১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

শেষ বিকেলের মেয়ে...

শেষ বিকেলের মেয়ে...

সিংগাপুর যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট ভিসা সব রেডি। রাত ১০ টায় ফ্লাইট। আরাশ,ভাইয়া আর মা সাথে যাবে পুস্পিতার। এখন ভোর ৬ টা। ঘুম আরও আগেই ভেংগেছে পুস্পিতার। হঠাৎ করেই আজকের সকাল টাকে তার অন্য রকম সুন্দর লাগছে। কেবিনের জানালার পর্দা টা নিজেই সরিয়ে দেয়।

এক স্নিগ্ধ বাতাস এসে তার দীঘল কালো চুলের সাথে খেলা করতে থাকে। ভাইয়া জেগে ওঠে। মুখের সামনে সেই এলোমেলো চুলের কিছুটা উড়তে দেখে ভাইয়ার সামনে এক দেবী মূর্তির চেহারা ভেসে ওঠে। তার বোনের এই অপরুপ সৌন্দর্য এতোদিন কেন চোখে পড়েনি। এমন নিস্পাপ পুতুলের মত বোনকে সে কিছুতেই হারাতে পারবেনা।

এতো সকালে আরাশ ও চলে এসেছে। কেবিনের বাইরে যেতেই ভাইয়ার সাথে দেখা হয় আরাশের। পুস্পিতা কেমন আছে জিজ্ঞেস করতেই তাকে ভেতরে যেতে বলে। খোলা জানালার কাছে  সাদা রঙের পর্দার পাশে নীল রঙের জামা পড়া, এলোমেলো চুলের স্নিগ্ধ পুস্পিতাকে দেখে বুকের মাঝে মোচড় দিয়ে ওঠে তার। শুধু একটাই চাওয়া আমি শুধু তোমায় চাই পুস্পিতা। আমার সকল আরাধনার নির্যাস দিয়ে। শুধুই  তোমাকে। আর কিছু না। কাওকে না।

দুজনের চোখে চোখেই কথা হলো এ বেলায়। যে কথা বলার জন্য দরকার হয়না কোন শব্দের। কোন ভাষার। কিছু নীরবতা যখন বলে দেয় সমস্ত না বলা কথা। আজকের ভোর টা আরাশ পুস্পিতার নীরবতার প্রেমের। শব্দহীন আবেগের উপন্যাসের।

দুপুর এর দিকে মা বাবা কেবিনে চলে আসছে। হঠাৎ করেই পুস্পিতার শাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। কেবিন সিস্টার ডক্টর কে ফোন দিতেই চলে আসছে। হাই ফ্লো অক্সিজেন চলছে।স্যাচুরেশন ক্রমশই কমছে। মনিটরে পালস বিপিও কমে যাচ্ছে। ডোপামিন ডবিউটামিন সব স্টার্ট করা হয়েছে।

কিছুতেই কোন ইম্প্রুভমেন্ট নাই।শাসকষ্ট তীব্রভাবে বাড়ছে। সবাই তার পাশে। অসহায় দুটি চোখ অপলোক দৃস্টিতে তাকিয়ে আছে আরো কত গুলো নিদারুণ মুখের দিকে। কত কথা বলার ছিল সবাইকে।কত অচেনা পথ পাড়ি দেয়ার সপ্ন ছিল একসাথে। এক জীবনে তো কত সপ্নই পূরণ হয়না আমাদের।তাই বলে এতো অল্প বয়সে এতো বড় বিসর্জন।

ডক্টর, সিস্টার, বাবা,মা ভাইয়া,আরাশ,পুস্পিতা। সবার চোখে জল। বাবা মায়ের বুক ফাটা আর্তনাদে রুমের পরিবেশ ভারী। আরাশের ভালবাসায় বিদীর্ন হওয়া হৃদয় টা শুন্য। বুকের ভেতরে বাধ ভাংগা প্লাবনের শব্দ। এক নিঃচুপ রক্তক্ষরণ। মনিটরের উঁচুনিচু লাইনটা স্ট্রেইট হয়ে হয়ে যাছে। ০ ১ ২ ৩...........সব কিছু শেষ।  

সপ্নচারী দুটি হৃদয়ের ক্ষনজন্মা এক উপাক্ষ্যানের পরিসমাপ্তি। এমন জীবন ও মানুষের হয়?? আজ কাওকে শান্তনা দেয়ার কোন ভাষা নেই কারো। পুস্পিতা চলে গেছে না ফেরা ভুবনে। কাওকে কোন কিছু করার সুযোগ না দিয়েই।

চলবে..........
৪.৬.২২
রাজ