২৪ এপ্রিল, ২০২৪

আজ সিরাজগঞ্জের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ দিবস

আজ ২৪ এপ্রিল সিরাজগঞ্জের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে সে সময়ের ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রেল পথে উল্লাপাড়া উপজেলার ঘাটিনা রেল সেতুতে পাক বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় ১ ঘন্টা ব্যাপী সশস্ত্র যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। এতে পাক সেনাসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হন।

এদিন বেলা ৩ টার দিকে ঈশ্বরদী থেকে ট্রেন যোগে পাক সেনারা সিরাজগঞ্জে যাচ্ছিল। পাক সেনাদের এই ট্রেন যাত্রার খবরটি সিরাজগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা আগেই জেনে যায়।

সে সময়ের সিরাজগঞ্জের মহকুমা প্রশাসক এ কে এম শামসুদ্দিন ও ওই সময়ের তুখোর ছাত্র নেতা উল্লাপাড়ার আব্দুল লতিফ মির্জার যৌথ নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা সকাল ১১টার দিকে করতোয়া নদীর উপর ঘাটিনা রেল সেতুর কয়েকটি রেল খুলে নদীতে ফেলে দেন।

এরপর সেতুর পূর্ব প্রান্তে শাহজাহানপুর গ্রামের পাশে নদী পাড়ে বেশ কয়েকটি পরীখা খনন করে সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা পাক বাহিনীকে আক্রমনের প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করেন।

পাক বাহিনী বহন করা ট্রেনটি ঘাটিনা সেতুর পশ্চিম প্রান্তে এসে দাঁড়িয়ে যায়। কয়েকজন পাক সেনা সেতুর উপর রেলপথ ঠিক আছে কিনা দেখতে ট্রেন থেকে নেমে সেতুর উপর ওঠার পর পূর্ব প্রান্তে ওঁৎ পেতে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা পাক বাহিনীকে আক্রমণ করে। পরে প্রায় এক ঘন্টাব্যাপী উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি চলে। এরপর পাকবাহিনী ট্রেন নিয়ে উল্লাপাড়া স্টেশনের দিকে পিছিয়ে যায়।

পরদিন সকালে ব্যাপক সমরসজ্জা নিয়ে আবারও পাক বাহিনী ঘাটিনা রেল সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের উপরে আক্রমন চালায়।

কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি ফুরিয়ে যাওয়ায় এবং পাক বাহিনীর ব্যাপক মর্টার শেলিং এর ফলে তারা তাদের অবস্থান ত্যাগ করে বেলকুচির দিকে পিছিয়ে যায়। এরপর পাক বাহিনী রেল সেতুতে নতুন করে রেল বসিয়ে ট্রেন যোগে সিরাজগঞ্জ চলে যায়।

যাওয়ার সময় উল্লাপাড়া স্টেশন থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পথের দুই পাশের গ্রামগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় তারা। বস্তুতঃ ২৫ এপ্রিল পুরো সিরাজগঞ্জ জেলা পাক বাহিনী তাদের দখলে নিয়ে নেয়।

উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা জানান, এ দিনের এই যুদ্ধ সিরাজগঞ্জের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ হিসাবে স্বীকৃত। প্রতিরোধ যুদ্ধের স্থানটি চিরস্মরণীয় করে রাখতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ঘাটিনা রেল সেতুর পূর্ব পাশে একটি নান্দনিক স্মৃতিসৌধ নির্মান করেছে।

এই সৌধটি দেখতে বর্তমান প্রজন্মের কৌতুহলী ছেলে মেয়েরা এখন প্রতিদিনই এখানে ভিড় জমান।