১৩ এপ্রিল, ২০২৫

১০ বছরের গবেষণায় দেশে স্ট্রবেরির নতুন জাত ‘ফ্রিডম-২৪’ উদ্ভাবন

১০ বছরের গবেষণায় দেশে স্ট্রবেরির নতুন জাত ‘ফ্রিডম-২৪’ উদ্ভাবন

দেশে স্ট্রবেরির নতুন একটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। নতুন এই জাতটির নাম ‘ফিডম-২৪’। জাপানের ‘নিওহো’ জাতের সাথে আমেরিকান ‘ফেস্টিভ্যাল’ জাতের সংকরায়ণের মাধ্যমে স্ট্রবেরির এই জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এটি চাষের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী।

নতুন জাত উদ্ভাবনে যে দুটি জাতের সংকরায়ণ করা হয়েছে-সেই দুটি জাতের আলাদা আলাদা আকার, স্বাদ-গন্ধ রয়েছে। মূলত জাপানি নিওহো জাতটি খুবই ছোট, সুগন্ধি এবং মিষ্টি। আর আমেরিকান জাতটি আকারে বড় কিন্তু বেশি মিষ্টি নয়। পৃথক পৃথক বৈশিষ্টের দুটি জাতের সমন্বয়ে দেশে এই প্রথম স্ট্রবেরির নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এম মনজুর হোসেন।

এই উদ্ভাবক বলেন, স্ট্রবেরির নতুন এই জাতটি উদ্ভাবনে তার ১০ বছরের গবেষণা, শ্রম-ঘাম জড়িত। এই এক দশকে তিনি চারা উৎপাদন, নির্বাচন, পরীক্ষামূলক চাষ, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যাচাই করেছেন। সফল হয়েছেন ২০২৪ সালে এসে। একই বছর গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে স্ট্রবেরির উদ্ভাবিত জাতের নাম করণ করেছেন ‘ফ্রিডম-২৪’। 

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, স্ট্রবেরির বাণিজ্যিক চাষ বাংলাদেশ ছিল না। এটি মূলত শীতপ্রধান দেশের ফল। বিদেশি এই ফলটির বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয় ২০০৭ সালে। আবহাওয়া জনিত নানা প্রতিকূলতার পরও দেশে স্ট্রবেরি চাষ এখন একটি নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে। 

চাষিরা বলছেন, দক্ষ চাষিরা স্ট্রবেরির সফল চাষ করছেন। এর মাধ্যমে স্ট্রবেরি বাংলাদেশের কৃষিতে উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে লাভজনক হারে জায়গা করে নিয়েছে। তবে স্ট্রবেরি চাষ সম্প্রসারণ নিয়ে চাষীরা বলছেন- মানসম্মত চারা এবং আধুনিক জাতের স্ট্রবেরির স্বল্পতার কারণে দেশে এর চাষ ব্যপক হারে করা সম্ভব হচ্ছে না।

স্ট্রবেরির নতুন জাত উদ্ভাবনে গবেষণা
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, অধ্যাপক এম মনজুর হোসেন স্ট্রবেরির যে আধুনিক জাতটি উদ্ভাবন করেছেন তা-রাজশাহীতে অবস্থিত আকাফুজি অ্যাগ্রো টেকনোলজিস গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে। সংকরায়িত অতি ক্ষুদ্র হাইব্রিড বীজ থেকে চারা উৎপাদন, নির্বাচন, পরীক্ষামূলক চাষ, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যাচাইকরণ এবং সবশেষে বাণিজ্যিকভাবে চাষের উপযোগিতা পরীক্ষায় সময় লেগেছে ১০ বছর। স্ট্রবেরির আধুনিক এই জাতটি আগাম এবং উচ্চফলনশীল। আকারে বড়, দেখতে অনিন্দ্যসুন্দর, সুগন্ধযুক্ত, সুমিষ্ট। ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চের শেষ পর্যন্ত এই ফল উৎপাদন করা যায়। যথেষ্ট শক্ত হওয়ায় এই ফল দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিবহন ও বিপণন করা সম্ভব। 

গবেষণা সূত্রে জানিয়েছে, স্ট্রবেরির নতুন এই জাতটির রোপণকাল অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর। রোপনের পর ফল উৎপাদন শুরু হয় ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২০ ডিম্বেরের মধ্যে। ফলের পরিপক্বতা এবং উৎপাদনকাল শুরু হয় ১৫ ডিসেম্বর থেকে মার্চ ৩১ পর্যন্ত। নতুন জাতের এই স্ট্রবেরি ফলটির রঙ উজ্জ্বল লাল। এর গড় ওজন ৫০ থেকে ৭০ গ্রাম। প্রতি বিঘায় এর ফলন হবে ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ দশমিক ৫ টন পর্যন্ত। ফলটি সংরক্ষণে সময় ৩ দিন। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় এটি ৭ দিন রাখা যেতে পারে। এটির মিষ্টতার পরিমাপের একক ১২-১৪ ব্রিক্স।

স্ট্রবেরির নতুন জাতের উদ্ভাবক এম মনজুর হোসেন জানান, নতুন জাতের স্ট্রবেরি রপ্তানিযোগ্য পণ্য হবে। ইতিমধ্যে বিদেশ থেকে তার এই স্ট্রবেরি আমদানির ব্যাপারে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে রাজশাহীর পবা উপজেলার মাসকাটাদিঘি এলাকার স্ট্রবেরিচাষি সাইদুর রহমান বলেন, তারা আমেরিকান ফেস্টিভ্যাল জাত চাষ করেন। তবে নতুন এই জাতটি আকারে ফেস্টিভ্যালের চেয়ে অনেক বড় হওয়ায় তিনি আগামী মওসুমে নতুন এই জাতটি চাষ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

অধ্যাপক এম মনজুর হোসেন, এবার তিনি রাজশাহী নগরের চকপাড়া মহল্লায় ১২ কাঠা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে নিজের উদ্ভাবিত স্ট্রবেরি চাষ করেছেন। ১২ কাঠায় তার সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ পড়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। উৎপাতিদ স্ট্রবেরি নগদে বিক্রি করেছেন ৬ লাখ টাকার বেশি।