
-প্রতিকী ছবি
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার বৈশাখিয়া গ্রামের মো. ফিরোজ আলম হাওলাদার (৪৬) নামে এক ব্যক্তি নাম বিভ্রাটের কারণে ডাকাতি মামালায় সাজা খাটছেন বলে দাবী করা হয়েছে।
আজ শনিবার (৮ জুলাই) সকাল ১১ টায় ঝালকাঠি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবী করেন ফিরোজের স্ত্রী সুরাইয়া বেগম।
গত ৪ মাস ধরে ফরিদপুরের কারাগারে ফিরোজ আলম সাজা খাটছেন। সংবাদ সম্মেলেনে উপস্থিত ছিলেন- তাঁদের তিন মেয়ে ফারিয়া আক্তার, তামিমা আক্তার, মরিয়ম আক্তার ও ভাতিজা শাহ জালাল।
লিখিত বক্তব্যে সুরাইয়া বেগম উল্লেখ করেন, গত ৮ মার্চ বরিশাল র্যাব-৮ এর মেজর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের বৈশাখিয়া চৌমাথা বাজার থেকে মো. ফিরোজ আলম হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ওইদিন রাতেই তাঁকে নলছিটি থানায় সোপর্দ করা হয়।
ওই সময় র্যাব প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, ফিরোজ আলম ২০০৭ সালের মার্চ মাসে সংঘটিত ফরিদপুরের একটি বাস ডাকাতির মামলার আসামি।
সেই মামলায় ২০১০ সালে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত আসামি ফিরোজাল ওরফে জুয়েলকে (৫০) ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন।
সুরাইয়া বেগম বলেন, ২০০৭ সালে ফরিদপুরের একটি বাস ডাকাতি মামলার ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসল আসামির নাম ফিরোজাল ওরফে জুয়েল (৫০)। মামলায় আসামি হিসেবে তাঁর নাম প্রথমে জুয়েল লেখা হয়। পরে অভিযোগপত্রে ফিরোজাল ওরফে জুয়েল লেখা হয়।
সেখানে ফিরোজালের বাবার নাম লেখা হয় মৃত নুর মোহাম্মদ ওরফে মুন্নুমিয়া। ঠিকানা দেওয়া হয় নলছিটির উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের বৈশাখীয়া গ্রাম।
প্রকৃত আসামী ফিরোজাল ২০০৩ সালে ফরিদপুরের ১ম যুগ্ন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারাধীন অপর একটি মামলায় ৭ মাস কারাভোগ করে জামিন নিয়ে পলাতক থাকে। পরবর্তীতে ২০০৭ সালের একটি বাস ডাকাতির মামলায় পুলিশ ফিরোজালকে আসামি করে। সেই মামলায় সে ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
অপরদিকে বর্তমানে সেই ডাকাতি মামলায় কারাগারে থাকা নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের নুর মোহাম্মদের ছেলে মো. ফিরোজ আলম হাওলাদার ১৯৯৭ সাল থেকে ঢাকার তেজগাঁওয়ের তেজতুরী বাজারে অবস্থিত আহসানুল্লাহ ইনস্টিটিউট অব টেকনিক্যাল এন্ড ভোকেশনাল এডুকেশন নামক একটি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহায়কের চাকুরি করেন।
শব-ই বরাতের ছুটিতে বাড়িতে এলে ফিরোজ আলমকে র্যাব গ্রেপ্তার করার পর থেকে এলাকা থেকে ফিরোজাল ওরফে জুয়েল এলাকা ছেড়ে গা-ঢাকা দিয়েছে।
ফিরোজ আলমের পক্ষের ফরিদপুরের আইনজীবী স্বপন সাহা গত ২৩ মে ফরিদপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফিরোজ আলমের জাতীয় পরিচয়পত্র, চাকুরীর প্রতিষ্ঠানের হাজিরা খাতা ও প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যয়নসহ ফরিদপুরের বিভিন্ন থানা ও আদালতের তলবীর (কোন মামলা নেই) মাধ্যমে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন সে নির্দোষ।
এই ফিরোজ আলম হাওলাদার ও ফিরোজাল ওরফে জুয়েল একই ব্যক্তি নয়। আদালত তাঁর আইনজীবীর আবেদন সন্তষ্ট হয়ে গ্রহণ করেন।
আদালত নির্দোষ ফিরোজ আলমকে পরোয়ানা না থাকা সত্বেও কেন এ মামলায় আটক করা হলো তা সঠিক তদন্ত করে ৩০ মে এর মধ্যে নলছিটি থানার ওসিকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ প্রদান করেন।
আদালত আদেশে আরও উল্লেখ করেন, কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় ফিরোজ আলম ফরিদপুরের কোন মামলায় কখনও আসামি হননি কিম্বা আটক বা গ্রেপ্তার হননি।
কিন্তু নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহা. আতাউর রহমান আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে জানিয়েছেন, এ মামলায় আটক ফিরোজ আলমই আসল আসামি ফিরোজাল ওরফে জুয়েল। ফিরোজ আলমের স্ত্রী সুরাইয়া বেগম বলেন, আমার স্বামী নির্দোষ।
তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র ও অন্যান্য প্রমাণাদি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় সে এ ঘটনার সাথে জড়িত নয়। আমি তিন সন্তান নিয়া অনেক কষ্টে আছি।
আমার স্বামীকে মুক্তি দিয়ে আমাদের কলঙ্ক মুক্ত করার দাবী জানাচ্ছি। এ বিষয়ে ফিরোজ আলমের আইনজীবী স্বপন সাহা মুঠোফোনে বলেন, তদন্তে নামঠিকানা সঠিকভাবে যাচাই না হওয়ায় প্রকৃত আসামি আড়ালে থেকে গেছে। আমরা পুলিশের এ প্রতিবেদেনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দায়ের করবো।
নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহা. আতাউর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ফিরোজ আলম সাজাপ্রাপ্ত ফিরোজালম। আমাদের প্রতিবেদন আদালত যাচাই বাচাই করে সিদ্ধান্ত নিবে।