নওগাঁয় সন্দেহজনক ভাবে আটককৃত মোটরসাইকেল ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নওগাঁর এ,এস,আই রবিন্দ্রনাথ মন্ডলের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে মটরসাইকেল এর প্রকৃত মালিক বুজরু আতিথা গ্রামের আব্দুস সোবহান এর ছেলে সিহাব হোসেন এর নিকট থেকে নগদ ৩০ হাজার টাকা বুঝে নিয়ে মোটরসাইকেলটি ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সিহাবের শালক মো: বাধন হোসেন (২৫) সন্দেহভাজন হিসাবে মামলা দিয়ে বুধবার (১৭ এপ্রিল) জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
জানা যায়, নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর থানার হরষি গ্রামের মৃত আব্দুস সালামের ছেলে মোঃ বাঁধন হোসেন (২৫) তার বোন জামাই সিহাব হোসেন এর মোটরসাইকেল নিয়ে মঙ্গলবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৮ টার দিকে পাশ্ববর্তী বষাইল ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় যায়।
এসময় নওগাঁ সদর মডেল থানার এ,এস,আই রবীন্দ্রনাথ মন্ডল রাতে মোবাইল-২ ডিউটি করাকালীন সময়ে তাকে আটক করে তল্লাসি চালায়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে তল্লাসি করে কোন কিছু না পাওয়া গেলে তাকে মাদক মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। অনেক ভয়ভীতির পরও টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে মোটরসাইকেলসহ বাঁধন হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।
পরে বিষয়টি জানতে পেরে মোটরসাইকেলের প্রকৃত মালিক সিহাব হোসেন হাপানিয়া এলাকার আব্দুল বাকিদ (ফবেল) এর সঙ্গে যোগযোগ করেন এবং মোটরসাইকেল ও বাধনকে ছাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানান। ফলে এ,এস,আই রবীন্দ্রনাথ মন্ডলের সঙ্গে যোগযোগ করলে শুধু মাত্র মোটরসাইকেল ছেড়ে দিতে ৩০ হাজার টাকা দাবী করে। কিছু টাকা কম নেওয়ার জোড়াজুড়ি করলেও এক টাকাও কমাতে পারবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেন এএসআই রবিন্দ্রনাথ।
পরিশেষে মোটরসাইকেল মালিক সিহাব মধ্যস্থতাকারী ফবেলকে সঙ্গে নিয়ে রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে এএসআই রবীন্দ্রনাথের হাতে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে মোটরসাইকেলটি ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
উল্লেখ্য যে এ,এস,আই রবীন্দ্রনাথ মন্ডলের এমন কর্মকান্ড নতুন নয়। যোগদানের পর হতে এরকম একাধিক অনিয়েমর সাথে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। জনশ্রুতি আছে যে ২০০ টাকা হলেও তিনি ঘুষ নেন। গত ৮ মাস পূর্বে উপজেলার ঠাংভাঙ্গা মোড় এলাকা হতে জনসম্মুখে ইয়াবা ও চোরাই মোটরসাইকেল সহ চিহ্নিত এক মাদক ব্যাবসায়ীকে আটক করার পর মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আনুমানিক ৩ মাস পূর্বে তিলকপুর ইউনিয়ন বিটের দ্বায়িত্বে থাকা অবস্থায় টিসিবির পণ্যের চাল ক্রয়ের সময় চাল ব্যাবসায়ীকে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে ৫ শত টাকা নেয়।
তিলকপুর ইউনিয়নে ওয়ারেন্টভূক্ত এক আসামীকে না পাওয়ায় তার গরিব অসহায় প্রতিবন্ধী পিতার নিকট টাকা দাবী করেন। পরে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গকে বিষয়টি জানালে তবেই এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রান পান অসহায় প্রতিবন্ধী বাবা।
তিলকপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা ডিএম তোয়াফ তোতা জানান, আমার এলাকায় এক ছেলে নামে ওয়ারেন্ট হয়। এএসআই রবিন্দ্রনাথ তাকে বাড়িতে না পেয়ে তার প্রতিবন্ধী পিতার নিকট টাকা দাবী করেন। যাদের টাকা দেওয়ার কোন সামর্থ ছিল না । কিন্তু বারবার রবিন্দ্রনাথ টাকার জন্য চাপ দিচ্ছিল। পরে বিষয়টি আমি জানতে পেরে বিভিন্ন ভাবে নিষেধ করার পরে অসহায় প্রতিবন্ধী পিতার পরিত্রান পান।
এবিষয়ে মোটরসাইকেল মালিক সিহাব হোসেন বলেন, আমার শালক না বলে আমার গাড়ি নিয়ে বাইরে গেলে সন্দেহজনক ভাবে পুলিশ তাকে আটক করে। পরে বিষয়টি জানতে পেরে হাপানিয়ার বাজার এলাকার আত্মীয় ফবেলকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেল নিতে গেলে ৩০ হাজার টাকা দাবী করে। আমি পরে কিছু টাকা কম দিতে চেয়েছিলাম। কম নিতে রাজি না হওয়ায় ৩০ হাজার টাকা দিলে মোটকসাইকেল ছেড়ে দেন।
আব্দুল বাকিদ (ফবেল) বলেন, মোটরসাইকেলটি আটকের পরে ছেড়ে দিলেও কোন টাকা লেনদেন হয়নি। তবে এবিষয়ে আপনারা আর ঘাটাঘাটি করেন না সন্ধ্যায় দেখা করে কিছু একটা ব্যাবস্থা করে দিবনি।
এ,এস,আই রবীন্দ্রনাথ মন্ডলের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন,সন্দেহভাজন ভাবে আসামী বাধনকে রাতে ঘোরাফেরা করতে দেখে মোটরসাইকেলসহ আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে মোটরসাইকেলটি আসামীর নয় জানতে পেরে প্রকৃত মালিককে ফেরত দেওয়া হয়েছে। ৩০ হাজার টাকা লেনদেন এর বিষয়টি সত্য নয়।
এ বিষয়ে নওগাঁ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ জাহিদুল হক জানান, এঘটনার বিষয়ে আমার জানা নেই, তবে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ বাবস্থা নেওয়া হবে।