২৫ জানুয়ারি, ২০২৫

চলনবিলের গ্রামে এলো ‘আরচ্যারী’ খেলা

চলনবিলের গ্রামে এলো ‘আরচ্যারী’ খেলা

চলনবিলের প্রত্যন্ত গ্রাম খুবজীপুর। তীর ধনুকও যে খেলার সামগ্রী হয়—এটা জানতেন না এই গ্রামের মানুষ। তবে এবার প্রাচীণ সভ্যতার সেই তীর ধনুককে আধুনিক সভ্যতার ‘আরচ্যারী’ হিসেবে দেখলেন এখানকার নানা শ্রেণিপেশার শত শত মানুষ।

তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষ্যে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চলবিল অধ্যুষিত খুবজীপুরের অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ কমপ্লেক্সে শুক্রবার দিনভর আয়োজন করা হয়েছিল আরচ্যারী খেলার। সাথে ছিল বিদেশি খেলা সেপাক টাকরো। খেলা দেখতে সকাল থেকেই এই এলাকার মানুষ অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ কমপ্লেক্স মাঠে ভীড় জমিয়ে ছিলেন।

শুক্রবার সকালে খেলাটির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। তার সাথে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আরচ্যারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রাজীব উদ্দীন আহম্মেদ চপল, বাংলাদেশ সেপাক টাকরো এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক ঢালী, গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ প্রমূখ। খেলাটির আয়োজন করেছিল গুরুদাসপুর উপজেলা প্রশাসন।

গুরুদাসপুর (নাটোর). শুক্রবার সকালে খেলাটির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান।—ছবি মুক্ত প্রভাত


আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, সেপাক টাকরো খেলায় সাতক্ষীরা, নাটোর, নীলফামারী, রাজশাহী ও পাবনার প্রায় ২৫জন খেলোয়ার খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় আরচ্যারী দলের ১৬ জন খেলোয়ার দুটি দলে বিভক্ত হয়ে খেলায় অংশ নেন। এর আগে এখানে সেপাক টাকরো খেলা অনুষ্ঠিত হলেও এই অঞ্চলে আরচ্যারী খেলার শুরুটা এখান থেকেই। খেলাটি নিয়ে মানুষের কৌতহলের শেষ ছিলনা।

খুবজীপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আব্দুল্লাহ সরকার জানালেন, আরচ্যারী নামের কোনো খেলা আছে এটা তারা জানতেন না। গ্রামের কৃতি সন্তান স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমানের উদ্যোগে এবারই প্রথম খেলাটি দেখলেন। তাছাড়া কয়েক বছর আগে সেপাক টাকরো খেলার সাথে পরিচয় ঘটেছে তাদের। এখন এই এলাকার অনেক তরুণ-তরুণীই সেপাক টাকরো খেলছে।

খুবজীপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, একসময় চলনবিলাঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির লোকজন তীর ধনুকের ব্যহার করে বনে বাদারে শিয়াল, কচ্ছপ আহরণ করতেন। সেই তীর ধনুকও যে একটা খেলা এটা ভেবে অবাক হয়েছেন এখানকার সাধারণ মানুষ। তাও আবার তাদেরই স্কুল মাঠে খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে পুরো এলাকার মানুষ খুব আনন্দিত হয়েছেন। তাদেরও ছেলে মেয়ে এই আরচ্যারী খেলায় অংশ নিক এটাই প্রত্যাশা।

গুরুদাসপুরের ক্রীড়া সংগঠক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ক্রিকেট, ফুটবলের পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে নিয়োমিত সেপাক টাকরো খেলা হচ্ছে এই মাঠে। এখানকার ছেলেমেয়েরা জেলা বিভাগ পর্যায়েও সেপাক টাকরো খেলছেন। গুরুদাসপুর ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে এসব খেলয়ারদের পৃষ্টপোষকতা করা হচ্ছে। এখন থেকে আরচ্যারী খেলাও শুরু হলো। এই খেলা নিয়মিত আয়জনের দাবি তাদের।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ বলেন, চলনবিলের প্রত্যন্ত খুবজীপুরের মানুষের কাছে আরচ্যারী খেলাটি একে বারেই নতুন। আগামীতে আরচ্যারী নিয়ে জাতীয় পর্যায়ের খেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেবেন তারা।

বাংলাদেশ আরচ্যারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রাজীব উদ্দীন আহম্মেদ চপল বলেন, খুবজীপুরের অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ কমপ্লেক্সে যাদুঘর, হাসপাতাল, মসজিদ, প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ মাঝ খানে মাঠ। সেই মাঠে ছোট পরিসরে এবারই প্রথম আরচ্যারী খেলার আয়োজন করা হয়েছিল। আরচ্যারীর প্রতি খুবজীপুরের মানুষের অফুরন্ত আগ্রহ দেখে তিনি অর্ভিভূত। আগামীতে এখানে আরচ্যারী বড় পরিকল্পনা নেবেন তিনি।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, সব ধরণের পরিবর্তনেই তরুণদের বড় ভূমিকা থাকে। খেলাতেও তাই। আধুনিকায়নের যুগে তিনি চলনবিলেও আরচ্যারীর মতো খেলা ছড়িয়ে দিতে চান। যাতে এখানকার তরুণ-তরুণীরা জাতীয় পর্যায়ে আরচ্যারীতে অংশ নিতে পারেন তার ব্যবস্থাও করবেন তিনি।