১৬ জুলাই, ২০২৪

অবৈধ পন্থায় চালের বস্তায় সিল মারছিল চক্রটি

ঝালকাঠির খাদ্য গুদামে অবৈধ ভাবে চাল এনে বস্তা ভর্তি করে মিলের নামে সিল মারার সময় হাতে নাতে ধরে ফেলেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সহকারি কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম।

সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সদর উজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে এ অভিযান চালানো হয়।

গোয়েন্দা বিভাগ ও সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানাযায়, দীর্ঘ দিন ধরে জেলা খাদ্য সংরক্ষণ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সহায়তায় একটি দালাল চক্র বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছে। মিল মালিকদের লাইসেন্সের নামে বাহির থেকে কম দামে ক্রয় করা নিন্মমানের চাল গুদামজাত করা হয়।

এরপর সরকারের বেশি দামে চাল ক্রয়ের লাখ লাখ টাকার বরাদ্দ লোপাট করে গুদামজাত করা নিন্মমানের চাল বস্তায় ভরে মিলের সিল দিয়ে রাখা হয়।

এ কাজের সাথে ঝালকাঠি গুদাম সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। গুদামের অবসপ্রাপ্ত নিরাপত্তা প্রহরী মো. মানিক সিকদারের মাধ্যমে এসব কাজ করানো হয়।  

এমন সংবাদের প্রেক্ষিতে গতকাল জেলা খাদ্য গুদামের ৯ নম্বর গুদামে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। দেখা যায় শত শত বস্তায় সিল মারা হচ্ছে। সিল দেয়া গুদাম শ্রমিক নূরু মাঝি জানান, তাকে সাবেক নিরাপত্তা প্রহরী মানিক এ কাজ করতে বলেছে।

এ সময় দেখা যায় অপর পাশে কিছু শ্রমিক সিল দেয়া বস্তায় চাল ভরে মেশিনে সেলাই কাজে ব্যস্ত। ম্যজিষ্ট্রেট আসার সংবাদ শুনে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পরে সেসব শ্রমিকরা। একই সময় পালিয়ে যায় নিরাপ্তা প্রহরী মানিক সিকদার।

খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সাইফুল ইসলাম গুদামের ভিতর প্রবেশ করেন। কিন্তু তার আগেই চালের বস্তা রেখে সিল মারা বস্তার স্থানে যাবার পথ আটকে দেয়া হয়।

ফলে ম্যাজিষ্ট্রেট প্রথমে সেখানে যেতে না পেরে বিকল্প উপায়ে ভিতরে প্রবেশ করে ঘটনার সত্যতা দেখতে পান। সেখান থেকে আমিন ও সাব্বির রাইস মিলের নামে কাটানো সিল উদ্ধার করেন তিনি।

এরপর সিল মারা শ্রমিক নুরু মাঝিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি কি ভাবে কত বস্তায় সিল মেরেছেন, কে তাকে এ কাজ করতে বলেছে বিস্তারিত ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে স্বিকার করেন।

সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে সরকার ঝালকাঠি সদর উপজেলা থেকে ৫৫ টন চাল ক্রয়ের জন্য ২৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। যা জেলা খাদ্য সংরক্ষণ কর্মকর্তার মাধ্যমে ২ জন মিল মালিকের সাথে এ চাল ক্রয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। সরকারি নির্দেশনানুযায়ি প্রতি মিল মালিককে ২৭.৫০০ টন করে চাল ক্রয়ের নির্দেশনা দেয়া হয়।

এখানে শর্ত থাকে যে মিল মালিকদের অবশ্যই নিজস্ব চালু মিলের সাথে ধান ক্রয় করে শুকানোর চাতাল, হলার, মটর ও মেশিন থাকতে হবে। এরপর ক্রয়কৃত ধান তাদের মিলে ভাঙ্গিয়ে সরকারি বস্তায় ভরে মিলের সিল দিয়ে গুদামে সরবরাহ করবে।

কিন্তু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সহায়তায় এ দালাল চক্র কাগজে কলমে মিল দুটির নামে নিন্মমানের চাল ক্রয় করে গুদামে রাখে। এ বিষয় নিয়ে গত ১৪ জুলাই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তারা সতর্ক হয়ে যায়।

সংবাদের প্রেক্ষিতে কোন অভিযানের আশংকায় চক্রটি সিল কাটিয়ে গতকাল ১৫ জুলাই গুদামে বসে দ্রুত চালের নতুন বস্তায় সিল দিয়ে বস্তা বন্দি করতে ছিল। তখন ঘটনাটি হাতে নাতে ধরা পড়ে।

এ প্রসঙ্গে ঝালকাঠি খাদ্য গুদামের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে প্রকাশ্যে কাজটি করা ভুল বলে স্বিকার করেন।

নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সহকারি কমিশনার ভূমি এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি এ বিষয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। তবে ঘটনাটি অন্যায় এবং অবৈধ উল্লেখ করে বিস্তারিত জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছি।

এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুজা মন্ডল জানান, বিষয়টি তাৎক্ষনিক ভাবে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। তিনি বরিশালে বিভাগীয় মিটিংয়ে থাকায় তার সাথে আলাপ করতে পারিনি। জেলা প্রশাসকের সাথে বিস্তারিত আলাপ করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা সে বিষয়ে পরবর্তি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।