২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ভুল রক্ত প্রয়োগে গর্ভের শিশু মৃত্যুর ঘটনায় তিনজন গ্রেপ্তার

ভুল রক্ত প্রয়োগে গর্ভের শিশু মৃত্যুর ঘটনায় তিনজন গ্রেপ্তার

অন্তঃসত্ত্বার শরীরে ভুল রক্ত প্রয়োগে গর্ভের শিশু মৃত্যুর ঘটনায় গুরুদাসপুরের ‘আলপনা ক্লিনিকে’র মালিকসহ তিনসহদরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে চাঁচকৈড় বাজার থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে বিকালে আদালতের মাধ্যমে নাটোর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। 

ভুক্তভোগি অন্তঃসত্ত্বা সাথী খাতুনের (১৮) স্বামী খায়রুল ইসলাম বাদি হয়ে ক্লিনিকের পরিচালক আলাল উদ্দিন ও তার সহদর ভাই সরোয়ার হোসেন এবং রাশেদুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে গত বছরের সেপ্টেম্বরে নাটোরের গুরুদাসপুর আমলী আদালতে একটি পিটিশন দায়ের করেন।

গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. গোলাম সরওয়ার হোসেন বলেন, গুরুদাসপুর থানায় মামলা রজু এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১৭ ফেব্রুয়ারি আমলী আদালত নির্দেশ দেন। আদালতের ওই নির্দেশনার ভিত্তিতে শনিবার সকালে থানায় মামলা রজু করে দুপুরেই আসামীদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে।

নিহত নবজাতকের পিতা মামলার বাদি খায়রুল ইসলাম বলেন, তার স্ত্রী সাথী খাতুনকে গুরুদাসপুরের আলপনা ক্লিনিকে ভর্তি করিয়েছিলেন। সেখানে রক্তের গ্রুপ ভুল নির্ণয় করে ‘বি পজেটিভের’ স্থলে ‘এ পজেটিভ’ এক ব্যাগ রক্ত প্রয়োগ করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। পাশ^প্রতিক্রিয়ায় নবজাতকটি গর্ভেই মারা যায়। সেসময় গুরুদাসপুরের হাজেরা ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে গর্ভের মৃত শিশুকে বের করা হলেও জীবন সংকটে পড়েন তার স্ত্রী।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ভুক্তভোগি সাথী খাতুন গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের সাবগাড়ি গ্রামের আব্দুস সালাম মণ্ডলের মেয়ে। সাথীর শ্বশুর বাড়ি ফরিদপুরে। অন্তসত্তা হওয়ার পর তিনি পিতার বাড়ি গুরুদাসপুরেই ছিলেন। সেসময় রক্তশূণ্যতা দেখা দেওয়ায় গত বছরের ২২ সেপ্টম্বর সকালে গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় বাজারের নিউ আলপনা ক্লিনিকে অন্তঃসত্ত্বা সাথীকে ভর্তি করে পরিবারের লোকজন। সেখানে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের পর সাথীর শরীরে ভুল রক্ত প্রবেশের পরপরই শ্বাসকষ্ট এবং শরীরজুড়ে লাল চাকার মতো হয়ে যায়। একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় গর্ভের শিশুর নড়াচড়া।

পরিস্থিতি খারাপ হলে পরের দিন ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে সাথী খাতুনকে গুরুদাসপুর পৌর সদরের হাজেরা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে নতুন করে পরীক্ষার পর জানতে পারেন শরীরে ভুল রক্ত প্রয়োগ করায় গর্ভের সন্তান মারা গেছে। ওই দিন সিজারিয়ানের মাধ্যমে মৃত নবজাতকটিকে বের করে ময়না তদন্ত করা হয়। সাথীর অবস্থার আরো অবনতি হলে ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে কোনোমতে প্রাণ নিয়ে স্বামীর ঘরে ফেরেন সাথী খাতুন।

সেসময় হাসপাতালের বেডে শুয়ে সাথী খাতুন বলেন, আলপনা ক্লিনিকে রক্ত গ্রহণের পরপরই তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। দুই বছরের সংসারে এটিই ছিল তার প্রথম সন্তান। অথচ ভুল রক্ত প্রয়োগে তার গর্ভের সন্তানটি হত্যা করা হয়েছে। তিনিও জীবন সংকটে পড়েছেন। তিনি এর সঙ্গে জড়িতদের কঠিন শাস্তির দাবি করেন।

মামলার বাদী খায়রুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হওয়ায় তিনি সন্তান হত্যার ঘটনায় বিচার পাওয়া নিয়ে আশ^স্ত হয়েছেন তিনি।

এদিকে এই ঘটনায় গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর ‘ভুল রক্ত প্রয়োগে গর্ভের শিশুর মৃত্যু, মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করেন নাটোরের সিভিল সার্জন।

তদন্তে সতত্যা পাওয়ার পর ক্লিনিকটি সিলগালা করা হয়। নিজেদের বিএনপি নেতা দাবি করে ক্লিনিক মালিক তিন সহদর ভাই অনুমোদনহীন ওই ক্লিনিকটি সিলগালার তালা ভেঙে আবারো চালু করেন। নানা অব্যবস্থাপনার কারণে ২০২২ সালেও এই ক্লিনিকটি সিলগালা করা হয়েছিল।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমল্পেক্সের স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এএসএম আলমাস বলেন, সিলগালা খুলে ক্লিনিক চালু করার নির্দেশনা নেই। আইন অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।