১৩ নভেম্বর, ২০২৪

 ৩০ হাজারের সড়ক বাতির বরাদ্দ লাখ টাকা

 ৩০ হাজারের সড়ক বাতির বরাদ্দ লাখ টাকা

বর্তমান বাজারে একটি সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপনে সবোর্চ্চ ৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও  ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল পৌরসভায় একটি স্টিট লাইট স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ২৬৯ টাকা। এ নিয়ে বেশ সমালোচনা পৌরসভা জুড়ে। 

এদিকে স্ট্রিট লাইট স্থাপনেও ব্যাপক অনিয়ম করছে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ। এদিকে বাজারের থেকে অতিরিক্ত টাকায় লাইট স্থাপন করায় পৌরসভার বাসিন্দারা বলছেন, অহেতুক লাখ লাখ টাকা সরকারের বা রাষ্ট্রের গোচ্ছায় গেছে।

জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থ বছরের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের  অধিনে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন  ট্রাস্টের আওতায় গ্রীণ হাউজ গ্যাস নি:সরণ কমানোর লক্ষে রাণীশংকৈল পৌর এলাকায় সৌর বিদ্যুতায়িত সড়ক বাতি স্থাপন প্রকল্পে ১৫০ টি লাইটের দরপত্র আহবান করে রাণীশংকৈল পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এতে কাজটি চুক্তিবদ্ধ হয় এনার্জিয়ন বাংলাদেশ লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠান। ১৫০টি স্ট্রিট সোলার লাইট স্থাপনে কোম্পানীটি সাথে মোট ১ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ৪৯৯ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয় ।


বাজারের ৩০ হাজার টাকার একটি স্ট্রিট লাইট পৌরসভার বরাদ্দে ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ২৬৯ টাকা। বাজার থেকে প্রায় এক লাখ টাকা বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। এতে ১৫০টি লাইটে প্রায় দেড় কোটি টাকা গোচ্ছা যাবে সরকারের।

এ নিয়ে বেশ সমালোচনা সৃষ্টি হলে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নামলে বার বার অসহযোগিতা করেছে রাণীশংকৈল পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী জাবেদ আলী। তিনি লাইট স্থাপনের এস্টিমেট বা কাজের ধরন সর্ম্পকে তথ্য দিতে বেশ কিছুদিন কালক্ষেপণ করে পরবর্তীতে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন।

পরে বর্তমান পৌর প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসানের সাথে কথা বললে তিনি প্রথমে তথ্য দিতে অপারগতা করলেও দুই দিন পরে লাইট স্থাপনের ডিজাইনসহ এস্টিমেটের দুটি পাতার ছবি অনুসন্ধানকারীকে দেন। তবে এলএডি লাইট,সোলার প্যানেলসহ অন্যান্য মালামাল গুলোর কোনটার কেমন দাম ধরা হয়েছে সেটির কোন তথ্য প্রকৌশলী বা ইউএনও প্রদান করেননি। 

পৌর প্রশাসকের (ইউএনও) দেওয়া এস্টিমেট অনুযায়ী সোলার স্থাপনে ৩ফিট মাটি খনন করে ৫ ইঞ্চি সিসি ঢালায় দিয়ে  ২ ফিট বাই ২ফিট আরসিসি ব্যাস ঢালায় দেওয়ার বিধান থাকলেও সেটি বাস্তবায়ন করছে না ঠিকাদার কিংবা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। তারা সিসি ঢালায় বাদ দিয়ে সবোর্চ্চ ১৬ ইঞ্চির একটি স্লাব দিয়ে সোলারের গোড়া বসিয়ে মাটি চাপা দিয়ে উপরে আবারো ১৪ থেকে ১৫ ইঞ্চির খোয়া দিয়ে ঢালায় দিচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে সোলার প্যানেল ১৬৫ ওয়াডের বিধান থাকলেও তারা কোথাও ৮৫ ওয়াডের প্যানেল নিম্ন মানের এলইডি লাইট স্থাপন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে দুই বছর আগে উপজেলা পরিষদের আওতায় রাণীশংকৈল উপজেলার আঞ্চলিক সড়কের ধারে জাইকার প্রকল্পে শতাধিক সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে প্রত্যেক স্ট্রিট লাইটের বিপরীতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৫ হাজার টাকা। সেখানে রাণীশংকৈল পৌরসভায় একটি স্ট্রিট লাইটের বিপরীতে ১ লাখ ৩৩ হাজার ২৬৯ টাকা ব্যয় ধরায় বেশ সমালোচনা চলছে পৌরসভা জুড়ে। 

পৌরসভার বাসিন্দা নিরব হাসান,হুমায়ন কবিরসহ অনন্ত দশজন বাসিন্দা বলেন, ভালো লাইট যেখানে ৩০ হাজার টাকায় স্থাপন সম্ভব সেখানে পৌরসভা  এত অতিরিক্ত টাকায় কেন বর্তমানে লাইট স্থাপন করছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। বাসিন্দারাআরো বলেন, সরকার বা রাষ্ট্র অযথায় প্রায় কোটি টাকা লোকশান দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করে দেখার আহবান জানিয়েছেন তারা।

রাণীশংকৈল পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী জাবেদ আলী বলেন, ইতিমধ্যে শতাধিক লাইটস্থাপন হয়েছে। তিনি আরো বলেন, স্ট্রিট লাইটের বিষয়ে মন্ত্রণালয় যা অনুমোদন দিয়েছে তা আমরা বাস্তবায়ন করছি।  কাজে কোন অনিয়ম হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক রকিবুল হাসান বলেন, সিসি ঢালায় বা অনিয়মের বিষয়ে খোজ খবর নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক (রংপুর) মোস্তফা রায়হান মুঠোফোনে বলেন, সোলার লাইট স্থাপনের ব্যয় যাচাই বাছাই করে ধরা হয়েছে। সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপনে অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।