১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ছেলের লাশ দেখার পর মারা গেলেন বাবাও!

ছেলের লাশ দেখার পর মারা গেলেন বাবাও!

শেষ সম্বল আর বুকের ধন হারিয়ে বাড়ির উঠোনে ডুকরে কাঁদছেন শুলেনুর বিবি (৫০)। মাঝে মাঝে মূর্ছা যাচ্ছেন। প্রতিবেশিরা মাথায় পানি ঢালছেন। দিচ্ছেন শান্তনা। যে উঠোনে পড়ে তিনি কাঁদছেন-সেখানেই এক সঙ্গে স্বামী- সন্তানকে শেষ গোসল করিয়ে কাফনে মুড়িয়ে রাখা হয়।

গুলেনুর বিবি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন,  এখন কি করবেন তিনি। কি হবে নাতি নাতনি আর পূত্রবধুর। পরিবারের দুইজন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি এক সঙ্গে চিরবিদায় নেওয়ায় তাদের মাথার ওপর আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে।

শনিবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে ছেলে গোলাম রাব্বানীর (৩৫) মৃত্যুর খবর পাওয়ার একঘন্টা পর মারা গেছেন পিতা ছাবেদ আলীও (৫৮)। তাদের বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের দাদুয়া গ্রামে। গতকাল রবিবার দাদুয়া কবস্থানেই পিতা-পূত্রকে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, বৃদ্ধ ছাবেদ আলী পেশায় কৃষক ছিলেন। ছেলে গোলাম রাব্বানী একজন ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরে রক্ত স্বল্পতায় ভুগছিলেন রাব্বানী। শনিবার হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে শনিবার রাত ৮টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা ছাবেদ আলীও।

প্রতিবেশরাী জানান, রাত ১০টার দিকে ছেলের লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স বাড়ির উঠোনে এসে পৌঁছালে পাগলপ্রায় হয়ে পড়েন বাবা ছাবেদ। ছেলের লাশ দেখা মাত্রই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সেখানেই তিনিও মারা যান। তাদের এই মৃত্যুদেত গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।

নিহত রাব্বানীর স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, তাদের সংসারে শ্বাশুড়ি ছাড়াও সাত বছর বয়সি মেয়ে এবং চার বছরের ছেলে রয়েছে। একই সঙ্গে পরিবারের উপার্জনক্ষম দুই ব্যক্তিকে হারিয়ে তারা নির্বাক। সন্তান দুটিও বাপ-দাদার জন্য ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। এখন তাদের কি হবে!

ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন, শনিবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে হৃদয়বিদারক এই ঘটনাটি ঘটেছে। এতে পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তারা নিজেরাও শোকাহত হয়েছেন।