আলোচিত খায়রুল (৩৭) হত্যা মামলায় ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর মৃত্যুদন্ডের রায় ঘিরে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নাটোরের লালপুরে বাড়িতে হামলা চালিয়ে খায়রুলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।
১০ বছর পর রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মহিদুজ্জামান মঙ্গলবার সেই মামলার রায় ঘোষণা করেন। নিহত খাইরুল লালপুর উপজেলার কদমচিলান ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আসলাম সরকার বলেন, খাইরুলের ভাই শাহীনুর রহমান দায়ের করা মামলায় মোট ৬৭জনকে আসামি করা হয়েছিল। এরমধ্যে ৩ আসামি মারা গেছেন। বিদেশে পালিয়ে গেছেন একজন। এসব আসামিদের মধ্যে ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। এই মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে ৫৪জনকে। তবে রায় ঘোষনার সময় খালাস পাওয়াদের মধ্যে ১৩জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সাথে পলাতক আসামিদের জামিনদারদের কাছ থেকে জামানতের অর্থ আদায়ের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ৫১৪ ধরার কার্যক্রম শুরুর আদেশও দেওয়া হয়েছে।
আলোচিত এই হত্যাকান্ডের রায় ঘোষণার সময় নিহত খাইরুলের স্ত্রী লিপি খাতুন ও তার দুই ছেলেমেয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে খাইরুলের ছেলে জুবায়ের হোসেন বলেন, রায়ে আসামিদের মধ্যে কাউকেই সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়নি। একারণে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
আদালত সূত্রে জানাগেছে, দন্ডপ্রাপ্ত ১৩ আসামিই নাটোরের লালপুর উপজেলার বাসিন্দা। তারা হলেন- লালপুরের পুকুরপাড়া চিলান গ্রামের করিম, মতি সরদার, মকলেছ সরদার, মহসিন, খলিল, রানা, আনিসুর, রাজ্জাক, জার্জিস, সানা, কদমচিলান গ্রামের আবুল কালাম আজাদ, কালাম ও মিজানুর রহমান।
পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে- নিহত খায়রুল ইসলাম পেশায় নিরাপত্তাপ্রহরী ছিলেন। স্ত্রী ছেলে ও মেয়ে নিয়ে তাদের চারজনের সংসার ছিল। তিনি খুন হওয়ার সময় ২০১৩ সালে তার ছেলে জুবায়ের সপ্তম শ্রেণিতে ও মেয়ে খাদিজাতুল কুবরা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তেন। খাইরুলের ছেলে জুবায়ের বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষে এবং মেয়ে খাদিজাতুল কুবরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করছেন।
খায়রুল হত্যার ঘটনায় তার ভাই শাহীনুর রহমান লালপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। তিনি মামলায় উল্লেখ করেন, খায়রুল দুপুরে খাওয়ার পর বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘটনার দিন চিৎকরের শব্দ পেয়ে ঘর থেকে বের হন খায়রুল। এসময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই খাইরুলকে রামদা ও চায়নিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। খাইরুলকে বাঁচাতে এগিয়ে এসে হামলার শিকার হন চাচা মজনু ও জলিল।
খোঁজনিয়ে জানাগেছে, মামলা রুজুর একবছরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেননি পুলিশ। প্রায় দেড় বছরের মাথায় পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। সেসময় ৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহনের পর ২০১৭ সালে আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে রিট করেন। ফলে মামলাটি স্থগিত হয়ে যায়।
খায়রুলের স্ত্রী লিপি খাতুন বলেন, ২০১৮ সালে নির্বাচনের পর মামলার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলামের মাধ্যমে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তারা। কিন্তু সেসময় মামলার নথি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে অনেক চেষ্টা করে দুই বছর পর নথি উদ্ধার হয়।
খায়রুলের ছেলে জুবায়ের বলেন, উচ্চ আদালত মামলাটির স্থিতাবস্থা তুলে নেয়। পরে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি আবার চালু হয়। এরপর থেকেই আসামিপক্ষ মীমাংসার জন্য নানাভাবে চাপ দিয়েছেন। মামলার বাদী তার চাচা শাহিনুরকে বেশ কয়েকবার হত্যাচেষ্টা করে। একারণে বাড়ি ছেড়ে তার চাচা অন্যত্র অবস্থান করছে। এখানো তাদের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে আসামি পক্ষের লোকজন। একারণে তারা পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।