১৮ আগস্ট, ২০২৫

শ্রেণী কার্যক্রম চালু করায় সহকারী শিক্ষকদের রোষানলে প্রধান শিক্ষক

শ্রেণী কার্যক্রম চালু করায় সহকারী শিক্ষকদের রোষানলে প্রধান শিক্ষক

রাজশাহীর বাগমারা'য় বন্ধ থাকা শ্রেণিকার্যক্রম নতুন ভাবে চালু করায় সহকারী শিক্ষকদের রোষানলে পড়েছেন এক প্রধান শিক্ষক।

ঘটনাটি ঘটেছে তাহেরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তাহেরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বহু বছর ধরে বন্ধ থাকা ক্লাশ নতুন ভাবে চালু করায় কতিপয় সহকারী শিক্ষকের রোষানলে পড়েন প্রধান শিক্ষক (চ.দা) সৈয়দ জোবােয়ের মো. কিবরিয়া।

সূত্র জানায়, সোমবার তাহেরপুর হাট বার হওয়ায় দীর্ঘদিন ক্লাস বন্ধের প্রচলন ছিল। জোবায়ের মো. কিবরিয়া মীরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বদলী হয়ে তাহেরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন।

শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করেন। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে হাটবার সোমবারে ক্লাস চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

প্রথম দিকে মতামত দিলেও পরক্ষণে কিছু শিক্ষক ভীতরে ভীতরে বিরোধীতা করতে থাকেন। ওই স্কুলে ৬০৩ জন শিক্ষার্থী, ১৩ জন শিক্ষক রয়েছেন। সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালাম ৯ জন সিনিয়র শিক্ষককে ডিঙ্গিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হন।

প্রায় দুই বছর হ-য-ব-র-ল অবস্থায় শ্রেণি কার্যক্রম চলে। জুনিয়র হওয়ায় শিক্ষকদের তিনি আয়ত্বে রাখতে পারতেন না। স্কুলে চেইন অব কমান্ড ছিল না। যে যার মত আসা যাওয়া, ক্লাস করতেন।

অনেক শিক্ষক প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য করতেন শিক্ষার্থীদের। এমন কী জোবায়ের মো. কিবরিয়া কে যোগদানেও নানা ভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন (ভারপ্রাপ্ত) শিক্ষক আব্দুস সালাম।

অল্প দিনের মধ্যে অভিভাবক সমাবেশ এবং হোম ভিজিট বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিবীড় সম্পর্ক গড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন প্রধান শিক্ষক জোবায়ের কিবরিয়া। এটি দু’একজন শিক্ষক মেনে নিলেও অধিকাংশ সহকারী শিক্ষক মেনে নিতে পারছিলেন না।

নানা অনিয়মের কারণে সহকারী শিক্ষিকা নাদিরা আখতার বানুকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন প্রধান শিক্ষক। এরপর আরও ষড়যন্ত্রের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া হয়। স্কুলে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরীতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে মদদ দেন শিক্ষক আব্দুস সালাম ও নাদিরা আখতার।

প্রশ্নপত্র ফাঁশ করে দু’জন শিক্ষক শাস্তি ভোগ করেন। অমনোযোগী কিছু শিক্ষক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন।

হয় প্রধান শিক্ষক থাকবেন, না হয় আমরা থাকবো। প্রধান শিক্ষক জোবায়ের কিবরিয়া বলেন, শহরের সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়ে আমার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করিয়ে নিয়েছেন চক্রান্তকারীরা । এরপর জেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয় তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তে আমাকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়।

মিথ্যা নিউজের প্রেক্ষিতে অভিভাবকগণ চক্রান্তকারীদের চিহ্নিত করতে কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেন। গত ৭ আগস্ট ঘটনার তদন্ত করতে দুই জন উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুলে আসেন।

নানা কারণে স্থানীয় অভিভাবকদের সাথে সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালামের সম্পর্কের অবনতি হয়। শিক্ষক আব্দুস সালাম স্কুলে জনৈক অভিভাবক কর্তৃক সন্ত্রাসী হামলার শীকার হন।

তিনি এক পর্যায়ে জ্ঞান হারান। মানবিক কারণে প্রাথমিক সেবা দিয়ে তার চেতনা ফিরিয়ে আনি । এর পর সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালামের স্ত্রী স্কুলে প্রবেশ করেন। তাঁর সন্দেহ আমি এসব করিয়ে নিয়েছি।

এরপর দু’জন কর্মকর্তার সামনে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ এবং আমাকে জুতা দিয়ে আঘাত করে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করেন অফিস চলাকালীন সময়ে। অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক সৈয়দ জোবােয়ের মো. কিবরিয়া নিরাপত্তা হীনতায় রয়েছেন বলে অভিযোগে প্রকাশ ।

রবিবার অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালামের কাছে কল দিলে ও প্রান্ত থেকে শিক্ষকের স্ত্রী ফোন রিসিভ করেন। তাঁর স্বামী কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনি বিশ্রাম নিচ্ছেন।

প্রধান শিক্ষককে জুতা পেটা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি স্বামীর খবর শুনে স্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষকের আসপাশে আমাকে যেতে দেওয়া হয়নি। উচ্চ-বাচ্য বাক্য বিনিময় হলেও জুতা পেটা করার অভিযোগ সত্য নয়।

এ সব প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক সৈয়দ জোবােয়ের মো. কিবরিয়া বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

মুঠোফোনে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি,অল্প সময়ের মধ্যে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হবে, আপনারা তা দেখতে পাবেন।