১৯ নভেম্বর, ২০২৪

উত্তরাঞ্চলে আলু বীজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ

উত্তরাঞ্চলে আলু বীজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ

রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলজুড়ে  জমিতে আলু বীজ রোপণ শুরু  করেছেন চাষিরা। তবে ভরা মৌসুমে রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুর অঞ্চলের  চাষিদের মাঝে আলু বীজের জন্য হাহাকার পড়ে গেছে।

চাষিরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় সরকারি আলু বীজ  সরবরাহ খুবই অপ্রতুল।

কিছু বাণিজ্যিক চাষিদের আলু বীজ সংরক্ষিত  আছে হিমাগারে। তবে হাজারো প্রান্তিক চাষিকে নির্ভর করতে হচ্ছে বিভিন্ন  কোম্পানির সরবরাহকৃত আলু বীজের ওপর।

তবে অভিযোগ উঠেছে  আলু বীজের চলমান সংকট পরিস্থিতিতে বিভিন্ন কোম্পানি বাড়িয়ে দিয়েছেন বীজ  আলুর দাম। এ সংকটকে পুঁজি করে বিএডিসি ও বিভিন্ন কোম্পানির  স্থানীয় ডিলালরাও বীজ আলুর কৃত্রিম সংকট তৈরি করে  গলাকাটা দাম আদায় করছেন বলে চাষিদের অভিযোগ। ফলে এ অঞ্চলের  চাষিরা আলু বীজ সংকট নিরসনে স্থানীয় প্রশাসনসহ কৃষি বিভাগের দফতরগুলোতে ধরনা দিচ্ছেন।

প্রশাসন আলু  বীজ সংকট নিরসনে  মাঠে নেমেছেন।  রাজশাহী জেলা সার বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও জেলা  প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, আলু বীজ সংকটের  বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে।

ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  ছাড়াও বিএডিসি, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, হিমাগার  মালিক ও আলু বীজ বিপণনকারী বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোম্পানির প্রতিনিধিদের  নিয়ে আমরা মিটিং করেছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বীজ আলুর সংকট নিরসনে মাঠে কাজ করছেন। আশা  করি বীজ আলু সংকট আর  থাকবে না। রাজশাহীর সর্বাধিক আলু চাষ এলাকা তানোরে বীজ আলু নিয়ে রীতিমতো  নৈরাজ্য চলছে।

চাষিদের অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার  তালোন্দ বাজারের বীজ ডিলার শাহীন অতিরিক্ত মূল্যে বীজ আলু বিক্রি  করছিলেন। চাষিদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুল ইসলাম ১৪ নভেম্বর  শাহীনের দোকানে অভিযান চালান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বসে থেকে  প্রকৃত আলু চাষিদের কাছে নির্ধারিত মূল্যে ২০০ বস্তা বীজ আলু বিক্রির ব্যবস্থা করেন। উপজেলা নির্বাহী  কর্মকর্তা মিনহাজুল ইসলাম বলেন, তানোরে প্রচুর আলুর আবাদ হয়।

ফলে  এখানে বীজ আলুর কিছুটা সংকট আছে। আবার কিছু ডিলার বেশি দামে বীজ আলু বিক্রির চেষ্টা  করছেন। আমরা সব ডিলারকে নির্দেশ দিয়েছি বাড়তি দামে আলু  বীজ বিক্রি করা যাবে না।

কেউ নির্দেশ লঙ্ঘন করলে বিধি অনুযায়ী  ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজশাহীর মোহনপুরের আলু চাষিরা শনিবার  বীজ সংকটের বিষয় নিয়ে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে।

এসব  চাষি বীজ আলু সংকট সৃষ্টিতে হিমাগার মালিক, বিএডিসি ডিলার ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোম্পানির ডিলারদের  বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আলু বীজের দাম দুই- তিনগুণ বেশি আদায়ের অভিযোগ করেন চাষিরা।

চাষিদের সঙ্গে মিটিং শেষে মোহনপুর উপজেলা  নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, রংপুর অঞ্চলে প্রাণ এগ্রোর  বীজ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে চাষিরা তাকে জানিয়েছেন।

কিন্তু  একই ধরনের বীজ রাজশাহী অঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। আমরা ইতোমধ্যে বীজ বিক্রি ও বিপণনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের  বলেছি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চাষিদের কাছে বেশি দামে বীজ আলু বিক্রি করলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুর  জেলায় সবচেয়ে বেশি আলুর আবাদ হয়।

আমন কাটা ও মাড়াই শুরু  হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলু আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করে ফেলেছেন  চাষিরা। অগ্রিম সার মজুদ করেছেন। সেচের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু বীজ সংকটে  জমিতে আলু বীজ রোপণ করতে পারছেন না।

চাষিরা বলছেন, বিএডিসির বীজ বরাদ্দ গতবারের  তুলনায় এবার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে বিএডিসির বীজ আলুর চাহিদা বেশি থাকলেও অধিকাংশ  চাষি পাচ্ছেন না সরকারি সংস্থার বীজ।

রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুর অঞ্চলের  ডিলাররা বরাদ্দ তুলে গুদামের বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এসব বীজ ফড়িয়াদের  মাধ্যমে খুচরা ডিলারদের দোকানে চলে যাচ্ছে। এসব বীজই বিক্রি হচ্ছে  দ্বিগুণ দামে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মাহমুদুল ফারুক  বলেন, রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের আলু প্রধান এলাকা রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুর অঞ্চল। এসব  এলাকায় আলু আবাদের প্রস্তুতি ভালোভাবেই শুরু হয়েছে। দু-একটি জায়গায়  বীজের সংকট আছে বলে শুনেছি।

এখনো হিমাগারগুলোতে পর্যাপ্ত বীজ আলু রয়েছে, যা উত্তরাঞ্চলের  কৃষকদের আবাদে সমস্যা হবে না। তিনি আরও জানান, এ মৌসুমে শুধু  উত্তরাঞ্চলেই ৯৮ লাখ থেকে ১ কোটি টন আলু ফলবে বলে আমরা আশা  করছি।