২৩ আগস্ট, ২০২৫

এক মাসে ৩৫ চুরি ঘটনা, চুরি আতঙ্কে বদলগাছীর মানুষ

এক মাসে ৩৫ চুরি ঘটনা, চুরি আতঙ্কে বদলগাছীর মানুষ

বর্তমানে চুরি আতঙ্কে রয়েছে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলাবাসী। এই উপজেলায় হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে চুরির ঘটনা। চোরেরা সুযোগ বুঝে এক রাতেই ৩-৪ টি জায়গায় চুরি করছে অনায়াসে।

সর্বশেষ শুক্রবার ২২আগষ্ট গভীর রাতে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় একটি ফিডের দোকানে চুরি করতে এসে এক চোর জনতার হাতে আটক হয়। তার দেওয়া তথ্য মতে আরও ৩ চোরকে আটক করে পুলিশ।

এর আগে গত বুধবার একই রাতে তিনটি দোকান ও একটি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। আর এভাবেই গত গক মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩৫টি চুরির ঘটনা ঘটেছে।

এসব চুরি আবার বেশি হচ্ছে খোদ উপজেলার প্রাণকেন্দ্র বাজার, দোকানপাট থেকে। এছাড়া বাদ যাচ্ছে না গ্রামীণ বাড়িঘর। এ অবস্থায় নিরাপত্তায়হীনতায় আর হতাশায় দিন কাটছে উপজেলার মানুষের। দেখা দিয়েছে নতুন চুরি আতঙ্ক।

স্থানীয়রা বলছেন চুরির মালামাল উদ্ধার ও চোরদের আটক না করায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে তারা। আবার হঠাৎ করে চুরি বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে অনেকে বলছেন নেশার টাকা জোগাড় ও পুলিশের কঠোর পদক্ষেপের অভাব।

আর থানা পুলিশ বলছে চুরির রহস্য উৎঘাটনসহ চোরকে ধরার চেষ্ঠা অব্যাহত রয়েছে।

প্রতিনিয়ত কারো না কারো মূল্যবান জিনিস চুরি করছে চোরেরা। কখনও কারো বাড়ির গরু-ছাগল চুরি হচ্ছে, কখনও গভীর নলকূপের টর্র্রর্র্র‍্যান্সফরমার চুরি, কখনও পাওয়া যাচ্ছে দোকান চুরির খবর। আবার কখনও বাড়ির গেট থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা। যেন চোরদের চুরির নিরাপদ উপজেলায় পরিণত হয়েছে।

এখন চায়ের দোকান মূখর হয় চুরির খবরে। পুলিশ যেন নির্বেকার, কোন ভাবেই চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। করতে পারছে না রহস্য উৎঘাটন। তাই পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ভূক্তভোগীরা।

জানা যায়, গত ২০ আগষ্ট একই রাতে উপজেলার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শরিফুলের মুদি দোকান, উপজেলার মোড়ে সোহাগের চায়ের দোকান, বাজার এলাকায় মাসুদের মুদি দোকান এবং হটাৎপাড়া এলাকার মজিদুলের বাড়ির ওয়াটার পাম্প চুরি হয়।

এর আগে গত ১০ আগষ্ট রাতে বাজার এলাকার সবচেয়ে বড় মুদি দোকান লিটন ভ্যারাইটি ষ্টোরের ইটের ১০ ইঞ্চি দেয়াল ভেঙে দোকানে চুরি। এর দুই দিন পর বাজারের আরেক বড় মুদি দোকান ফারুক ষ্টোরের উপরের টিন খুলে মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় চোরেরা।

এছাড়া গত ৭ আগষ্ট সবজি দোকানদার সুমন হোসেন তার পালসার মোটরসাইকেলটি দুপুরে বাড়ির দরজার সামনে রেখে ভাত খাচ্ছিলো। পরে এসে দেখে মোটরসাইকেল নেই, চুরি হয়ে গেছে। 

এর ৩-৪ দিন পর মথুরাপুর ইউপির সদস্য পরিমল চন্দ্রের বাড়ির লোহার গ্রিল কেটে মোটরসাইকেল ও গরু চুরির ঘটনা ঘটে। 

এভাবেই গত এক মাসে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ৩৫ টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশী চুরি হয়েছে উপজেলার মোড় ও বাজার এলাকায়।

গত ২৮জুলাই উপজেলার খাদ্যগুদামের সামনে সার্থক ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সাংবাদিক সানজাদ রয়েল সাগরের সিনজেনটা দোকানের ইটের দেয়াল ভেঙে মালামাল চুরি হয়। 

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সানজাদ রয়েল সাগর ক্ষোভের সঙ্গে বলেন,“দোকান ভেঙে নগদ টাকা আর মালামাল নিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত পুলিশ আমার চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি। পুলিশ তো গভীর ঘুমে বিভোর। দেখি কবে পুলিশের ঘুম ভাঙে

তিনি আরও বলেন, চোরেরা চুরির মালামাল কয়েকটি দোকানে বিক্রি করে। যেগুলোর তথ্য ওসিকে জানালেও তিনি অভিযান দেন না। উর্দ্ধতন কর্মকর্তার দোহায় দেন। 

আরেক ভূক্তভোগী সবজি ব্যবসায়ী সুমন হোসেন বলেন,“আমার মোটরসাইকেল চুরি হওয়ার পর থানায় গিয়েছি জিডি করার জন্য। পুলিশ জিডি না নিয়ে অভিযোগ দিতে বলে। সেই মোতাবেক অভিযোগ লিখে আমি ওসির কাছে জমা দিতে গেলে ওসি আমাকে বলেন“ আপনার কাছে যদি এক লাখ টাকা থাকে বাহিরে রাখবেন, টাকা আর গাড়ী একই জিনিস। গাড়ী বাড়ির বাহিরে রাখলেন কেন? এখন চুরি হয়েছে সব দোষ পুলিশের হবে।

মুদি ব্যবসায়ী শরিফুল হোসেন বলেন,“ যেভাবে দিনের পর দিন চুরি হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে আমরা কিভাবে ব্যবসা করবো।চ্বারবার চুরির ঘটনায় জনমনে ক্ষোভ জমছে।

মানুষ প্রশ্ন তুলছে চোরদের লাগাম টানবে কে? এভাবে চলতে থাকলে বদলগাছীর শান্ত পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। কোন কোন গ্রামে চুরির ভয়ে মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছে না। কেউ ঘুমাচ্ছে ঘরের উঠানে,আবার কেউ টর্চ লাইট হাতে পাহারা দেন। চোরের ভয়ে অস্থির জনজীবন।

এ বিষয়ে বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান বলেন, চুরির ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে, আমরা চোরকে ধরতে কাজ করছি। এখন পর্যন্ত কোন চুরির ঘটনার রহস্য উৎঘাটন বা চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধার হয়েছে কি/না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মালামাল উদ্ধার হয়নি,তবে আমরা আশাবাদী চোর সহ চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধার হবে খুব নিকটে। চার জন চোর আটক আছে। আজ দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে।

তিনি আরও বলেন, নেশাখোর দের চুরির বিষয়ে আমার কাছে তথ্য নেই। তবে তারা চুরি করতেই পারে। আর উপজেলায় চুরির বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। চুরি রোধে আমরা পেট্রোল ডিউটি বৃদ্ধি করেছি।

নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ফারজানা আক্তার বলেন,“ এতোগুলো চুরির তথ্য আমাদের কাছে নাই। তবে ওসি বদলগাছীর সাথে কথা বলে এ বিষয়ে আপনাকে জানাতে পারবো।