গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গোবিপ্রবি ) ৯ম ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই সি), আর্কিটেকচার, ম্যানেজমেন্ট ও ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে শেখ রাসেল হলের একাধিক কক্ষ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শ্রেণিকক্ষ ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতাসহ ১০-১৫ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই ২০২৫) আনুমানিক রাত ১১:৩০ থেকে রাত ৩ টা অব্দি থেমে থেমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে,রাত আনুমানিক ১১.৩০ এর দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান একাডেমিক ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। অনুষ্ঠান চলাকালীন বিজিই বিভাগের শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ অয়ন তার স্ত্রীকে চেয়ার আগায়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে ইইই(সি) বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি হাতাহাতি ও সংঘর্ষে রূপ নেয়।
সংঘর্ষের সূত্রপাত একাডেমিক ভবন থেকে হলেও কিছু সময়ের মধ্যেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে আবাসিক হলগুলোতে। ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ও ইইই(সি) বিভাগের শিক্ষার্থী বাদশার মাথা ফেটে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।
এদিকে বাদশার বিরুদ্ধে ঘাড়ে কামড় দেয়ার অভিযোগ আনেন ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম। পরবর্তীতে এ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বিজয় দিবস হল এবং শেখ রাসেল হলে।
সেখানে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি জড়িয়ে পড়ে আরো বেশকিছু বিভাগ। পরবর্তীতে বিজয় দিবস হলে শফিক গ্রুপ একত্রিত হয়ে শেখ রাসেল হলে হামলা চালায়। এ সময় বেশকিছু কক্ষ ভাঙচুর করা হয়।
পরবর্তীতে শেখ রাসেল হলের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এএসভিএম বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক নাহিদুর ইসলাম সাকিব এবং ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিকের কক্ষের জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেয়া হয় ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় উভয় অংশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরবর্তীতে শেখ রাসেল হল থেকে একাডেমিক ভবনে গিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভাঙচুর চালায়।
সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষক ঐক্য পরিষদ থেকে সর্বশেষ পরপর দুইবারের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে নির্বাচিত শিক্ষক নেতা ড. আরিফুজ্জামান রাজীব, সহকারী প্রক্টর সাইফুল ইসলাম, ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থী ওবায়দুল ইসলামসহ কয়েকজন সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়ে আহত হন। অন্য দিকে হামলা-পাল্টা হামলায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের একাডেমিক ভবনের মধ্যে কয়েকজনের সাথে কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য ও হাতাহাতি হলে প্রক্টর স্যারকে আমি ফোন দেই এবং স্যার এসে সমাধান করে দেন। আমরা চলে আসি বিজয় দিবস হলে। এর পর আমাদের উপর হামলা চালানো হয়।
বলে রাখা ভালো ছাত্রদলের সহ সভাপতি বাদশা আমার ঘাড়ে কামড় দেয়। এছাড়া আমাদের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে অনেকজনকে আহত করে। পরে এ বিষয়টা ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসে।
শেখ রাসেল হলে হামলায় আমি যুক্ত ছিলাম না। সিসিটিভি ফুটেজ দেখুক প্রয়োজনে। উল্টো অন্য হলের ছেলে এসে আমাদের হলে আমাদের জিনিসপত্র বাইরে ফেলেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে। আমি এদের বিচার চাই।
এ বিষয়ে শেখ রাসেল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মোঃ সবুজ হোসেন বলেন, শেখ রাসেল হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের কিছু সন্ত্রাসী হামলা, ভাঙচুর চালিয়েছে। আমরা চাই অনতিবিলম্বে হল প্রশাসন এই সন্ত্রাসীদের হল থেকে বহিষ্কার করবে।
হামলার শিকার ইইই(সি) বিভাগের শিক্ষার্থী মাশরুল বলেন, অয়ন তার স্ত্রীকে চেয়ার আগায়ে দিতে গেলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা অয়নের উপরে হামলা করে। এসময় ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা নারী শিক্ষার্থীদের উপরেও হামলা চালালে আমি প্রতিবাদ করি। এতে তারা আমার উপরেও হামলা চালায়। এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার চাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ড. আরিফুজ্জামান রাজিব বলেন, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। অতিদ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।