২৯ নভেম্বর, ২০২৪

‘অবেলার বেলী ফুল’

‘অবেলার বেলী ফুল’

মেহেক নীল শাড়ি পড়ে আছে। বিছানায় তার বেলি ফুলের মালা। শত স্মৃতির পসরায় সাজানো মালাটি ছুঁয়ে দেখতেই—বছর তিন আগের কোনো এক বিকেলের কথা হঠাৎ-ই ঝোড়ো হওয়ার মতো মনটাকে ছুয়ে গেলো। 

বাসার নিচে বোকা সোকা একটি ছেলে এমনই বেলী ফুলের মালা হাতে প্রতিদিন অপেক্ষা করতো। দিনের পর দিন ছেলেটির পাগলামি বাড়তেই থাকে। কি এক যন্ত্রণা। ছেলেটির পাগলামি ঘোরতর হওয়ায়, সাহস করে একদিন দোতলা বাড়ির নিচে নেমে এলো মেহেক।

কি চাই বলেন তো..?
প্রতিদিন বাসার নিচে আসার কি মানে?
আশেপাশের মানুষজন কি ভাববে বলেন?

ছেলেটি: ভাবতে দেন......
আমি শুধু আপনাকে এক পলক দেখতে আসি। ভীষণ ইচ্ছে করে..., আপনি একদিন নীল শাড়ি পড়ে, খোপায় এই বেলী ফুলের মালাটি জড়িয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াবেন। আমি দুচোখ ভরে আপনাকে দেখবো। ...এরপর ভাললাগার আর্বতে ঘিরে ‘না পাওয়া ভালোবাসার একরাশ আক্ষেপ হৃদয়ে পুশিয়ে নিয়ে চলে যাব.....’

মেহেক: আপনি এখন আসতে পারেন।
এরপর আর আমার বাসার নিচে আপনাকে যেন না দেখি।
আর শোনেন..., নীল শাড়ী, বেলী ফুল কোনটাই আমার পছন্দ না।

ছেলেটি: কিন্তু? 
মেহেক: আর কোন কিন্তু না, কখনো না।...

আজ কতগুলো মাস পেড়িয়ে গেছে। বছর পেরিয়ে যুগ ছুঁয়েছে...।
নীল শাড়ি, বেলী ফুলে সত্যিই কি তাকে ভালো লাগে?
বসে বসে এসব ভাবতে ভাবতেই মেহেকের মনে হলো তার প্রিয় রঙ কি?
শুভ্র সাদা রঙ। পবিত্র এই রঙে কোন কষ্ট নেই, দুঃখ নেই। কেবলই নিষ্পাপ সরল-সুন্দর। 
ঠিক সেই রঙের মতোই জীবন তার।

আচ্ছা ছেলেটি কি এখনো বেলী ফুলের মালা হাতে নিয়ে যায় অন্য কোথাও, অন্য কারো জন্য?
....হয়তো।
সকাল হলেই মেহেকের লন্ডনের ফ্লাইট। আজ অনেক কাজ বাকী। তাকে এখন লাগেজ গোছাতে হবে....।

 


১৬.১.২৩, রাজশাহী ।

লেখক: চিকিৎসক (গাইনী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন)
গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নাটো।