৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপবৃত্তির তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপবৃত্তির তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ

স্কুলে অনুপস্থিত থাকলেও সহকারী শিক্ষকদের দিয়ে উপস্থিতি দেখিয়ে এক ছাত্রীকে উপবৃত্তি পাইয়ে দিচ্ছেন বালুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজমা পারভীন।

অভিযোগ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিরুল ইসলামের যোগসাজশে ওই প্রধান শিক্ষিকা বছরের পর বছর এই অনিয়ম করে যাচ্ছে।

ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের বালুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপবৃত্তি পাওয়া ওই শিক্ষার্থী একই সাথে দুই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি। সে সরকারি এই বিদ্যালয়ে পাশাপাশি ভান্ডারপুর আলফা কেজি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে। এবং সেখানেই নিয়মিত উপস্থিতি তার।

অথচ দুই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া, নিয়মিত না এসেও উপবৃত্তি পাচ্ছে। অনুপস্থিত ছাত্রীকে হাজিরা তুলে দিয়ে বৃত্তি পাইয়ে দেওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে এলাকাজুড়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রধান শিক্ষিকা হাজিরা জালিয়াতির মাধ্যমে অনুপস্থিত ওই ছাত্রী ৩য় শ্রেণী থেকে আজ পর্যন্ত হাজিরা তুলে দিয়ে উপবৃত্তি পাইয়ে দিচ্ছেন।

চতুর্থ শ্রেণীতে সর্বোচ্চ নম্বর ১৯৭৫ পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে সে। নিয়মিত না আসার বিষয়টি প্রকাশ পেলে আয়েশা সিদ্দিকাকে ৫ম শ্রেণিতে ১৯ রোল নম্বরে উত্তীর্ন দেখায় আর ১৭৬০ পাওয়া সিফাত হোসেনকে  ১নং রোল দেখায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৫ম শ্রেনীর ওই শিক্ষার্থী ভান্ডারপুর আলফা কেজি স্কুলে প্লে থেকে পড়াশুনা করছে। ২০২৩সালে ৩য় শ্রেনীতে উঠার পর বালুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজমা পারভীনের সহযোগিতায় বালুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় ঐ শিক্ষার্থী। ২০২৩ সাল থেকে ৩য় শ্রেণিতে ভর্তি হলেও বালুপাড়া সরকারি বিদ্যালয়ে আসতো না ঐ শিক্ষার্থী শুধু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করত।

এদিকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে না আসলেও প্রধান শিক্ষিকা নাজমা পারভীন ক্লাস শিক্ষকদের দিয়ে নিয়মিত হাজিরা তুলে দিয়ে উপবৃত্তি পাইয়ে দিতেন। এভাবে ৩য় শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত ওই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও শিক্ষকদের দিয়ে হাজিরা তুলে দিয়ে বৃত্তি পাচ্ছে ভান্ডারপুর আলফা কেজি স্কুলের নিয়মিত ওই ছাত্রীকে।

অপরদিকে বালুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে ওঠার পর ওই শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ১৯৭৫ নাম্বার পেয়ে ক্লাসে ফার্স্ট হয়। বিদ্যালয়ের না আসার বিষয়টি আলোচনা শুরু হলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আমিরুল ইসলামের সাথে আলোচনা করে অন্য ছাত্র সিফাত হোসেন প্রাপ্ত নম্বর ১৭৬০ কে ক্লাসে প্রথম দেখিয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া ওই শিক্ষার্থীকে ১৯ রোল নম্বরে দেখায়।

স্হানীয় এলাকাবাসী বলেন, একই সাথে একটি সরকারি বিদ্যালয় ও একটি বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনে নাম লিখিয়েছে। এই শিক্ষার্থী কিন্ডারগার্টেন এ নিয়মিত স্কুল করলেও বালুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে না গিয়ে শুধুমাত্র পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে।

অভিভাবকরা বলছেন, সঠিক তদারকি না থাকায় এ ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটছে ঘটনা ঘটছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কর্তৃপক্ষের কঠোর হওয়া প্রয়োজন।

এ ব্যপারে ওই শিক্ষার্থী জানায় , আমি পারিচা নানার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করি। দিপু স্যারের স্কুলে প্লে থেকে পড়ছি। আর কোন স্কুলে ভর্তি আছো কি না জানতে চাইলে, বালুপড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির কথা স্বীকার করে বলে সেখানে যাই না, ক্লাসও করি না।

আলফা কেজি স্কুলের পরিচালক দিপু মোবাইলে বলেন, সে এখানে অনেক আগে থেকে পড়ছে এবং এক শিক্ষিকা জানান, আলেফা প্লে থেকে এই প্রতিষ্ঠানে পড়ছে। প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন আসে। তার রোল নম্বর ১।

বিগত ২০২৪ সালের ৪র্থ শ্রেনীর হাজিরা ব্যপারে জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক মেহেদী হাসান জানান, ওর মা বলেছিলো যে কিছু সাক্রিফাইস করেন। মাঝে মাঝে ঐ শিক্ষার্থী আসতো। এ ব্যাপারে হেড মাষ্টার বলেছে আপনি বিষয়টি দেখেন, যেহেতু আসবেনা, আসতে পারছে না। এই ভাবেই হাজিরা তুলে দিয়েছি।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে বালুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজমা পারভীন বলেন, ওই শিক্ষার্থী রেগুলার স্কুলে আসতো না। খোঁজ নিয়ে দেখি সে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তখন তার মাকে জানানো হয় এক সাথে দুটো স্কুলে চালানো সম্ভব নয়। এবং যেকোনো একটি প্রতিষ্ঠানে রাখতে বলি। তার মা ট্রান্সফার করে দিতে বললে আমি ট্রান্সফার করে দিতে চাইছি। কিন্তু অনলাইনে ট্রান্সফার অপশন পাইনি তাই ট্রান্সফার করি নি।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার জানান, একজন শিক্ষার্থী একসাথে দুই প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করতে পারে না। এটি নিয়মবিরোধী। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ ব্যপারে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইশরাত জাহান ছনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।