পুকুর পাড়ের হেলে পড়া বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে নজির উদ্দিন (৪৫) নামের এক কৃষকের করুণ মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে ঘাসকাটতে গিয়ে একটি পুকুর পাড়ে তিনি বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়েছিলেন। শনিবার দুপুরে পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
তবে এ ঘটনায় গুরুদাসপুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন গুরুদাসপুর থানার উপপরিদর্শক মো. আব্দুল হান্নান। নিহত কৃষক নজির উদ্দিন গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের দেবোত্তরগড়িলা গ্রামের মৃত ফজর আলীর ছেলে। তার লাশ পাওয়া যায় একই ইউনিয়নের রানীগ্রাম এলাকার রেজাউল করিমের পুকুর পাড়ে। গত দুইদিন আগে এই পুকুরটির খনন কাজ শেষ হয়েছে।
নিহত কৃষক নজির উদ্দিনের ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার বিকেলে ঘাসকাটতে গিয়ে আর বাড়ি ফিরেননি তার বড় ভাই নজির। খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান মেলেনি। শনিবার রেজাউল করিমের পুকুর পাড়ে গিয়ে তিনিই প্রথম নজিরকে বৈদ্যুতিক তাড়ে জড়ানো অবস্থায় দেখতে পান। বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে নজিরের মুখমণ্ডল ঝলসে গেছে। বৈদ্যুতের খোলা তারে আটকে চুল।
তিনি বলেন, খননের জন্য রেজাউল করিমের জমিটি লিজ নিয়েছিলেন দেবোত্তর গড়িলা গ্রামের রাশিদুল, আলিম, মনিরুল ও কামরুল ইসলাম। ২ দিন আগে পুকুরটির খনন কাজ শেষ হয়েছে। ওই পুকুরের পাড়ের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের চলমান লাইন। খননের সময় অবৈধভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটির একমাত্র টানাটি কেটে দেন খননকারীরা। এতে খুঁটিটি হেলে পড়ে। ঘাস কাটতে গিয়ে হেলে পড়া তাড়ে জড়িয়ে ঘটনাস্থলেই নজিরের মৃত্যু হয়। তারা এই ঘটনায় পুকুর খননকারীদের বিচার দাবি করেন।
অভিযুক্ত রাশিদুল, আলিম, মনিরুল ও কামরুল গা ঢাকা দেওয়ায় এ ব্যপারে তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে পুকুর মালিক রেজাউল করিম ইত্তেফাককে বলেন, তিনি টাকার বিনিময়ে পুকুর খননের চুক্তি দিয়েছিলেন। বৈদ্যুতিক খুঁটির টানা কেটে দেওয়ার ব্যপারে তার কোনো হাত নেই।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব আলী বলেন, পুকুুরটি খননের সময় ভেকু দিয়ে অবৈধভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটির টানা কেটে দিয়েছেন খননকারীরা। ফলে বৈদ্যুতিক তার হলে পড়ায় এই কৃষকের এমন করুণ মৃত্যু।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ গুরুদাসপুর-জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. সাহিদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়েই তিনি ঘটনাস্থলে পল্লী বিদ্যুতের লোক পাঠিয়েছিলেন। অনুমতি ছাড়া বৈদ্যুতিক খুঁটির টানা কেটে দেওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। বিষয়টি নিয়ে লিখিত প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন তিনি। তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
গুরুদাসপুর থানার উপপরিদর্শক মো. আব্দুল হান্নান বলেন, কৃষকের মৃত্যুর ঘটনায় তাৎক্ষণিক অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন এলে সে অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।