২৪ নভেম্বর, ২০২৪

রাজশাহীর চার জেলায় ২৪৬ কোটি টাকার খেজুরগুড় উৎপাদনের লক্ষ্য

রাজশাহীর চার জেলায় ২৪৬ কোটি টাকার খেজুরগুড় উৎপাদনের লক্ষ্য

গ্রামের প্রকৃতিতে শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। রাতের কুয়াশা ভোরের শিশির সেই কথাই বলছে। এই মওসুমকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ জনপদে কতশত আয়োজন। বাহারি সেসব আয়োজনের প্রধান উৎস্য খেজুরগুড়। গাছিরাও রিতিমতো ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন খেজুর রস সংগ্রহের কাজে। 

চলতি শীত মওসুমজুড়ে রাজশাহীর চার জেলায় ২৪৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার খেজুরগুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি অফিস।

কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, রাজশাহী অঞ্চলের চারটি জেলায় রস দেওয়ার মতো উপযোগী গাছের সংখ্যা ১৭ লাখ ১ হাজার ৫০০টি। এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ১১ লাখ ১২ হাজার ১০৬, নওগাঁয় ১৬ হাজার, নাটোরে ৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৫০ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ হাজার ৫০টি খেজুর গাছ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে. শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ৭৫ দিন খেজুর রস সংগ্রহের জন্য ধরা হয়। এই সময়ে জেলাজুড়ে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ এসব গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ, গাছের পরিচর্যা এবং গুড় তৈরিতে যুক্ত থাকেন।

কৃষি অফিস বলছে, রস সংগ্রহের উপযোগী প্রতিটি গাছের রস থেকে ১৭ দশমিক ৪০ কেজি গুড় উৎপাদন হয়। চলতি মওসুমে রাজশাহীতে ১৬৩ টাকা কেজি দরে ৯ হাজার ৬৪ মেট্রিকটন গুড়ের আনুমানিক বাজার মূল্য ধরা হয়েছে ১৪৮ কোটি ৬৪ লাখ ৩২ হাজার ৮৬০, নওগাঁয় ১৫০ টাকা কেজি দরে ২৮০ মেট্রিকটনের দাম ৪ কোটি ২০ লাখ, নাটোরে ১২০ টাকা কেজি দরে ৭ হাজার ৭৮৪ মেট্রিকটনের দাম ৯৩ কোটি ৪০ লাখ ৮০ হাজার এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৫০ টাকা কেজি দরে ১ দশমিক ৫ মেট্রিকটন গুড়ের আনুমানিক বাজার মূল্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা। সবমিলিয়ে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৮৪৯ মেট্রিকটন গুড়ে ২৪৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা ধরা বাজার দর ধরা হয়েছে।

কৃষি অফিসের পরিসংখ্যান মতে— ২০১৯ সালে এই অঞ্চলে রস দেওয়ার উপযোগী গাছের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৩৬৬টি। গত ৫ বছরে সেই গাছ কমে ১৭ লাখ ১ হাজার ৫০৬ টিতে নেমে এসেছে। অর্থাৎ এই সময়ে ৮১ হাজার ৮৬৬টি খেজুর গাছ কমেছে। কমেছে গুড়ের উৎপাদনও। অথচ গত মওসুমেও গুড়ের উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৯৯৩ মেট্রিকটন।

স্থানীয়রা জানান, চিরায়ত বাংলার প্রচীন এক ঐতিহ্য খেজুরের গুড়। শীতের ভোরে গ্রামীণ জনপদে খেজুরের রস সংগ্রহে বেড়িয়ে পড়েন কৃষকেরা। কুয়াশা ভেদ করে সূর্য্য উকি দেওয়ার আগেই গ্রামের বাড়ি বাড়ি মটির চুলায় সেই রস জ্বাল করে গুড় তৈরির কাজ শুরু হয়। রস থেকে নানা ধরণের পাটালী এবং ঝোলা গুড় উৎপাদন হয়ে থাকে।

গুরুদাসপুরের সরকারি বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারি কলেজের কৃষি বিভাগের শিক্ষক জহুরুল ইসলাম বলেন, দেশজুড়ে খেজুরের রস এবং গুড়ের আলাদা খ্যাতি রয়েছে। অথচ চাহিদা পূরণে খেজুরের গাছ রোপনের মাধ্যমে গুড়ের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকারি কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। কেবলমাত্র শীত পড়লেই সামনে আসে খেজুর গাছের কথা। সুস্বাদু খেজুরের গুড় গুরুত্বপূর্ণ মিষ্টান্নর চাহিদা পূরণ করলেও এই গুড় বাণিজ্যিকরণে ব্যাপকভাবে কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না কৃষি অফিসের।

গাছিরা জানান, একজন গাছি প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৫৫টি খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করেন। শীত মৌসুমে ৭০ থেকে ৭৫ দিনে একটি খেজুর গাছ থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কেজি গুড় পেয়ে থাকেন। 

গাছি আকবর আলী, সুখেন মণ্ডল, করিম শাহ জানান, খেজুরের গুড়ের মওসুম শুরু হলেই একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চিনি মিশিয়ে খেজুরের গুড় তৈরি করে তা বাজারে বিক্রি করেন। তাছাড়া দীর্ঘদিনের পচা পাটালি এবং ঝোলাগুড় মিশিয়েও গুড় তৈরি করা হয়। এতে করে খাঁটি গুড়ের চাহিদা ব্যপাকভাবে কমে যায়। তারা চলতি মওসুমে ভেজাল গুড় ব্যবসায়ীদের প্রশাসনের নজরদারি দাবি করেন।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক শাসছুল ওয়াদুদ বলেন, এই অঞ্চরের গাছিরা ইতোমধ্যে রস সংগ্রহ করে গুড় উৎপাদন শুরু করে দিয়েছেন। খেজুরের উৎপাদন এবং বিপণনের বিষয়ে তারা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।