৮ মার্চ, ২০২৫

তায়কোয়ানডো ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল রানার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

 তায়কোয়ানডো ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল রানার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

বাংলাদেশ তায়কোয়ানডো ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম রানার বিরুদ্ধে একের পর এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠে আসছে। দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছায়াতলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়  ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নিয়ে তিনি ফেডারেশনকে ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি জানা গেছে, স্বাক্ষর জালিয়াতি, অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, মানি লন্ডারিং ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থার লোগোর অবৈধ ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি দেশের ক্রীড়াঙ্গনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন।

১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের স্মারকে তায়কোয়ানদো ফেডারেশনের সভাপতি (ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল) কে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর পরই ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর কুক্কিয়ন (Kukkiwon, Korea) -এ মাহমুদুল ইসলাম রানার পাঠানো এক চিঠিতে ফেডারেশনের অব্যাহতি পাওয়া সভাপতির স্বাক্ষর দেওয়া এক চিঠি উঠে এসেছে- যা প্রমান করে মাহমুদুল ইসলাম রানার পাঠানো চিঠিতে  থাকা সভাপতির স্বাক্ষর জালিয়াতি হয়েছে।

এই স্বাক্ষর জালিয়াতি চিঠি বাংলাদেশ তায়কোয়ানডো ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম রানা নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য বিকেএসপি সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা প্রশাসনের কাছেও পাঠান। আইনজীবীরা বলছেন, এটি বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪২০ (প্রতারণা) ও ৪৬৮ (স্বাক্ষর জালিয়াতি) ধারায় ফৌজদারি অপরাধ।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ফেডারেশনের আর্থিক লেনদেনের কোনো স্বচ্ছতা নেই। ব্লাকবেল্ট ড্যান সার্টিফিকেট প্রদান, দেশীয় ১ দিনের সাজানো প্রতিযোগীতা ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা নামে বিপুল অর্থ আদায় করা হলেও তা ফেডারেশনের কাজে ব্যবহৃত হয়নি। এছাড়াও সরকারি অনুদান ও স্পন্সর থেকে পাওয়া অর্থের সঠিক কোন হিসাব নেই। ব্যক্তিগত বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য ফেডারেশনের তহবিল ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এই রানার বিরুদ্ধে।

তদন্তে আরও দেখা গেছে, মাহমুদুল ইসলাম রানা নিজের ফেসবুক প্রোফাইল, ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশ্ব তায়কোয়ানডো (WTF), কুক্কিয়ন (Kukkiwon), অলিম্পিক কমিটি (IOC), এশিয়ান তায়কোয়ানডো ইউনিয়ন (ATU)-এর লোগো অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করেছেন।

তিনি নিজেকে "ONLY AUTHORIZED HEAD under WTF & KUKKIWON" হিসেবে দাবি করছেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এমনকি নিজেকে "The Father of Taekwondo in Bangladesh" হিসেবে প্রচার করেছেন, যা কোনো স্বীকৃত সংস্থার স্বীকৃতি পায়নি ও সাউথ এশিয়ান তায়কোয়ানডো ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও ভুয়া পরিচয় দিয়েছেন। বিশ্ব তায়কোয়ানডো (WTF) ও কুক্কিয়ন (Kukkiwon) সূত্র জানিয়েছে, রানার এসব দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং সংস্থাগুলো তার কোনো অনুমোদন দেয়নি।

ফেডারেশনের  সাবেক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২৮ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকেও রানা তায়কোয়ানডোর উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখেননি। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে তায়কোয়ানডোর প্রসার ঘটানোর কার্যক্রম নেই, নারীদের আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণের তেমন কোন ব্যবস্থাই করা হয়নি এবং আন্তর্জাতিক মানের কোচ ও খেলোয়াড় তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যর্থ রানা।

তিনি আরও জানান, রানার ফেডারেশনের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও ক্ষমতার অপব্যবহার বিষয়ে,নিজ মন মত গঠনতন্ত্র গঠনের মাধ্যমে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছেন। তিনি একজন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ফেডারেশন পরিচালনার পরিবর্তে নিজের প্রচারে ব্যস্ত , এমনকি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে অব্যাহতভাবে পুরনো কমিটিকে বহাল রেখেছেন।

এই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন (BOA), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে।

ক্রীড়াবিদ, কোচ ও সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন:
ফেডারেশনের সব অনিয়মের নিরীক্ষা ও তদন্ত করা হোক, স্বাক্ষর জালিয়াতি, প্রতারণা ও দুর্নীতির দায়ে মাহমুদুল ইসলাম রানার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক,ফেডারেশনের বর্তমান নেতৃত্ব পুনর্গঠন করে স্বচ্ছ ও দক্ষ ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়া হোক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে রানার অপকর্মের তথ্য পৌঁছে দিয়ে তার ভুয়া পরিচয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনের স্বচ্ছতা ও উন্নয়নের স্বার্থে দ্রুত এই অনিয়মের বিচার দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। তদন্ত হলে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।