নওগাঁর বদলগাছীতে প্রশাসনের সাথে সেটেলমেন্ট করে বুক ফুলিয়ে দিনে ও রাতে সমান তালে ফসলি জমি ও পুকুরের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে মাটি খেকোরা। কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই তিনফসলি জমিতে পুকুর খনন, পুরাতন পুকুর সংস্কারের নামে অবৈধভাবে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির ব্যপারে প্রশাসনকে জানিয়ে ফল পাচ্ছে না উপজেলার সাধারণ জনগন।
মাটি পরিবহনে অবৈধ টাক্টর চলাচলে মাটি পড়ে নষ্ট হচ্ছে রাস্তা,রাতে গাড়ির শব্দে নির্ঘুম রাত্রি কাটছে অনেক পরিবারের এবং রাস্তায় পড়া মাটিতে তৈরি ধুলো ও কাঁদায় জনসাধারণের সমস্যা সৃষ্টি হলেও বালুমহাল, মাটি ব্যবস্থাপনা ও ভূমি আইন থাকলেও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দিনের চেয়ে রাতেই মাটিখেকুরা ফসলি জমি,পকুরের কাদামাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে আর এই মাটি নিয়ে যাবার সময় একদিকে গ্রামীন কাঁচা সড়ক ও পাকা সড়ক নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে টাক্টরের শব্দে সড়কের পাশের লোকজনের ঘুম হচ্ছে না।
অন্যদিকে রাস্তার মাটি পড়ে মাটির স্তরের ধুলোবালিতে সৃষ্ট বায়ুদূষণ ও রাস্তায় সৃষ্ট কাঁদায় পিছলে পড়ে দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে পথচারী।মাটি কাটা বন্ধের ব্যপারে ইউএনও, এসিল্যান্ডকে ফোন করেও বন্ধ হয় না।
আবার অনেক সময়তো ফোন ধরেন না। আর ধরলেও ঠিক আছে দেখছি বলে কেটে দেন।এদিকে অবৈধ ভাবে মাটি কাটা ও জনদূর্ভোগের বিষয়ে অভিযোগ দিলেও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না উপজেলা প্রশাসন।
জানাগেছে, আমন ধান কাটামাড়াইয়ের পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৌশলে শুরু হয়েছে পুকুর সংস্কার, ফসলি জমি উচু-নিচু সমান, ফসলি জমিতে পুকুর খনন নামে মাটির বিক্রির মহোৎসব চলছে।
এসব মাটি স্থানীয়দের কাছে বিক্রির পাশাপাশি বেশিরভাগ মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা কোনো মৌসুমেই থেমে নেই। মাটিখেকুরা বিভিন্ন কৌশলে উপজেলার বিভিন্ন খাল, পুকুর ও সহ ফসলি জমির উর্বর মাটি লুট করে ইট ভাটায় বিক্রি করে।
এতেই ক্ষান্ত নন, পুকুর গভীর করে মাটি ওঠানোর পর তারা নীচ থেকে বালুও উত্তোলন করছেন কোথাও কোথাও থেকে। এসব মাটি পরিবহনের কারণে ট্রাক্টর থেকে মাটি পাকা সড়কে পড়ে গিয়ে রাতের কুয়াশায় বা সামান্য পানিতে পিচ্ছিল হচ্ছে সড়ক। একারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন মোটরসাইকের আরোহীসহ পথচারীরা। আবার গ্রামীণ এই সড়কগুলোও নষ্ট হচ্ছে।
গতকাল ২২শে এপ্রিল সোমবার সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ কালে দেখা যায়, উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের গোয়ালভিটা গ্রামে ঐতিহাসিক পাহাড়পর যাওয়ার রাস্তার পাশেই দিনের
বেলায় এবং বদলগাছী সদর ইউনিয়নের আখিট্রি,আধাইপুর ইউনিয়নের আাধাইপর প্রেমতলিও ইন্দ্রশকনা, কোলা ইউনিয়নের সুতাহাটি,খামারআক্কেলপর,মথরাপর ইউনিয়নের থুপশহর, ভয়ালপুর, জালালপরে রাতের বেলায় অবৈধ এক্সেভেটর মিশন দিয়ে মাটি কেটে আশেপাশের ইটভাটায় বিক্রি করছে।
উপজেলার কোমারপুর গ্রামের মানিক ক্ষোভের সাথে বলেন,আমার গ্রামে ইদের ছুটির মধ্যে রাতের বেলায় পকুর থেকে টাক্টর দিযে মাটি ইট ভাটায় বিক্রি হচ্ছিল। রাতের বেলা টাক্টর চলাচলের শব্দে ঘুম হচ্ছিলো না এবং রাস্তায় মাটি কাঁদা হওয়ায় জনসাধারণ চলাচল করতে পারছিলো না বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল পড়ে গিয়েছিলো আমি নিজে ইউএনওকে মাটি কাটার ব্যাপারে ফোন করেছি কোন ব্যবস্থা হয় নি।
দুলাল নামে জানান,গত মাসে কোলা-পুখুরিয়া রাস্তার পাশে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে ইট ভাটায় মাটি বিক্রি করে। মাটি নিয়ে যাবার সময় রাস্তার উপর মাটি ফেলে ধুলা ও কাদায় এলাকার লোকের সমস্যা হলে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে জানালেও কোন ব্যবস্থা নেন নি।
ইন্দ্রশকনা গ্রামের তারিকুল বলেন, ইন্দ্রশুকনা গ্রামে পকুর সংস্কারের কাদামাটি রাস্তায় ফেলে জনদূর্ভোগ তৈরি করে বিষয়টি জানালে বন্ধ হয়নি। ইন্দ্র শুকনা ছাড়াও এখনও খামারআক্কেলপুর,সুতাহাটিতে রাতের বেলায় মাটি কাটছে।
এ দিকে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের প্রধান সড়কে মাটি ফেলে দুর্ভোগের কথা জানান কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী। তারা বলেন, পাশেই পুরাতুন পুকুর থেকে মাটি ইটভাটায় নিয়ে বিক্রি করে। ইটভাটায় মাটি নিয়ে যাবার সময় রাস্তায় কাদামাটি পড়ে রাস্তার বেহাল অবস্থা। বেশ কয়েকজন রাস্তায় সৃষ্ট কাদায় পড়েও গেছে আর ধুলোতে চুল সাদা হয়ে নাজেহাল পাহাড়পুরে আসা জনসাধারণ।
বদলগাছী সদরের দোকানি জামান বলেন, রাত হলেই মাটির গাড়ি চলাচলের হিরিক পড়ে। রাতে প্রশাসনের বাধা না থাকার সুযোগে মাটি ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে মাটি ইট ভাটায় বিক্রি করে। রাস্তাঘাট নষ্ট হলেও কেউ ব্যবস্থা নেই না।
রাতে মাটি কাটার ব্যপারে মাটি ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা যে কোন জমির মাটি বা পকুরের মাটি জমির মালিকের থেকে টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে ব্যবসা করি। আর সব মাটিই ইটভাটায় ১হাজার থেকে ৯০০টাকায় বিক্রি করি। আর ব্যবসা করতে গেলে ভূমি অফিস, রাজনৈতিক ব্যক্তি সহ কিছু সাংবাদিকদের ম্যানেজ করেই চলতে হয়।
নাম প্রকাশে আধাইপর ইউপির এক মাটি ব্যবসায়ী বলেন, বেশিরভাগ মাটি ইটভাটায় বিক্রি করি। যেখানে মাটি ক্রয় করি সেখানের মসজিদ, মন্দিরে কিছু টাকা বা ইটের চুক্তি করি। গ্রামবাসী ঝামেলা করে কিছুই করতে পারে না। বেশির ভাগ সময় গ্রামবাসী মিডিয়াকে জানাই দু,চার জন ছাড়া সবাই ম্যানেজ হয়।
আর কেউ উপজেলা ভূমি অফিসে অভিযোগ দিলে যদি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের লোকজন দিনের বেলায় এসে বন্ধ করে।পরে তাদের ম্যানেজ করেই দিনে বা রাতে আবার চালু করি। এখন রাতেই বেশি নিরাপদ। বর্তমানে দিনের বেলায় মাটি কেঁটে বিক্রি করলে একটু ঝামেলা হচ্ছে তাই পরামর্শ করেই রাতে মাটি কাটছি। কারণ রাতে ঝামেলা নেই।
অনুমতি ছাড়া পুকুর খনন ও মাটি ইটভাটায় বিক্রি এবং জনদূর্ভোগের ব্যপারে উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার আতিয়া খাতুন বলেন, আজকে যদি হয় আমাকে জানান ব্যবস্থা নিচ্ছি।
পুকুরের মাটি ইটভাটায় বিক্রি ও জনদূর্ভোগের ব্যপারে জানালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইশরাত জাহান ছনি বলেন, কোথায় হচ্ছে জানান আমি দেখছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, মাটি কাটা বন্ধে ইউএনও,এসিল্যান্ডকে ফোন দিবেন। সব জায়গাতে মাটি কাটা হচ্ছে। রাতে এসিল্যান্ড, ইউএনওকে ফোন না দিয়ে রাতে কাটলে থানার ওসিকে ফোন দিবেন। সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা বলেন।