৩০ জুলাই, ২০২৫

টিউশন করে খরচ চালানো দুই ভাই সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতেন

টিউশন করে খরচ চালানো দুই ভাই সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতেন

টিউশন করে পড়া লেখার খরচ চালাতেন সাকাদাউন সিয়াম এবং ছোট ভাই সাদমান সাদাব। কয়েক মাস হলো টিউশন ছেড়ে দিয়েছেন তারা। রাজধানীর শুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক এক সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে যে পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তার মধ্যে এই আপন দুই ভাই রয়েছেন।

বড় ভাই সাকাদাউন সিয়াম এবং ছোট ভাই সাদমান সাদাব— দুজনেই রাজধানীর প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। নাটোরের গোপালপুরে তাদের আদি বাড়ি। তবে তারা বর্তমানে রাজশাহীর বাসিন্দা। তাদের বাবা এসএম কবিরুজ্জামান পেশায় এক গ্যাস ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী। চাঁদাবাজি করতে গিয়ে দুই ছেলের গ্রেপ্তারের খবরে তিনি আক্ষেপ করে বলছেন, এটা মেনে নেওয়া তার জন্য কঠিন। 

এসএম কবিরুজ্জামানের আদি বাড়ি নাটোরের গোপালপুরে হলেও ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেনার দায়ে বাড়ি বিক্রি করে এক দশক আগে রাজশাহীতে চলে আসেন। বর্তমানে পরিবার নিয়ে কেচুয়াতৈল এলাকায় মেসার্স এন বি ফিলিং অ্যান্ড সিএনজি স্টেশনের পাশের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।

স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানাগেছে, দুই শিক্ষার্থীর বাবা কবিরুজ্জামান ফিলিং স্টেশনে স্বল্প বেতনে চাকরি করছেন। ওই বেতনের বেশিরভাগ অর্থই চলে যায় বাসা ভাড়া দিতে। আগে দুই ছেলে টিউশন করে খরচ চালাতেন। তবে কয়েক মাস হলো টিউশন ছেড়ে দিয়েছেন। এখন আর বাবার কাছ থেকে টাকা নেন না। তবে রাজশাহীতে কবির উদ্দিনের নিজস্ব কোনো জমি নেই। দুই ছেলের গ্রেপ্তারের খবরে স্থানীয় লোকজনও বিস্মিত।

সরেজমিনে ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, গাড়িতে গ্যাস ভড়ছেন কবিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ফিলিং স্টেশনে কাজ করে তার আয় খুবই কম। যা পান তা দিয়ে বাসাভাড়া দিতেই চলে যায়। ছেলেদের পড়াশোনায় মাসে ২০ হাজার টাকার মতো খরচ লাগে। তাকে কেউ খুশি হয়ে কিছু দিলে, সেটি দিয়ে চলেন তিনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘দুই ছেলে আগে টিউশন করত। কিছুদিন হলো রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। রোববার সকালে জানলাম, দুই ছেলে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে। আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। রদের জীবনধারা আলাদ। দাড়ি রাখে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়াবে, এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন।’

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গত শনিবার রাতে চাঁদাবাজির অভিযোগে রাজধানীর গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাবসহ চারজনকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। তারা কবিরুজ্জামানের দুুই ছেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য ছিলেন। চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তারের পর সংগঠন থেকে তাদের বহিস্কার করা হয়েছে। অন্য দুইহন হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ। তাদেরও সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান আবদুর রাজ্জাকের ঘনিষ্ঠ। ফেসবুকেও তাঁর সঙ্গে তাঁদের চলাফেরার একাধিক ছবি রয়েছে।

সিয়াম ও সাদাব রাজশাহীর খড়খড়ি উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী মহানগর সমন্বয় কমিটির প্রধান মোবাশ্বের আলী বলেন, ‘এরা তো আমাদের স্কুলেরই ছাত্র ছিল। খুব ভালো ছেলে। ওরা গ্রেপ্তার হয়েছে, এটা শুনে আমি হতবাক।’