১১ এপ্রিল, ২০২৪

ছেলের শোকে ঈদের দিন বাড়িতে রান্না করেননি মা

একমাসের মতো হলো জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাড়ির বড় ছেলে। বছরের একটি দিনে ছেলের অনুপস্থিতে ঈদের আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছে। ঈদের দিন বাড়িতে রান্না করেননি মা আরিফা বেগম। অঝরো কেঁদেছেন নব্বই উর্ধ্ব দাদি রওশন আরা। নিশ্চুপ ছিলেন বাবা জিয়া উদ্দিনও।

সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে ছিনতাই হওয়া এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের অর্ডিনারি সি-ম্যান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন জয় মাহমুদ। অন্যান্য নাবিক ক্রুদের মতো জয় মাহমুদও দস্যুদের হাতে জিম্মি আছেন। জয়ের বাড়ি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার সালাইনগর গ্রামে। আশে পাশের বাড়িতে ঈদের আনন্দ উৎসব হলেও জয়ের বাড়িতে ঈদের কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিলনা।

জয়ের দাদি রওশন আরা বেগম বলেন, জয় বরাবরই বাড়িতে ঈদ করতো। কোনোবার বাড়িতে ঈদ করতে না পারলে মোবাইল ফোনে বাড়ির সবার সাথে কথা বলতো। আনন্দে মেতে উঠতো সবার সাথে। কিন্তু এবার আর আদরের নাতি জয়ের সাথে ঈদ করতে পারলেন না তারা। নাতিকে অক্ষত অবস্থায় ফেরত পেতে সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন এই বৃদ্ধা।

ঈদের নামাজ আদায়ের পর বাড়ি ফিরে সারা দিনই নিশ্চুপ ছিলেন জয়ের পিতা জিয়া উদ্দিন। তিনি বলেন, বাড়ির বড় ছেলেটি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি রয়েছে। ভাবতেই গায়ে কাটা দিচ্ছে। ছেলে জয় বাড়িতে থাকলে ঈদের দিন খুব আনন্দ করতেন তারা।

তিনি বলেন, তিন দিন আগে জয় জিম্মি দশা থেকেই ফোন করেছিল। কিন্তু বিস্তারিত আলোচনা করা যায়নি। জাহাজ কোম্পানির লোকজনও তাদের পরিবারের কোনো খোঁজ খবর রাখছেন না। ছেলে দ্রুত ফিরিয়ে আনার দাবি তার।

জলদস্যুদের হাতে একমাস ধরে জিম্মি ছেলে জয় মাহমুদের শোকে সকাল থেকেই কান্নায় বুক ভাসাচ্ছেন মা আরিফ বেগম। তিনি বলেন, বুকের ধন জিম্মি থাকায় তিনি ঈদের দিন রান্নাও করতে পারেননি। ছেলেটি এখনো জীবিত আছেন এই বেভে কিছুটা শান্তনা খোঁজার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হচ্ছেন। মায়ের মন ছেলে ছাড়া ভালো থাকে না। ছেলেকে দ্রুতে তার বুকে ফিরিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তিনি।

জয়ের চাচাতো ভাই মারুফ আলী বলেন, জয় মাহমুদ তার ফোনে ফোন করেছিলেন তিন চার দিন আগে। শুধু বলেছেন অপহৃত ২২ জনই সুস্থ ও জীবিত আছেন।

বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহায়মেনা শারমিন ইত্তেফাককে জানান, উপজেলা প্রশাসন পক্ষ থেকে জিম্মি জয় মাহমুদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো হয়েছে। সরকারিভাবে সহযোগিতা দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন কাজ করছে।