আছমা বেগমকে (২০) অন্তসত্তা অবস্থায় তালাক দিয়েছিলেন স্বামী। সেই থেকে বাপের বাড়িতে থাকেন আছমা। স্বামী ঘর ছাড়া করায়, প্রতিবেশিদের ছোট-বড় কথা গিলতে হতো। নিরুপায় হয়ে নারী সহায়তা কেন্দ্রে অভিযোগ দিয়ে ছিলেন তিনি। অভিযোগের দুই সপ্তাহের মধ্যে আবারো জুড়েযায় তার সংসার।
নারী সহায়তা কেন্দ্রের বিচারক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় তাদের সংসারজুড়ে দেওয়ার কারিগর। আছমা বেগম গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর ইউনিয়নের খুবজিপুর পশ্চিম পাড়া গ্রামের রাসেল প্রামাণিকের স্ত্রী।
অন্তসত্তা আছমা বেগম জানালেন, ‘পারিবারিক কলহকে কেন্দ্র করে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তাদের সংসার ভেঙ্গে যায়। নারী সহায়তা কেন্দ্রে অভিযোগ দেওয়ার দুই সপ্তাহে আবারো ভাঙ্গা সংসার জোড়া লেগেছে। আমরা এখন পরিবার পরিজন মিলে নতুন সন্তানের অপেক্ষায় আছি।’ ‘
নারী সহায়তা কেন্দ্রে’র মাধ্যমে শুধুযে আছমা বেগমের সংসারজুড়ে দেওয়া হয়েছে তা নয়। গত ৫ মাসে তার মতো সংসার ফিরে পেয়েছেন- আয়েশা বেগম, নার্গিস আক্তার, সাথী খাতুন, হাসি বেগমরা।ভাঙ্গা সংসার জোড়া লাগানোর পাশাপশি একই সময়ে বিভিন্ন ধরণের ৬৫টি অভিযোগ নিস্পত্তি করেছেন এই নির্বাহী কর্মকর্তা।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ‘নারী সহায়তা কেন্দ্রে’র দায়িত্বেরত বেলি খাতুন জানান, ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর ‘নারী সহায়তা কেন্দ্রে’র উদ্বোধন করেন তখনকার জেলা প্রশাসক শাহরিয়াজ। তারপর থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ২শ নারী এখান থেকে বিভিন্ন ধরণের সহায়তা পেয়েছেন। তার মধ্যে গত ৫ মাসেই ৬৬জন নারীর অভিযোগ নিস্পত্তি করা হয়েছে।
‘নারী সহায়তা কেন্দ্র’ সূত্রে জানাগেছে, স্বামীর কাছ থেকে তালাক প্রাপ্ত হয়ে নার্গিস বেগম ‘নারী সহায়তা কেন্দ্রে’র সরনাপন্ন হয়েছিলেন গত বছরের ২২ নভেম্বর। ‘নারী সহায়তা কেন্দ্রে’র মাধ্যমে দুই সপ্তাহের মধ্যে তার সংসারও জোড়া লেগেছে। কাবিন নামায় দেন মোহর কম থাকায় আয়েশা বেগমকে তালাক দিয়েছিলেন স্বামী। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনিও নারী সহায়তা কেন্দ্রে অভিযোগ দিয়েছিলেন। নারী সহায়তা কেন্দ্রের বিচার মেনে স্বামী উজ্জল হোসেন তাকে আবারো সংসারে ফিরিয়ে নিয়েছেন।
আয়েশা বেগমের স্বামী উজ্জল জানালেন তার ভুলের কথা, ‘সংসারে ৩ বছর বয়সি এক পুত্র সন্তান থাকা সত্তেও আবেগের বসে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলাম। নারী সহায়তা কেন্দ্রে এসে সেই ভুল ভেঙ্গেছে। ইউএনও স্যারের পরামর্শ মেনে স্ত্রীকে নিয়ে এখন সুখের সংসার করছি।’
এদিকে বৃদ্ধা জাহেদা বেগমের (৬০) জমা-জমি লিখে নিয়ে দূরে ঠেলে দেন সন্তানরা। নারী সহায়তা কেন্দ্রে বিষয়টির সুরাহা করা হয়। মুচলেকা নিয়ে মায়ের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয় সন্তানদের। অনার্স পড়ুয়া শিরিন শিলার পিতা মারা যাওয়ার পর পৈত্তিক জমি থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়। নারী সহায়তা কেন্দ্রে থেকে শিরিন শিলার অনার্স প্রথম বর্ষের ফরম পূরণের টাকা দেওয়া হয়।
এই অভিযোগটি বিচারাধিন। যেভাবে নিস্পত্তি করা হয় অভিযোগ- অভিযোগ দায়েরের পর দুই পক্ষকে নোটিশ দিয়ে নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ডাকা হয়। সেখানে দুইপক্ষের শুনানী শেষে রায় দেন নারী সহায়তা কেন্দ্রের বিচারক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় জানালেন, কোনো নারী যাতে স্বামীর সংসারে নির্যাতিত না হন। কোনো মা যাতে সন্তানের কাছে বোঝা না হন। এলক্ষ্যেই নারী সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে নারীদের নানা ধরণের সহায়তা করা হচ্ছে।