১৪ কিলোমিটার সড়কজুড়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। কোথাও সড়ক ভেঙে ধ্বসে গেছে, কোথাও আবার ঢালাই ভেঙে আস্ত রড বেড়িয়ে আছে ভয়ানক রূপে। এমন নাজেহাল সড়কে ১৫ বছর ধরে দুর্ভোগ সয়ে চলাচল করছেন তিন উপজেলার অন্তত লক্ষাধীক মানুষ।
গুরুদাসপুর-তাড়াশ মৈত্রী ১৪ কিলোমিটারের এই ডুব (সাবমার্জেবল) সড়কটির এমন নাজুক পরিস্থিতি। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এই সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যাত্রীবাহি ছোট ছোট যানবাহন। হেঁটে চলাচলের ক্ষেত্রে দুর্ভোগে পড়ছেন পথচারীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, ১৪ কিলোমিটারের এই সড়কটির অবস্থান দক্ষিণ চলনবিলের নিম্নাঞ্চলের বিলশা বাজার থেকে রুহাই, কুন্দইল, মাকর্সন হয়ে তাড়াশ উপজেলা পর্যন্ত। এই সড়কটি চলনবিলের বিছিন্ন তিনটি উপজেলা গুরুদাসপুর, সিংড়া এবং তাড়াশকে সংযুক্ত করেছে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভির রাত পর্যন্ত এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে যাত্রীবাহি ছোট ছোট অসংখ্য ভ্যান, ভুটভুটি, সিএনজি। রুহাই, কুন্দইল, মাকর্সন, বিলশা, আয়েস, বিয়েশ, কাউয়া টিকরিসহ অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ এই সড়কটির ওপরে প্রত্যক্ষ এবং পরক্ষ্যভাবে নির্ভরশীল। আবার দক্ষিণ চলনবিলের ধান, ভুট্টা, গমসহ বছরজুড়ে উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে এবং বাজারজাতের ক্ষেত্রে সড়কটি ব্যবহার করেন এসব এলাকার মানুষ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অফিস (এলজিইডি) জানিয়েছে, কৃষকের চাষাবাদ এবং তিন উপজেলার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজলভ্য করতে বিলের বুক চিরে ২০০৯ সালে ১৪ কিলোমিটার ডুব সড়ক নির্মাণ করা হয়। সড়কটির গুরুদাসপুর উপজেলা অংশে ৭ কিলোমিটার ও তাড়াশ উপজেলা অংশে রয়েছে ৭ কিলোমিটার। আর তাড়াশের কুন্দইল থেকে অন্য একটি সড়ক বয়ে গেছে সিংড়া উপজেলা অভিমুখে। বর্ষায় সড়কটি পানিতে তলিয়ে যায়। তবে শুষ্ক মওসুমে এই সড়কে চলাচল বাড়ে উল্লেখযোগ্য হারে। ফলে সড়কটি ১৪ বছরের ব্যবধানে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সময়ের সাথে সাথে সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেও এই দীর্ঘ সময়ে সংস্কার বা পুনর্নির্মাণে উদ্যোগ নেয়নি এলজিইডি।
স্থানীয় কলেজ শিক্ষক জালাল উদ্দিন, প্রধান শিক্ষক আকলিমা আখতার ইত্তেফাককে বলেন, ১৪ কিলোমিটারের এই সড়ক ঘেঁষে দুটি সাইক্লোন সেল্টার কাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি বাজার, কয়েকটি কবরস্থান, ঈদগাহর মতো জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাছাড়া চলনবিলের ফসলের খেতের চিরে সড়কটি বয়ে যাওয়ায় দৃষ্টি নন্দন এই সড়কে আসে পর্যটকও। সবমিলিয়ে ভাঙ্গাচোড়া এই সড়ক বয়েই ঝুঁকি নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে দুর্ভোগের পাশিপাশি রয়েছে দুর্ঘটনার শঙ্কাও। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করার দাবি তাদের।
এই অঞ্চলের আব্দুস সামাদ, আলী হোসেন মণ্ডল, গফুর সরকারসহ অন্তত ১৫জন কৃষক তাদের দুর্ভোগের কথা বলেন। তারা জানান, সড়কটি নির্মাণের পর তারা সহজেই চাষাবাদ এবং উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারতেন। সড়কটি জরাজীর্ণ হওয়ায় উৎপাদিত ফসল এবং পন্য পরিবহনে তারা ব্যপক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ চাষাবাদের জন্য সার-কীট নাশক এবং ফসল পরিবহনে বর্তমানে আধুনিক পরিবহন বাদ দিয়ে গরু-মহিষের গাড়ির ওপর ভর করতে হচ্ছে। এতে ফসল উৎপাদনে সময় এবং ব্যায় বাড়ছে।
খুবজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম দোলন বলেন, সড়কটির কারণে বিলশা, খুবজিপুর বাজারের গুরুত্ব বেড়েছে অনেক। বিলপাড়ের মানুষ এই সড়ক বয়েই চলাচল করেন। সড়কটির বেহাল পরিস্তিতির কথা তিনি নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় এলজিইডির প্রকৌশলীকে জানিয়েছেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা প্রকৌশলী মিলন মিয়া বলেন, সড়কটি মেরামতের পাককলন তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলেই সংস্কার কাজটি শুরু করতে পারবেন তিনি।