২৯ জানুয়ারি, ২০২৫

পাহাড়ি ময়নার সঙ্গে মুক্ত আকাশে ডানা মেলল ভুবন চিল

পাহাড়ি ময়নার সঙ্গে মুক্ত আকাশে ডানা মেলল ভুবন চিল

কথা বলা পাহাড়ি ময়নাটির সঙ্গে মুক্ত আকাশে ডানা মেলল একটি ভুবন চিলও। সাত মাস আগে একটি মুদি দোকান থেকে পাহাড়ি ময়না আর ১৫ দিন আগে আহত অবস্থায় ভুবন চিলটিকে উদ্ধার করা হয়েছিল। দুটি পাখিকেই গতকাল মঙ্গলবার অবমুক্ত করা হয়েছে। 

চলনবিলের পরিবেশকর্মী নাজমুল হাসান নাহিদ বলেন, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যানে যে পাখি দুটিকে অবমুক্ত করা হয়েছে, সেই পাখি দুটি নাটোর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। পাহাড়ি ময়নাটি নাটোরের সিংড়া উপজেলার বামিহাল গ্রামের একটি মুদি দোকানে ছিল।

সেখানকার দোকানি পাখিটিকে বিনোদনের জন্য রেখেছিলেন। দোকানে থাকায় পাখিটি উড়াউড়ি করতে পারেনি। তবে দোকানির শেখানো বুলিতে কথা বলতো পাহাড়ি ময়নাটি। ভুবন চিলটিকেও উদ্ধার করা হয়েছিল নাটোর সদর এলাকা থেকে। এক সঙ্গে দুটি পাখিকে  প্রকৃতিতে উড়তে দেখে বেশ আনন্দিত হয়েছেন তারা। 

দীর্ঘদিন পরিচর্যার পর পাখি দুটিকে অবমুক্ত করার সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এ এম সালেহ রেজা, রাজশাহী বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ) মো. রফিকুজ্জামান শাহ্, বন্য প্রাণী পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবির, ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার মো. সরোয়ার হোসেন খান, ফরেস্টার মো. গোলাম কবির ও জুনিয়র ওয়াইল্ড স্কাউট মানিক চন্দ্র দে উপস্থিত ছিলেন।

বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, সিংড়ার বামিহাল গ্রামের একটি মুদিদোকানি পাহাড়ি ময়নাটিকে নিজের কাছে রেখেছিলেন। সেসময় ওই মুদিদোকান থেকে চলনবিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সদস্যরা পাহাড়ি ময়নাটিকে উদ্ধার করেন। পরে রাজশাহী বন বিভাগের লোকজন গিয়ে পাখিটি উদ্ধার করলেও দোকানিকে পাননি। স্থানীয় লোকজনও ওই দোকানির পরিচয় বলতে রাজি হননি। একারণে বন বিভাগের পক্ষ থেকে ওই দোকানির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।

চলনবিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির এক সদস্য বলেন, দীর্ঘদিন আবদ্ধ থাকায় ময়না পাখিটির আচরণ গৃহপালিত পাখির মতো ছিল। পাখিটি উড়তে ভুলে যায়। কেবল দোকানির সাথে কথা বলতো।

বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির আরো বলেন, সাত মাস আগে ময়না পাখিটিকে উদ্ধার করার পর রাজশাহীর রেসকিউ সেন্টারে উড়তে শেখার মতো পরিবেশে ছেড়ে দিয়েছিলেন তারা। এরপর দীর্ঘ সাত মাস পাখিটির সাথে কেউ কথা বলেনি। এই সময়ের মধ্যে পাখিটি পুরোপুরিভাবে প্রকৃতিতে টিকে থাকার সক্ষমতা ফিরে পায়। একারণে বন বিভাগের পক্ষ থেকে পাখিটি অবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাখিটি এখন উড়তে শিখেছে। তবে ভুলে গেছে দোকানির শেখানো বুলি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এ এম সালেহ রেজা বলেন, ময়না পাখিটিকে ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যানের একটি উঁচু গাছের ডালে গিয়ে বসে। এসময় একটি ভুবন চিলও ওই উদ্যানে ছেড়ে দেওয়া হয়। ভুবন চিলটিকে প্রায় ১৫ দিন পরিচর্যার পর সুস্থ করে অবমুক্ত করা হয়েছে।