আওয়ামীলীগ সরকারের সময় বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের দায়ে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেয়া সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান এলাকায় তপু মিয়া নামে পরিচিত। পুলিশের হাতে তার আটকের সংবাদ জানতে পেরে এখনো কেহই মুখ খুলতে সাহষ পাচ্ছেনা র্যাবের ভয়ে। র্যাব থেকে তিনি সেনা কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পেলেও র্যাব হিসাবেই চিনে সবাই। এলাকায় তার রয়েছে প্রায় ৩শ বিঘা সম্পত্তি। এছাড়া রয়েছে বিলাস বহুল বাংলোসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এলাকাবাসির ভাষ্য মতে যার বাজার মূল্য ৬০ কোটি টাকা। এছাড়াও শেখেরহাট বাড়ির ভিতরে প্রভাব খাটিয়ে সরকারি সাইক্লোন শেল্টার নির্মান করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামের সন্তান তিনি। যার দাপট ও বিভিন্ন অপকর্মের ভয়ে এলাকাবাসি র্যাব তপু নামেও ডাকেন। কারণ এলাকায় নিজের প্রভাব বিস্তার করে মানুষকে ভীত সন্ত্রস্ত রাখতে র্যাব দিয়ে নজরদারি করাতেন। ২০১৬ সালে নিজের বাংলো বাড়ি, মাছ ও গরুর ফার্ম, ফল বাগান, আবাদি জমিসহ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রয়ে র্যাব দিয়ে প্রভাব খাটাতেন বলে নির্যাতিতরা জানান। অনেকে এখনো জমির টাকা না পেলেও ভয়ে মুখ খুলতে সাহষ পাচ্ছেনা। হাসিনা সরকার পতনের দিন তালা দিয়ে পালিয়ে গেছে মেজর জেনারেল জিয়াউলের তাসফিয়া মাল্টিপারপাস এগ্রো ফার্মের কেয়ারটেকার রংপুরের বাসিন্দা মো. মফিজ। সেই থেকে এটি তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে।
এই অজো পারাগায়ে নির্মিত তাসফিয়া ফার্মের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বিলাস বহুল দ্বিতল বাংলো বাড়ির ভিতরে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার রয়েছে বলে এলাকাবাসির ধারণা। এলাকাবাসির অভিযোগ বরিশাল র্যাব-৮ এর এক কর্মকর্তা গাড়িতে এসে এই বিশাল সম্পদের দেখা শুনা করতেন। জিয়াউলের নির্দেশে ঐ কর্মকর্তা এই সম্পত্তি বাড়াতে পাশের জমি নাম মাত্র মূল্যে ছেড়ে না দিলে মারধর নির্যাতন করতেন। তাই সাধারণ মানুষের র্যাবের প্রতি ঘৃণা, আতংক এবং খারাপ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দাবি এখন যদি নতুন দায়িত্ব প্রাপ্ত বরিশাল র্যাব-৮ এর বিভাগীয় প্রধান এলাকায় এসে পরিদর্শন করেন এসব অভিযোগ শুনে ব্যবস্থা নেন তাহলে তারা আশ^স্ত হতে পারবে। কাটবে আতংক।
প্রতাপপুর গ্রামে ১৫ বিঘা সম্পত্তিতে গড়ে তোলা তাসফিয়া মাল্টিপারপাস এগ্রো ফার্মের প্রতিবেশি গৃহীনি নাজমুন নাহার। তিনি জানালেন, জিয়াউল এলাকায় কম আসতেন। বরিশাল র্যাবের গাড়িতে আসা এক অফিসার এলাকায় জিয়াউলের সব কিছু নজরদারি করত। তাই আমরা ভয়ে তটস্ত থাকি। অন্যের জমির গাছ কেটে এই ফার্মের সিমানা দেয়াল নির্মান করেছে। মাছের খামারের মধ্যে ৭টি পুকুর, বিভিন্ন ফলের বাগান, গরুর ফার্মসহ বিলাস বহুল বাংলো বাড়ি আছে।
একই এলকার মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান মীর বলেন, পার্শবর্তি মো. বেলাল এর নারিকেল গাছ কেটে, নান্না হাওলাদার এবং আবু বকর সিদ্দিকীর অনেক জমির উপর থেকে জোরপূর্বক সিমানা ওয়াল নির্মান করেছে। আমার ১ কাঠার বেশি জমি দেয়ালের ভিতরে নিয়ে গেলেও দাম দেয়নি। ফার্মের সিমানা দেয়ালের নিকটবর্তি বাসিন্দা কৃষক লিয়াকত আলী জানান, আমার পুকুর ও বেড় ভরাট করে দেয়াল করেছে র্যাব। এই পুকুর থেকে বছরে ২০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতেন তিনি। যা থেকে তিনি বঞ্চিত।
এলাকাবাসির অভিযোগ মাছের ফার্মের সীমানা সংলগ্ন সড়কে কেহ দাড়াতে পারতনা। প্রতাপপুরের সহকারি শিক্ষক আঃ ছত্তার বলেন, জিয়াউলের আক্রোশের শিকার হয়েছি আমি। একটি বিষয়ে তার সাথে মতোবিরেধ হওয়ায় আমাকে বরিশাল র্যাব-৮ অফিস থেকে ফোন দিয়ে বলে আমি নাকি জামাত শিবির করি অভিযোগ আছে। তাই সেখানে গিয়ে দেখা করতে বলে। এরপর আমি ফোনে আমার পরিচিত এক র্যাব সদস্যের সাথে জানালে তার হস্তক্ষেপে রেহাই পাই।
ফার্মের ভিতরে দ্বিতল বাংলো বাড়ির পিছনে বসবাসরত গৃহীনি মিঠু বেগম জানান, ২০১৬ সালে র্যাব জিয়াউল তার এই বাড়ির ভিতরে আমার ২ কাঠা সম্পত্তি নিলেও দাম দেয়নি। তাছাড়াও ভবনটির সেফটি ট্যাংকি আমার সম্পত্তির ভিতরে নির্মান করায় ময়লা দূর্গন্ধযুক্ত পানিতে ভর্তি থাকে আমার রাস্তা। এই ভবন নির্মানের রাজমিস্ত্রি মফিজ উদ্দিন জানায় আমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে টাকা দেয়নি। এখনো ২৫ হাজার টাকা পাওনা আছে। কুতুবকাঠি গ্রামে জিয়াউলের রয়েছে আরো দেড়শ বিঘা ধানা জমি।
এলাকার বাসিন্দা কৃষক হৃদয় তালুকদার জানান, আমাদের ৫ কাঠার সম্পত্তির উপরে বাড়ি ও একটি ছোট মসজীদ ছিল। জিয়াউলের নির্দেশে বরিশাল র্যাব-৮ এর মো. কামরুল নামে এক অফিসারকে পাঠিয়ে বাড়ি মসজীদ ভেঙ্গে ৮ কাঠার সম্পত্তির পরিবর্তে ৫ কাঠা জমি দেয়। এ জমি আমরা নিতে রাজি না হওয়ায় আমার বাবাকে র্যাব কামরুল মারধর করেছে। এতে তার এক পাশ অবস হয়ে গেছে। তিনি এখন হাটতে বা কোন কাজ করতে পারেনা। আমার ৩ বোন ঐ সময় ৩ বছর র্যাবের ভয়ে পালিয়ে চট্টগ্রাম ছিল। এভাবে কুতুবকাঠি গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিতোষ গাইন, প্রশান্ত মহুরীসহ আরো অনেকের জমি নামমাত্র মূল্যে দখল নিয়ে নেয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এসব জমিতে পাকা পিলার দিয়ে সিমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। এলাকাবাসির হিসেব অনুযায়ি মাছের ফার্ম, ফলের বাগান, গরুর ফার্মে ১৫ বিঘা এবং ধানা জমি ২৮৫ বিঘা মিলিয়ে কমপক্ষে মোট ৩শত বিঘা সম্পত্তির মালিক জিয়াউল আহসান। বর্তমান বাজার দর হিসাবে প্রতি বিঘা সম্পত্তি ২০ লাখ টাকা দরে তার এ সম্পত্তির মূল্য দাড়ায় ৬০ কোটি টাকা।