নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলাতে দিনদিন লাইন,লোগো ও পারসিং পদ্ধতিতে ধান চাষের চারা রোপনে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে। লাগসই কৃষির আধুনিক এই পদ্ধতিতে ধান চাষে রোগবালাই কম ও অধিক ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা এবং কম খরচে বাড়তি উৎপাদন হওয়ায় সহজেই এ পদ্ধতি গ্রহণ করছে উপজেলার কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, লোগো পদ্ধতি ধান চাষের একটি আধুনিক প্রযুক্তি। লাইন,লোগো ও পার্চিং পদ্ধতিতে ধান চাষের ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব উপায়ে ধানের ভালো ফলন পাওয়া যায়। ফলন বাড়ানো এবং চাষের খরচ কমানোর জন্য লাগসই আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহারের বিকল্প নেই। ধান চাষের জন্য আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি লোগো পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
এব্যাপারে আরও জানায়, লোগো পদ্ধতি ধান চাষের একটি আধুনিক পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে প্রতি ১০ সারির মাঝে ১২ থেকে ১৬ ইঞ্চি ফাঁকা দিতে হবে অর্থাৎ একটি লাইনে ধানের চারা লাগানো বাদ রেখে অন্য লাইনে চারা লাগাতে হবে। এভাবে পুরো জমিতে ধানের চারা রোপণ শেষ করতে হবে।
ধান গাছ বেড়ে ওঠার পর ঘাসফড়িং ও মাজরা পোকা ধানের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। সাধারণত ছায়াযুক্ত স্থানে এ ধরনের পোকা বেশি হয়। লোগো পদ্ধতিতে ধান চাষ করা হলে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস নিশ্চিত হলে পোকার আক্রমণ কমে। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে আগাছা পরিষ্কার, সার প্রয়োগ ইত্যাদি পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়, আগাছা পরিষ্কার করে লোগোর লাইনে পুতেঁ রাখলে জৈব সার হয়।
সর্বোপরি লোগো পদ্ধতিতে ধান চাষ করলে ধানের ফলন বাড়ে। সঠিকভাবে চাষ করলে ধানের ফলন বিঘা প্রতি ৫ মণ বাড়তে পারে। তাছাড়া পোকামাকড় কম হওয়ায় কীটনাশক ব্যবহার কম করতে হয়। এতে লাভবান হওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ১১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। লাইন ও লোগো পদ্ধতিতে ধান চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়াতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিভিন্ন জাতের ধানের ৬৯ টি প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে এবং উপজেলায় আনুঃ ২৫০হেক্টর জমিতে লাইন, লগো ও পাসিং পদ্ধতি ধানচাষ করা হচ্ছে।
এবার উপজেলায় রোপন হচ্ছে উন্নত ফলনশীল ব্রিধান-৮৯,৯২,১০২,১০৪, ১০৫, ৫৮,৬৩,৮১,৮৪, ২৮,২৯,ও জিরাশাইল, গোল্ডেন আতপ, কাঠারি জাতের ধান।
বদলগাছী সদর ইউনিয়নের কৃষক আয়নাল বলেন,লাইন পদ্ধতিতে ধান চাষ করলে ধানের ফলন বাড়ে। সঠিকভাবে চাষ করলে ধানের পরিচর্যা ও সার প্রয়োগ করা সহজ হয় যার কারণে ধানের ফলন বিঘা প্রতি ৫ মণ বাড়তে পারে। তাছাড়া পোকামাকড় কম হওয়ায় কীটনাশক ব্যবহার কম করতে হয়। এতে লাভবান হওয়া যায়।
বিলাসবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক আইজুল জানান,লোগো’ পদ্ধতি ধান চাষের নতুন একটি প্রযুক্তি। এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করলে পোকামাকড়ের আক্রমণ কমে যায়, আগাছা দমন হয় ও সঠিকভাবে সার প্রয়োগ করতে সহজ হয়। পাশাপাশি ধানের ফলনও বাড়ে বলে জানিয়েছে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে মিঠাপুর ইউনিয়নের হারুন বলেন,তার সেচ পাম্পের আওতায় প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এখানে ৪/৫টি কৃষক লাইন ও লোগো পদ্ধতিতে ধানের চারা রোপন করেছে।তারা লোগো পদ্ধতিতে রোপণ করার কারণে জমিগুলো খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। এই পদ্ধতিতে ধান রোপনে খরচ কম হয়েছে। আশা করছেন ভালো ফলন আসবে।
লাইনও লোগো পদ্ধতির ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার সাবাব ফারহান বলেন, লাইন,লোগো ও পার্চিং পদ্ধতি হলো আধুনিক কৃষি পদ্ধতি।উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে এলাকার কৃষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ,উঠান বৈঠক এবং মাঠ পর্যায়ে এ ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
যেমন ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে চারা রোপন করা, জমিতে প্রচুরপরিমানে জৈব সার ব্যবহার করা,ধান লাইন (১৫-২০সেমি:দুরত্বে)রোপন করা, প্রতি বিঘা জমিতে ৫টি করে খুটি পুতিয়ে পাখি বসানোর ব্যবস্থা করা (পার্চিং পদ্ধতিতে) একটি লাইনের পরপর আর একটি লাইন গ্যাপ দিয়ে চারা রোপন করা।সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করার জন্য।
তিনি আরও বলেন, লাইন-লোগো পদ্ধতিতে ধান রোপণ করলে চারার প্রতিটি গোছায় অধিক কুশি ছড়ানোসহ ফসলের জমিতে প্রয়োজনীয় আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে। পোকা-মাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য সহজে পরিমিত মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ ও সারের ব্যবহার করা যায় এবং আন্ত:পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়। ফলে ধানের মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।