১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বহু বছরের পুরোনো বিরল প্রজাতির গাছটি ভেঙ্গে পড়ল

বহু বছরের পুরোনো হওয়ায় জীবদ্দশায় গাছটি দেখতে ভীড় করতেন বৃক্ষপ্রেমীরা। প্রবল বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় শনিবার রাতে গোড়া থেকে ভেঙ্গে পড়েছে সেই বিরল প্রজাতির ‘খিরির’ গাছটি। ভেঙ্গে পড়ার খবর শুনে গতকালও অনেকেই শেষবারের মতো এক নজর গাছটি দেখতে আুেসন।

নাটোরের সিংড়া উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের দুলশী গ্রামে গাছটির জন্ম-বেড়ে উঠা। চলনবিলের মাঝখানের দুলশী গ্রামের একটি উঁচু মাটির ঢিবির ওপর বড় আকৃতির এই গাছটি শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্তও দাঁড়িয়ে ছিল। গোড়া থেকে ভাঙ্গা অবস্থায় সকালে গাছটিকে দেখা যায়।

গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা বলেন, গাছটি বহু বছরের পুরোনো। কত বছরের পুরোনো তা ঠিকঠাক তারা কেউই বলতে পারেন না। জন্মের পর থেকেই বিরল গাছটি দেখে আসছেন। পুরো গ্রামজুড়ে এই গাছ আর কোথাও নেই। তাদের পূর্বপুরুষেরাও গাছটি এভাবেই দেখেছেন।

উদ্ভিদ গবেষকরা বলছেন, বিরল এই গাছটির বয়স ২০০ বছরেরও বেশি হবে। ভেঙ্গে যাওয়ার আগে গাছটির উচ্চতা ৫০ ফুট এবং প্রায় ১৫০ বর্গফুট আয়তন ছিল। মধুমাস জ্যেষ্ঠে গাছটিতে আঙুরদানার মতো ফল ধরত। ফলের স্বাদও ছিল অনেকটা ক্ষীরের মতো। এ জন্য লোকে গাছটিকে খিরির গাছ বলেন। তবে বিরল এই গাছের এখানে কোনো বংশবিস্তার হয়নি। গাছটিতে যে ফল ধরতো সেই ফলের বীজ থেকেও চারা গাজায়নি। 

তারা বলেন, গাছটির বংশবিস্তারের জন্য কলম করলেও নতুন ডাল হয়নি। বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের গাছটি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই থেকে গাছটিকে দেখতে আসতেন দেশের নানা প্রান্তের বৃক্ষপ্রেমীরা। অনেক উদ্ভিদ গবেষকও গাছটি সম্পর্কে জানার জন্য দুলশী গ্রামে গবেষনা করেছেন। 

স্থানীয়রা জানান, গাছটি পরিদর্শনে গিয়ে একটি স্মারক স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছিল নাটোর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে। সেই স্তম্ভে গাছটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘বৃক্ষ মানিক’। গাছটির ঘন পাতার ডালপালা আশপাশজুড়ে ছায়া দিত বলে-গাছের নিচে বিশ্রাম নিতেন শ্রমজীবীরা।

আষি বছরের প্রবীণ কৃষক ছলিম উদ্দিন জানালেন, বুদ্ধির পর থেকে গাছটিকে একই রকম দেখেছেন তিনি। এই গাছটির গল্প তিনি দাদার কাছ থেকে শুনেছেন। গাছের ফল খেয়েছেন। পরিশ্রান্ত শরীরর জিরিয়েছেন গাছের ছায়ায়। শনিবার রাতে দমকা হাওয়ায় গাছটি গোড়া থেকে ভেঙ্গে পড়েছে। এটি আর বাঁচার সম্ভাবনা নেই। এখন গাছটি শুধুই স্মুতি। এজন্য রোববার বিকেলে শেষবারের মতো গাছের ভাঙ্গা অংশ দেখতে এসেছিলেন। গাছটি ভেঙ্গে পড়ায় গ্রামের মানুষও কষ্ট পেয়েছেন। তার মতো শত শত মানুষ গাছটিকে দেখতে ভীড় করছেন। 

মোকারম হোসেন দেশের নানা বৈশিষ্ট্যের উদ্ভিদ নিয়ে লেখালেখি করেন। গাছটি ভেঙে পড়ার খবর শুনে তিনি বলেন, খবরের কাগজে গাছটি সম্পর্কে জানার পর সরেজমিনে তিনি গাছটি দেখে এসেছিলেন। গাছটির সুনির্দিষ্ট কোনো নাম  স্থানীয় কাছে না থাকলেও এটি ‘সফেদা প্রজাতির বৃক্ষ’। আর লেখকদের কাছে গাছটি খিরির গাছ নামে পরিচিত। গাছটি বহু বছরের পুরোনো হওয়ায় এটি নিয়ে সবার মধ্যে আগ্রহ ছিল। বর্তমানে এই গাছ বিরল। তবে ঢাকার লেদার টেকনোলজি কলেজ চত্বরে একটি ও রমনা পার্কে আছে।

নাটোরের সহকারি বন সংরক্ষক মো. মেহেদীজ্জামান বলেন, মাস খানেক আগে সরেজমিন ঘুরে গাছটিকে সংরক্ষণের জন্য উর্দ্ধতনকর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ছিয়েছিলেন তিনি। সংরক্ষনের আগেই গাছটি ভেঙ্গে পড়ায় তিনি কষ্ট পেয়েছেন। তবুও ভাঙ্গা গাছটি পরিদর্শন করে নতুন করে কোনো উদ্যোগ নেওয়া যায়কি না তা দেখবেন তিনি।