১১ নভেম্বর, ২০২৪

খালে বাঁশের বেড়ায় মাছ শিকার, চাষাবাদ ব্যহতের শঙ্কায় কৃষক

খালে বাঁশের বেড়ায় মাছ শিকার, চাষাবাদ ব্যহতের শঙ্কায় কৃষক

রবি মওসুম শুরু হলেও বিস্তৃর্ণ হালতিবিলে এখনো থৈথৈ পানি। সেই পানিতে বাঁশের বেড়া দিয়ে অন্তত ১০টি সোঁতিজালে মাছ শিকার করছেন প্রভাবশালীরা। এতে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় মওসুম শুরু হলেও রবিশস্য চাষাবাদ শুরু করতে পারেনি এই বিলের কৃষক।

কৃষকদের ভাষ্যমতে, বিলটিতে প্রতি রবি মওসুমে সরিষা, ভুট্টা, পেঁয়াজের পাশাপাশি বোরো ধানের চাষও করা হয়। অথচ বিলের জমি জলমগ্ন থাকায় বীজতলা প্রস্তুত করা যাচ্ছে না। এতে করে বিলের চাষাবাদ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন চাষীরা।

নাটোর জেলা কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, নাটোরের নলডাঙ্গার এই হালতি বিলে ৫ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে বোরো ধান, ২ হাজার ৫শ হেক্টরে সরিষাসহ, ভুট্টা, পেঁয়াজসহ রবিমওসুমের বিভিন্ন ফসল চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু সময়মতো পানি না নামায় এসব জমিতে চাষাবাদ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

তথ্যমতে, এর আগে ২০২২ মওসুমে দক্ষিণ চলনবিলের নাটোরে ১৬ হাজার ১২৫ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছিল। কিন্তু বিলে পানি থাকায় ২০২৩ মওসুমে এসে সেই আবাদ ১২ হাজার ৩৭৫ বিঘায় নেমে আসে। এর মধ্যে ২০২২ মওসুমে হালতি বিলে ২ হাজার ১০০ বিঘা থেকে ২০২৩ মওসুমে এসে সরিষা আবাদ ১ হাজার ৫০ বিঘায় নেমে আসে। এতে গত বছর ৪ হাজার ৮০০ বিঘা কম জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। এর ফলে টাকার অঙ্কে ৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে সরিষা আবাদ কম হওয়ায়। চলতি মওসুমেও পানি না নামায় একইভাবে চাষাবাদ ব্যাহতের শঙ্কায় পড়েছেন কৃষক।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, হালতি বিলের পানি সিংড়া উপজেলার ত্রিমোহনার সোনাইডাঙ্গা খাল হয়ে নেমে যায়। ওই খালে বাঁশের বেড়া দিয়ে অন্তত ১০টি সোঁতিজালে মাছ শিকার করছেন একশ্রেণির অসাধুরা। এতে ধীরগতিতে পানি নিস্কাশন হচ্ছে। চাষাবাদ নিয়ে বাড়ছে কৃষকের দুশ্চিন্তা। 

কৃষিবিদ হারুনর রশীদ বলেন, চলনবিলের মধ্য দিয়ে বহু নদীনালা বয়ে গেছে। বর্ষা মওসুমের শেষের দিকে বিলের পানি এসব নদীনালা হয়ে নেমে যায়। কিন্তু নদীনালা, খালে মাছ শিকারের জন্য বিভিন্ন কায়দায় সোঁতি জাল, বাঁশের বানার বেড়া দিয়ে পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করেছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এসব কারণে বিলের পানি ধীরগতিতে নামায় নভেম্বরের শুরুতে সরিষাসহ রবিশস্য আবাদ শুরু করতে পারেননি কৃষক। 

হালতি বিলের খোলাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক জমসেদ আলী বলেন, সময়মতো বিলের পানি না নামায় গত বছরও ঠিকমতো সরিষা চাষ করতে পারেননি তিনি। এবছরও সেই শঙ্কায় পড়েছেন তিনি। ওই বিলের বোরো চাষি ওবাইদুর ইত্তেফাককে বলেন, প্রতি বছরই তিনি হালতিবিলে বোরো আবাদ করেন। এবছর এখনো পানির নিচে রয়েছে তার জমি। ফলে তিনি বীজতলা প্রস্তুত করতে পারছেন না। একারণে বোরো চাষ নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

সোনাপাতিলের কৃষক আনোয়ার বলেন, প্রভাবশালীদের বাধার মুখে বিলে পানি নামছে ধীরগতিতে। অথচ রবিমওসুম পেরিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তারা চাষাবাদ শুরু করতে পারছেন না। অবৈধ বাঁশের বেড়া উচ্ছেদ করে পানি নিস্কাশনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান তিনি। কৃষক আফতাব মোল্লা বলেন, নভেম্বরের শুরুর দিকেই পানি নেমে জমি সরিষা চাষের উপযোগী হয়। বিনা হালে কম খরচে টরি-৭ জাতের সরিষা চাষ করেন তারা। কিন্তু চলতি বছর মৌসুম পেরিয়ে গেলেও জমি জলাবদ্ধ থাকায় তারা সরিষা চাষ করতে পারেননি।

নাটোরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, হালতিবিলের ভাটিতে বিভিন্ন স্থানে বাঁশের বেড়া দিয়ে সোঁতিজাল ফেলে মাছ শিকার করায় পানি নামতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। এগুলো অপসারণে প্রশাসনের মাধ্যমে তারা জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন।