দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে মালচিং পদ্ধতিতে দুই জাতের তরমজু চাষে কৃষক আব্দুল হামিদের আশানুরুপ সফলতায় মাচায় ঝুলছে রংবেরঙের তরমজু। কৃষক আব্দুল হামিদের সফলতায় এলাকার অন্য কৃষকদেরও তরমজু চাষে আগ্রহী করে তুলছে।
সরেজমিনে ফুলবাড়ী উপজেলার ২নং আলাদিপুর ইউনিয়নের ভিমলপুর গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে আব্দুল হামিদ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় তার নিজস্ব ২০ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলকভাবে ব্লাব বেবি ও তৃপ্তি জাতের তরমুজ চাষ করে আশানুরুপ সফলতা অর্জন করেছেন।
চারিদিকে ধানের মাঠ। মাঝখানে দেখা যাচ্ছে সবুজের ঝোঁপ। কাছে যেতেই দেখা মিলে অন্যরকম চাষ পদ্ধতি। মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করেছেন কৃষক আব্দুল হামিদ। আব্দুল হামিদ তার তরমুজ খেত নীবিড় পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করা মাচার নিচে ঝুলছে নানা আকারের রঙবেরঙের তরমুজ। কোনোটি হলুদ, কোনটি কালো আবার কোনোটি সবুজ। সেগুলো জালি ব্যাগে ঝুলে আছে মাচায়। প্রতিটির ওজন এখন প্রায় আধা কেজি থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত।
তরমুজ চাষে সফলতা অর্জনকারি কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তারের পরামর্শে ২০ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে ব্লাক বেবি ও তৃপ্তি জাতের তরমুজ চাষ করেন। খেতের পরিচর্যার এক পর্যায়ে প্রতিটি গাছে ব্যাপকহারে ফুল আসতে শুরু করেন।
এরপর ফল ধরার পর মাত্র ৬৫ দিনের মধ্যেই গাছের তরমুজ বিক্রির উপযোগী হয়ে যায়। খেতের প্রতিটি তরমুজের ওজন আকারভেদে দুই থেকে তিন কেজি। স্থানীয় বাজারসহ সর্বত্রই বারোমাসি তরমুজের ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রতি কেজি তরমুজ আকার ও প্রকার ভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন কৃষক আব্দুল হামিদ। এতে ধান ও সবজি চাষের চেয়ে তরমুজে দ্বিগুণ লাভবান হবেন হবেন এই কৃষক।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে দিনাজপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খরিফ-১ মৌসুমে প্রথম বারের মতো উপজেলার পৌর এলাকাসহ সাত ইউনিয়নের ৮ জন কৃষকের মাধ্যমে জনপ্রতি ২০ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে ব্লাক বেবি, তৃপ্তি ও অনুভব জাতের তরমুজ চাষের প্রদর্শনী করা হয়েছে।
এতে ফুলবাড়ী উপজেলায় ১ দশমিক ৬ একর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে ব্লাক বেবি, তৃপ্তি ও অনুভব জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে। এজন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ৮জন কৃষককে তরমুজের বীজ, জৈব সার, জৈব বালাই নাশকসহ খেতের পরিচর্যার জন্য নগদ তিন হাজার টাকা প্রদানসহ তরমুজ চাষের জন্য সার্বিক কারিগরি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে মালচিং পদ্ধতিতে ব্লাক বেবি ও তৃপ্তি জাতের তরমুজ চাষ করেছেন কৃষক আব্দুল হামিদ।
মালচিং পদ্ধতিটি মূলক চীন ও জাপানে বিষমুক্ত সবজি চাষের একটি পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত। আবহাওয়া ও মাটির উর্বরতার কারণে হলুদ, সবুজ ও কালো রঙের ফলন হচ্ছে ব্লাক বেবি ও তৃপ্তি জাতের তরমুজ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, বর্ষাকালীন সময়ে তরমুজ চাষে সাফল্য পাওয়া যায়। কৃষি বিভাগ থেকে দিনাজপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খরিফ-১ মৌসুমে প্রথম বারের মতো উপজেলার পৌর এলাকাসহ সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ১ দশমিক ৬ একর জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে ৮ জন কৃষক ব্লাব বেবি, তৃপ্তি ও অনুভব জাতের তরমুজ চাষ করছেন।
এরমধ্যে ভিমলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ একজন রয়েছেন। এতে প্রতি হেক্টরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ মেট্রিক টন তরমুজ। কৃষি বিভাগের প্রদর্শনী প্লটের বাইরেও উপজেলার কৃষকরা নিজ উদ্যোগে প্রায় এক একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষে ভিমলপুরের কৃষক আব্দুল হামিদের সাফল্যের পাশাপাশি ধান ও সবজি চাষের চেয়ে কম খরচে তরমুচজ চাষে বেশি লাভ হওয়ায় এলাকার অন্য কৃষকরাও তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠছেন।