৩১ জানুয়ারি, ২০২৫

শেষ বিকেলের মেয়ে

শেষ বিকেলের মেয়ে

আজ অনেক সকালেই ঘুম ভেঙে গছে মেহেকের। বিছানা ছেড়ে উঠে জানালার আকাশী নীল আর সাদা রঙের পরদা টা সরাতেই হেমন্তের হিমেল হাওয়া এসে খোলা চুলে এক রাশ দোল খেয়ে গেল। হঠাত করেই মেহেক এর মনে হল বেঁচে থাকাটা সত্যি অনেক সুন্দর। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠতে হয়েছে তার। হসপিটাল এ আজ তার মর্নিং প্রেজেন্টেশন আছে।

তারাতারি ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নাসতা সেরে সে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। কিছুখন রাস্তার পাশে অপেক্ষার পর একটা রিকশা আসলো। তাকে দাঁড় করিয়ে মামা হসপিটাল চলেন বলেই উঠে পরে মেহেক।

মনে মনে ঠিক করছে প্রেজেন্টেশন শুরু করবে কিভাবে। হঠাত করেই রিকশা থেমে যায়। সামনে মোবাইল কোর্ট চলছে। এত সকালে আবার কিসের মোবাইল কোর্ট? মেহেক এর ভীষন রাগ হয়।এমনিতেই তাকে আজ সবার আগে যেতে হবে। এ কি জালা। ম্যাজিস্ট্রেট আর সময় পেলোনা? এখনি রাস্তা বন্ধ করে তাকে ভ্রাম্যমান আদালত বসাতে হবে? এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাত করে পেছন থেকে দ্রুত গতির এক মাইক্রোবাস এসে তার রিকশায় ধাক্কা দেয়।

কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই মেহেক পরে যায় রিকশা থেকে। রাস্তার মাঝে পড়ে চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে এক জোড়া মায়া ভরা চোখ এক পলক দেখেই জ্ঞান হারায় সে। তারপর যখন জ্ঞান ফিরে পায় তখন সে নিজেকে আবিষ্কার করে হাসপাতালের বেড এ।

চোখ খুলেই সে এখানে কিভাবে এলো সেটাই মনে করার চেষ্টা করছিল। বিছানার পাশে হসপিটাল এর ডিরেক্টর, তার ডিপারটমেন্ট এর সব ম্যাম,কলিগ সবাইকে দেখে রীতিমতো ভয় পেয়ে গেল সে। ডান হাতে দুইটা স্টিচ লেগেছে।মাথায় একটা বেন্ডেজ। সে এখন ভালো আছে।সবাই তাকে আশস্ত করল।

যাক বড় কিছু হয়নি ভেবে মনে মনে সৃষ্টিকরতার কাছে শুকরিয়া জানায় মেহেক।আজকের সেমিনার ও পোস্ট পোন করা হয়েছে। কি থেকে কি হয়ে গেল। সবার দিকে তাকিয়ে সবার কথা শুনতে শুনতে এসব ই ভাবতে থাকে সে।তার সব প্রিয় ম্যাডাম,ডিরেক্টর স্যার, সিনিওর, জুনিওর কলিগরা অনেক শান্তনা দিয়ে চলে যেতে থাকলো।

মেহেকের বাসায় ফোন করে জানানো হয়েছে। মা বাবা রওনা দিয়েছেন তাকে দেখতে। হঠাত করেই মেহেক রুমের এক করনারে আবিষ্কার করে এক জোড়া চোখ। জ্ঞান হারানোর আগে যে চোখ দুটো দেখে চোখ বন্ধ হয়েছিল তার। উনি ডিরেক্টর স্যার কে অনুরোধ করলেন রুমে কিছুক্ষন থাকার জন্য। 

তারপর সবাই রুম থেকে চলে যাওয়ার পর উনি এক অপরাধীর মত তার পাশে এসে জিজ্ঞেস করল আমি কি পাশের চেয়ার এ বসতে পারি? মেহেক এমনিতেই রেগে আছে। উনি আবার কে? আর কি বলার জন্য একা একা রুমে থেকে গেলেন? দেখে তো নিপাট ভদ্র লোক বলেই মনে হচ্ছে। ভদ্রতা দেখিয়েই মেহেক উনাকে বসতে বলে। এক পলক মেহেক এর দিকে তাকিয়ে তার পর মাথা নিচু করে বলে আই এম সরি। আমার জন্যই আজ আপনার এমন এক এক্সিডেন্ট হয়ে গেল।

আজ সকালে আসলে এক জরুরী প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট বসাতে হয়েছিল। এমন করে যে আপনার সাথে এটা হয়ে যাবে তার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। মাইক্রোবাস আর ড্রাইভার কে থানায় পাঠানো হয়েছে। আমি আরাশ আহমেদ। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট। এখানে নতুন পোষ্টিং হয়েছে।

(চলবে......)

২১.৯.২১

মুক্ত/আরআই