অষ্টম থেকে দশম। এই তিনটি শ্রেণির শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। মূলত বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে এসব ছাত্রীরা এখন সংসার ধর্ম নিয়ে ব্যস্ত। গত চার বছরে একটি বিদ্যালয়ের অন্তত ১০৬ ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।
সবশেষ চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এসএসসি) অনুপস্থিত রয়েছে ১০ ছাত্রী। নাটোরের গুরুদাসপুরের ধানুড়া বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা প্রতিবছরই এভাবে বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে। ফলে বিদ্যালয়টিতে ছাত্রী ঝরেপড়ার প্রবণতা বেড়েছে। এখন শঙ্কা তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থী সংকটের।
অথচ পরিস্থিতি বিবেচনায় ছাত্রী উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ২০১৭ সাল থেকে নিজস্ব পরিবহনসেবা চালুর পাশাপাশি ২০০০ সাল থেকে ‘মিড ডে মিল’ কর্মসুচী চালু করা হয়। বর্তমানে পরিবহন ব্যবস্থা চালু থাকলেও আর্থিক টানাপোড়েনে গেল জানুয়ারি থেকে মিডডে মিল বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যালয়টির পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ২০৩জন ছাত্রী ষষ্ট শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এসব ছাত্রীদের মধ্যে অষ্টম শ্রেণিতে রেজিষ্ট্রেশনের পরই ৮০জন ছাত্রী বাল্যবিয়ে কারণে ঝরে পড়ে। এছাড়া ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৬জন এসএসসি পরক্ষার্থী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৫ সালে ২৫ ছাত্রী পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করলেও ১০জন শিক্ষার্থী চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেনি। অনুপস্থিত এসব ছাত্রীরা বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
চার বছারে ১০৬ ছাত্রীর বাল্যবিয়ের তথ্যটি নিশ্চিত করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর বলেন, ধানুড়া বালিকা বিদ্যালয়টি অজপাড়া গ্রামে অবস্থিত। বিদ্যালয়ের আশপাশের গ্রামের ছাত্রীদের অভিভাবকরা তুলনামূলক অভাবী এবং অজ্ঞ। ভালো কোনো পাত্র পেলেই তাদের অল্পবয়সী মেয়েদের গোপনে বিয়ে দেন। নানা পদক্ষেপ নিয়েও বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে পারছেন না তারা।
গাইনী ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সারমিন শাথি বলেন, বাল্যবিয়ের প্রধান কুফল হচ্ছে অল্পবয়সে মা হওয়া। অল্পবয়সে মা হতে গিয়ে জরায়ু ছিঁড়ে যাওয়াসহ জরায়ুতে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া ঝুঁকি নিয়ে মা হওয়ার পর অসচেতনায় অপুষ্টিতে ভুগে মা ও শিশু।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষপ্রধান শিক্ষকের ভাষ্যমতে, চাপিলা ইউনিয়নের ধানুড়া ছাড়াও চন্দ্রপুর, শ্যামপুর, পুঠিমারী ও ওয়াপদাবাজার গ্রামের মেয়েরা বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়া করে। যাতাযাতের সুবিধার্থে ২০১৭ সাল থেকে বিদ্যালয়ের খরচে নিজস্ব পরিবহন সেবাও চালু করা হয়। ছাত্রী উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ২০০০ সাল থেকে মিড ডে মিল চালু করা হয়। এজন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সপ্তাহে ১ কেজি চাল ও ২০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছিল। অবশিষ্ট খরচ শিক্ষকদের অনুদানের টাকায় মেটানো হতো। কিন্তু নানা কারণে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে দুপুরের খাবার বন্ধ রয়েছে।
প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর বলেন, বাল্যবিয়ে রোধে এলাকাভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ, অভিভাবকদের নিয়ে সচেতনতামূলক সমাবেশ করেও কোন কাজ হচ্ছেনা। রাতের অন্ধকারে বা দূরের স্বজনদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে অল্প বয়সী মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকরা। একারনে শিক্ষার্থী সংকটের শঙ্কায় ভূগছে বিদ্যালয়টি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিরর সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ জানান, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বাল্যবিয়ের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। বাল্যবিয়ে রোধে তিনি ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছেন। তাছাড়া মিড ডে মিল চালু রাখার উদ্যোগটি বিবেচনায় আনা হবে।