৩০ মে, ২০২৫

ঘুরে ঘুরে দরিদ্রদের ভিজিএফ দিচ্ছেন ইউএনও

ঘুরে ঘুরে দরিদ্রদের ভিজিএফ দিচ্ছেন ইউএনও

ঝোপ-ঝার থেকে শাক-পাতা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন। সেই আয়েই কোনোমতে চলে তার একলার পেট। গত ৩ দশকে কেউ তার খবর নেননি। দেননি সরকারি কোনো সহায়তাও। এবার দশকেজি চালের কার্ড পেয়েছেন। বাড়িতে গিয়ে কার্ডটি পৌঁছে দিয়েছেন ইউএনও।

এবার ঈদের মধ্যে আর ভাতের কষ্ট হবে না। কথাগুলো বলতে গিয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়েছে বিধবা আসমানি বেগমের (৫৫)। এই বিধবা জানালেন, তার অসহায়ত্ব ও কষ্টের কথা শুনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ সরকারিভাবে অন্যান্য সহায়তার আশ্বাসও দিয়েছেন। এতে তিনি আগামী দিনগুলোতে বেঁচে থাকার ভরসা পাচ্ছেন। 

আসমানি বেগমের বাড়ি গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের শিধুলী গ্রামে। শুধু যে আসমানি বেগম ভিজিএফের এই সুবিধা পেয়েছেন তা নয়। তার মতো শত শত নারী-পুরুষকে এই সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে।

সূত্র বলছে, প্রতি বছর ঈদের আগে ১০ কেজি চালের ভিজিএফ কার্ড দেওয়া হয়। কিন্তু রাজনৈতিক দলের আধিপত্যের ফলে অনেক দরিদ্র মানুষও বঞ্চিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের পতনের পর এই জায়গাজুড়ে আধিপত্য তৈরি করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। গত রমজান মাসেও ভিজিএফ কার্ডের ভাগাভাগি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের দরকষাকষি করতে দেখা গেছে। এসব কার্ড নিয়ে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়েছেন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। দীর্ঘ সময় পর রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে ভিজিএফের কার্ড বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে বিতরণ করছেন গুরুদাসপুরের ইউএনও ফাহমিদা আফরোজ।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের দরিদ্রদের জন্য ১৪ হাজার ৯১৭ এবং পৌরসভার জন্য ৪ হাজার ৬২১টি ভিজিএফের কার্ড বরাদ্দ রয়েছে। এবারও রাজনৈতিক দলগুলো ভিজিএফের কার্ড ভাগাভাগি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইউএনও বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। পৌর প্রশাসক হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পৌর শহরের বিভিন্ন মহল্লা, প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে গিয়ে ভিজিএফের কার্ড দরিদ্রদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। আবার ইউনিয়ন পর্যায়েও তিনি এই ধারা অব্যহত রেখেছেন। এতে প্রকৃতরা সুবিধার আওতায় আসছেন। আগামী রোববার ও সোমবার দরিদ্রদের মধ্যে এই চাল বিতরণ করা হবে।

চা বিক্রেতা সিরাজ শাহ, ভ্যান চালক মইন আলী, দিনমজুর আসমত রহমানসহ অন্তত ১৫জন দরিদ্র ব্যক্তি জানান, দুই দিন আগে হঠাৎ করে ইউএনও তাদের কাছে গিয়ে হাজির হন। কিছুক্ষণ কথাও বলেন। এরপর ১০ কেজি চালের স্লিপ হাতে ধরিয়ে দেন। এই প্রথম তারা সরকারি কোনো সহায়তা পেতে যাচ্ছেন। এর আগে তাদের কেউ খোঁজ খবর নেননি। উপজেলায় যে, ইউএনও আছে এটিও তারা প্রথম জানলেন।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে প্রকৃত দরিদ্রদের হাতে ভিজিএফের কার্ড পৌঁছে দিতে পেরে তিনিও নিজেও আনন্দিত।