্রীকে লাঠি দিয়ে মারধর করেন।
সবশেষ ১৭ জুলাই স্ত্রী রাধা রানীকে বাসায় ডেকে নিয়ে রাসেল ও তার স্ত্রী জেবীন আক্তার নির্মম নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে রাসেলের স্ত্রী আমার স্ত্রীর যৌনাঙ্গে আঘাত করে আহত করেন।
মাকে নির্যাতনের বিষয়ে শিশু সূবর্না কর্মকার জানায়, আমার মা রাসেলের বাসায় কাজ না করায় কদিন ধরে বাসায় এসে বাবা মা সহ আমাকে লাঠি দিয়ে বেধরক পিটিয়ে চলে যেত।
এসময় সেখানে উপস্থিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবেকুন নাহার, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাছরীন আক্তারসহ উপস্থিত পুলিশ ও সাংবাদিকদের সামনে শিশুটি তার পিঠে এবং পায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখায়।
তখন শিশুটির অসুস্থ পিতা বলাই কর্মকারের পিঠেও লাঠির আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।
এ প্রসঙ্গে নির্যাতিতা নারীর ভাড়া বাসার মালিক সামসুল আলম, প্রতিবেশী সাহানাজ মুনসহ একাধিক এলাকাবাসী জানান, রাসেল কয়েক দিন থেকে এই বাসার নির্যাতিত পরিবারটিকে মোবাইলি চুরির অপবাদে এসে মারধর করে।
১৭ জুলাই রাতে মহিলাকে রাসেলের বাসায় ডেকে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করায় সে গুরতর অসুস্থ হয়। আমরা তার চিকিৎসার জন্য ঔষধ কিনে দিয়েছি।
এলাকাবাসী জানায়, সম্প্রতি অসদাচারনের দায়ে বহিস্কিৃত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাসেল এলাকায় বখাটে এবং মাদক ব্যাবসার সাথে জড়িত। তার বিভিন্ন অপরাধ মুলক কর্মকান্ডে কেহই মুখ খুলতে সাহষ পায়না। এই কারণে নির্যাতিত মহিলা তার বাসায় কাজ না করার কথা জানালে তাকে এবং তার পরিবারকে নির্যাতন চালালেও কেউ কিছু বলতে সাহষ পায়নি।
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এই ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহায়তায় এই পরিবারটিকে উদ্ধার কারায় আমরা সন্তুষ্ট এবং রাসেল ও তার স্ত্রীর দৃষ্টান্ত মুলক বিচার দাবী করছি।
ঝালকাঠি মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাছরীন আক্তার জানান, আমি এ ঘটনার খবর পেয়ে বিয়য়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করি। তিনি আমাকে নিয়ে নির্যাতিত মহিলার বাসায় এসে পরিবারটির ৩ জন সদস্যের শরীরেই রাসেলের নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পায়। এছারাও আমি নিজেই নির্যাতিত মহিলার গোপনাঙ্গে নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পেয়েছি।
তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে এবং তত্বাবধানে পরিবারটিকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসাপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।
সদর হাসপাতারের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাক্তার মেহেরিন জানান, গুরতর আহত অবস্থায় নিয়ে আসা এই নারী গোপনাঙ্গসহ শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তী করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সাবেকুন নাহার জানান, এই ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিবারটির সাথে কথা বলেছি। এদেরকে নির্যাতন ও মারধরের সত্যতা রয়েছে তাদের শরীরে।
এলাবাসী আমাকে জানিয়েছে নির্যাতনকারী রাসেল ও স্ত্রী আমার আসার খবর পেয়ে তারা বাসায় তালা দিয়ে পালিয়েছে। বিষয়টি অমানবিক হওয়ায় চিকিৎসার পরে এই ঘটনায় বলাই কর্মকার বাদী হয়ে নির্যাতন কারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করবে।
এদিকে তাদের সুচিকিৎসার জন্য আমি ইতি মধ্যেই সিভিল সার্জনকে বলে দিয়েছি। ঝালকাঠি থানার অফিসার ইন চার্জ নাসির উদ্দিন সরকার জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেয়া হবে।