উল্লাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মোঃ আজাদ হোসেনের উপরে হামলার ঘটনায় উল্লাপাড়া মডেল থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা দেওয়া হয়েছে।
আজাদ হোসেনের ভাই উল্লাপাড়া পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে জামায়াত কর্মী হাফিজুর রহমানকে প্রধান আসামী করে মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতে মামলা দায়ের করেন।
এদিকে গতকাল এই মামলার প্রধান আসামী হাফিজুর রহমানকে সেনা হেফাজতে নেবার পর রাতে তাকে থানায় সোপর্দ করা হয়। সেই সঙ্গে হাফিজকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন উল্লাপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রাকিবুল হাসান।
উপজেলা বিএনপি আজাদের উপরে হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার উল্লাপাড়া পৌর শহরে মানববন্ধন কর্মসূচি ও সংবাদ সম্মেলনের ঘোষনা দিয়েছেন। পৌর বাস ট্রার্মিনালের ইজারাকে কেন্দ্র করে মূলত এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে মনে করছে জামায়াত।
শনিবার আজাদের উপরে অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনসমুহের পক্ষ থেকে পৌর শহরে প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। মিছিলটি উপজেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে শহিদ মিনার চত্বরে শেষ হয়।
এখানে উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহাবের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখনে, বিএনপি সমর্থক সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান জ্যোতি, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি কে এম শরফউদ্দিন মঞ্জু, সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বাবলু, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক, উল্লাপাড়া উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম মোস্তফা, সদস্য সচিব নিকসন কুমার আমীন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আলামিন হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আরিফ, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি রিয়াশাত করিম নয়ন প্রমুখ।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা অবিলম্বে জামায়াত কর্মীদের এই সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। এই সভা থেকে রোববার উল্লাপাড়ায় মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনের ঘোষনা দেওয়া হয়।
শুক্রবার উক্ত বিএনপি নেতা আজাদ হোসেন জুম্মার নামাজ পড়ে বাড়ির ফেরার সময় উল্লাপাড়া মডেল থানার গেটের সামনে ৫/৬ জন যুবক আজাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। তারা আজাদের মাথায় ও শরীরে হাতুরি এবং দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যায়। এতে গুরুতর আহত হন আজাদ। তাকে প্রথমে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এখানে তার অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে ঢাকায় স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। তার মাথার খুলি ভেঙ্গে গেছে। বর্তমানে তিনি স্থিতিশীল আছেন বলে জানান বিএনপি নেতারা। হামলাকারীরা জামায়াত কর্মী বলে অভিযোগ করে বিএনপি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী উল্লাপাড়া উপজেলা শাখার আমীর অধ্যাপক মোঃ শাহজাহান আলী শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে বিএনপি নেতা আজাদের হোসেনের উপর হামলার নিন্দা জ্ঞাপন করেন।
তিনি বলেন, উল্লাপাড়া বাস ট্রার্মিনালের ইজারাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট এ ঘটনা একেবারেই ব্যক্তি পর্যায়ের। এতে তার দলের একজন কর্মী জড়িত আছেন। তবে এর সঙ্গে জামায়াতের দলীয় কোন সম্পৃক্ততা নেই। ইতোমধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কর্মী হাফিজকে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে উল্লাপাড়া থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তিনি উল্লাপাড়ায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে জামায়াত ও বিএনপি নেতা কর্মীদের ধৈর্যধারণ করে সহযোগিতার অনুরোধ জানান।
এদিকে উল্লাপাড়া পৌর জামায়াতের আমীর আব্দুল করিম কহিল অভিযোগ করেন, গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর আজাদ ও তার লোকজন অবৈধভাবে বাস ট্রার্মিনালে অর্থ আদায় করে আসছিলেন। এবার নতুন বাংলা বছরে তারা ২৮ লাখ টাকা দিয়ে পৌর সভা থেকে ট্রার্মিনালের ইজারা নিয়েছেন এবং তারা নিয়ম মাফিক টোল আদায় করে থাকেন। কিন্তু আজাদ তার দলবল নিয়ে অবৈধভাবে বাধার সৃষ্টি করেন। এ নিয়ে গোলযোগ বাধে। আর এই গোলযোগের জের ধরেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন তিনি।
তবে এ ব্যাপারে আজাদ হোসেনের ভাই পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক আব্দুল করিমের বক্তব্যকে মিথা বলে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রকৃত পক্ষে পৌর বাস ট্রার্মিনালের বাস ট্রাক মালিক সমিতির অফিসে শহীদ জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি নামিয়ে ফেলা হয়েছে। সেই সাথে ইজারা নিয়ে ইজারাদাররা অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রতিবাদ করায় ইজারাদারদের সঙ্গে তাদের গোলাযোগ বাধে। তারা ট্রার্মিনালে কোন অর্থ আদায়ের সঙ্গে জড়িত না।
উল্লাপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ রাকিবুল হাসান জানান, এ ব্যাপারে আজাদ হোসেনের ভাই আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে জামায়াত কর্মী হাফিজসহ ১৪জনকে আসামী করে শুক্রবার রাতেই উল্লাপাড়া থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেছেন। সেনাবাহিনীর হেফাজতে নেওয়া প্রধান আসামী হাফিজকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার সিরাজগঞ্জ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। ওসি গ্রেপ্তারের স্বার্থে অপর আসামীদের নাম বলতে চাননি। তবে তাদেরকে ধরার ব্যাপক চেষ্টা চলছে। বর্তমানে উল্লাপাড়ার পরিস্থিতি শান্তি রয়েছে উল্লেখ করেন ওসি।