ভারতের সঙ্গে আফগানিস্থানের তালেবান সরকারের সম্পর্ক বেশ গাঢ়ো হতে চলেছে। সম্পর্কে ব্যাপারে ভারতের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক উদ্যোগের বিশেষ অর্থ রয়েছে। ইঙ্গিত দেয় এই অঞ্চলে ভূ রাজনৈতিক বাস্তবতাকে ভারত যেভাবে দেখছে সেখানে একটা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে।
কাবুলের পতনের তিন বছরের বেশি সময় পর ভারতের এই সাম্প্রতিক পদক্ষেপ আফগানিস্তানের জন্য অনেক মঙ্গলজনক। গত সপ্তাহেই একটি ইঙ্গিত পাওয়া গেছে দুবাইয়ে ভারতের শীর্ষ কূটনৈতিক বিক্রম মিশ্রি তালেবানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকী সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
কাবুলের পতনের পর এই সাক্ষাৎকে দুই পক্ষের তরফে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ ভারতের।
গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছে। ওই বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্র ছিল চাবাহার বন্দর যা পাকিস্তানের করাচি বন্দরকে পাশ কাটানোর জন্য তৈরি করেছে ভারত।
এখন প্রশ্ন হল এই সাম্প্রতিক বৈঠকগুলো গুরুত্ব কতটা এর উত্তরে আমেরিকান থিংক ট্রাং উইলসন সেন্টারের মাইকেল বলেছেন, ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বৈধতা চেয়ে এসেছিল। দিল্লি আজকে তা দিয়ে দিয়েছে।
তালেবানের জন্য কূটনৈতিক বিজয় দারুণ একটা ব্যাপার। আফগানিস্তানের ক্ষমতায় চলে যাবার পর থেকে সে দেশের মানবাধিকার নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তালেবান সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পৃক্ততার ভারসাম্য বজায় রাখতে বিভিন্ন পন্থা নিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দেশ। উদাহরণস্বরূপ নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের কথা মাথায় রেখে তালেবান সরকারের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পর্ক রেখেছেন চীন এমনকি সে দেশে রাষ্ট্রদূত রয়েছেন।
এখনো পর্যন্ত কোন দেশ’ই তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি না দিলেও ৪০ টা দেশ কোনো না কোনোভাবে তালেবান সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ বা আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। সেই কারণেই আফগানিস্তানে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত জয়ন্ত প্রসাদ এর মত বিশেষজ্ঞরা ভারতেরই সাম্প্রতিকতম পদক্ষেপের বিষয়ে বিশেষ সতর্ক।
তিনি জানিয়েছেন গত তিন বছর ধরে ফরেন সার্ভিস কূটনৈতিক এর মাধ্যমে তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে ভারত। ১৯৯০ দশকে গৃহযুদ্ধের সময় ভারত আফগানিস্তানে সঙ্গে যোগযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল এবং যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে ২০০২ সালে তা আবার চালু করেছিল।
ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের বন্দর ঐতিহাসিক ও সভ্যতার বন্ধন ভারতের পার্লামেন্টে গতবছর এমনটাই মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ লাইন, বাঁধ, হাসপাতাল, সংসদ ভবন নিমার্ণ ইত্যাদি প্রকল্প ভারত করেছিল।
ইন্ডিয়ান পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— কমিউনিস্ট বা ইসলামপন্থী কাবুলের শাসন ধারন যাই হোক না কেন দিল্লি ও কাবুলের সম্পর্কে একটা স্বাভাবিক উষ্ণতায় থেকেছে। সেই অনুভূতির কথা মিস্টার কুগেল মন্তব্যে প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
তার কথায় আফগানিস্তানে উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তার দাতা হিসেবে ভারতের একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে যা আফগান জনগণের কাছে শুভাকাঙ্ক্ষী বলে তুলে ধরেছে দিল্লি। এটা হারাতে চায় না দিল্লি—কাবুল। উত্তেজনার মধ্যে দিল্লির সঙ্গে তালেবানের সম্পর্ক সহজ হচ্ছে বলে মনে করছেন পাকিস্তান।
কট্টরপন্থী পাকিস্তানি তালেবান টিটিপি আফগানিস্তান থেকে তৎপরতা চালায় গত জুলাই মাসে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ জানিয়েছিলেন সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা লক্ষ্যে একটি অভিযানের অংশ হিসেবে আফগানিস্তানে হামলা অব্যাহত।
পাকিস্তান তালেবানের বৈঠকে কয়েকদিন আগে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তানি বিমান হামলায় বহু মানুষ নিহত হয়েছে বলে আফগান সরকার জানিয়েছে। তালেবান সরকার এই হামলাকে তাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে নিন্দা করেছে।
২০০১ সালে কাবুলের পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্কে তীব্র অবনতি ঘটেছে অথচ আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বিদেশে অতিথিদের মধ্যে প্রথম ছিলেন একজন শীর্ষ পাকিস্তানের গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
তালেবান নেতৃত্বে সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন তিনি সে সময় অনেকেই কাবুলের পতনকে ভারতের জন্য কৌশলগত ধাক্কা হিসেবে দেখেছিলেন। তবে তালেবানের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ বাড়ানোর পিছনে একমাত্র কারণ কিন্তু পাকিস্তান নয় তবে এটা ঠিক যে গুরুত্বপূর্ণ পাকিস্তানি সম্পদের কাছাকাছি যাওয়ার মধ্য দিয়ে দিল্লি।
কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে তার চিরসবুজ প্রতিযোগিতায় একটা বড় জয় পেয়েছে। ভারত আশা করতেই পারে যে তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুললে তাদের তরফে ভারত বা তার স্বার্থকে ক্ষুন্ন করা সম্ভাবনা কমে থাকবে।
এই অস্থির প্রশ্নটাই সামনে ঘুরপাক খাবে আক্রমণে উদ্বেগ থাকলে আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের বর্তমান সম্পর্কে কোন নেতিবাচক দেখছেন না না পাকিস্তান। ভারতর নিজেদের মত কাজ করতে চান।
তালেবানদের সাথে নারীদের জনজীবনে ফিরিয়ে আনা এবং তাদের শিক্ষা কাজ ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণে অগ্রাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে চায় কাবুল ও দিল্লি।