নিজের অবৈধ সম্পদের তথ্য গোপন করতে গিয়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধের সাথে জড়িয়েছেন পুলিশ সদস্য মেহেদী হাসান। জাল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্রের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণের যেসব তথ্য তিনি দিয়েছেন, তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং তথ্য গোপন করতে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার ঘটনায় পুলিশ সদস্য মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক। সোমবার দুদকের রাজশাহী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন মামলাটি দায়ের করেন।
দুদক সমন্বিত রাজশাহী কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। অভিযুক্ত মেহেদী হাসান নাটোর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কনস্টেবল পদে কর্মরত আছেন। তিনি জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার চকবিজলী গ্রামের বাসিন্দা।
দুদক বলছে, পুলিশের কনস্টেবল মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পায় দুদক। এরপর তাকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য বলা হয়। এরপর মেহেদী হাসানের লিখিত ও স্বাক্ষরিত ৪৮টি স্ট্যাম্পে চুক্তিসংবলিত ৫১ লাখ টাকার হিসাব বিবরণী তুলে ধরেন।
এরমধ্যে স্ট্যাম্পে আটজনের কাছ থেকে জমি বন্ধক রাখা বাবদ ১৮ লাখ টাকা এবং আরও আটজনের কাছ থেকে ৩৩ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণের চুক্তিপত্র রয়েছে। মেহেদী হাসানের দাখিল করা স্ট্যাম্পগুলো জয়পুরহাটের স্ট্যাম্প ভেন্ডার সাইদুল ইসলামের ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের সিল ও স্বাক্ষরযুক্ত।
এসব স্ট্যাম্প জয়পুরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে যাচাই করেছে দুদক। তাতে দেখাগেছে, স্ট্যাম্পগুলো জয়পুরহাটের স্ট্যাম্প ভেন্ডার সাইদুল ইসলামের নামে দেখানো হলেও জয়পুরহাটের ট্রেজারি শাখা থেকে এসব স্ট্যাম্পের মধ্যে ৪২টি ২০২১ সালের ২ ফেব্রæয়ারি ও ৬ সেপ্টেম্বর ভেন্ডার সানোয়ার হোসেন এবং ৬টি ২০১৭ সালের ২২ জুন শহীদুল ইসলাম নামের এক ভেন্ডারের কাছে সরবরাহ করা হয়। স্ট্যাম্প ভেন্ডার সানোয়ার হোসেনের বক্তব্য ও তাঁর বিক্রয় রেজিস্ট্রার যাচাই করে মেহেদী হাসানের দাখিল করা স্ট্যাম্পগুলোর অস্তিত্ব পায়নি দুদক।
দুদকের অনুসন্ধান মতে, মোট ৯১ লাখ ২৪ হাজার ২৫৪ টাকার অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে মেহেদী হাসানের নামে। এরমধ্যে ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ ৩০ হাজার ৮৭০ টাকা। ঋণ ব্যতিত তার অর্জিত সম্পদের নিট মূল্য ৮১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৮৪ টাকা।
এসব হিসেব মতে- মেহেদী হাসান অসৎ উপায়ে আয়বহির্ভূত ৬২ লাখ ৯ হাজার ৩০ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন এবং ভোগ দখল করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন পুলিশ সদস্য মেহেদী হাসান।
দুদকের কাছে দেওয়া মেহেদীর বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি ১৩ লাখ ৭৭ হাজার ৩২৩ টাকা পারিবারিক ব্যয় করেছেন। ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৮৭ টাকা ঋণের সুদ পরিশোধ করেছেন। ফলে ৯৬ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪ টাকার মোট সম্পদ পাওয়া গেছে তার নামে। এরমধ্যে গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমাণ ৩৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬৪ টাকা।
দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, অসংগতিপূর্ণ সম্পদের মালিকানা অর্জনের অপরাধে পুলিশের কনস্টেবল মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় মামলা করা হয়েছে।
নাটোরের পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম বলেন, মেহেদী হাসান নাটোর জেলা পুলিশে কর্মরত আছেন। কনস্টেবল মেহেদীর বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলার ব্যপারে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে কোনো কিছু অবগত করা হয়নি।